বিষয় :
নজরুল
সঙ্গীত।
গান সংখ্যা : ১৫২৬.
শিরোনাম
: পরজনমে যদি আসি এ
ধরায়।
পাঠ ও পাঠভেদ:
১৫২৬.
রাগ : পরজ, তাল : ত্রিতাল
পরজনমে যদি আসি এ ধরায়।
ক্ষণিক বসন্ত যেন না ফুরায়॥
মিলনে নাহি যেন রহে অবসাদ
ক্ষয় নাহি হয় যেন চৈতালি-চাঁদ,
কণ্ঠ-লগ্ন মোর প্রিয়ার বাহু
খুলিয়া না পড়ে যেন, নিশি না পোহায়॥
বাসি নাহি হয় যেন রাতের মালা,
ভরা থাকে যৌবন রস-পেয়ালা।
জীবনে না রহে যেন মরণ-স্মৃতি
পুরাতন নাহি হয় প্রেম-প্রীতি,
রবে অভিমান রহিবে না বিরহ,
ফিরে যেন আসে প্রিয়া মাগিয়া বিদায়॥
ভাবসন্ধান: 'যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম' গীতি-আলেখ্যের জন্য রচিত এই গানটিতে পরজ রাগের রূপ বর্ণনা করা হয়েছে রূপকতার আশ্রয়ে। এটি রাত্রি তৃতীয় ও চতুর্থ প্রহরের সন্ধিরাগ। পরজ বসন্তকালীন রাগ। অনন্ত যৌবনবসন্তের সম্ভোগ-আনন্দকে ধারণ করার কামনাকে ব্যক্ত করেছেন, পরজের মধুর সুর-সৌরভে। গানের স্থায়ীতে এই আশাই ফুটে উঠেছে। কবি কামনা করেন, - যদি কখনও তিনি আবার পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন, তখন যেন এই ক্ষণিক যৌবন-বসন্ত না ফুরায়। যেন মিলনে অবসাদ না আসে, যেন চৈতালি চাঁদের পূর্ণতা হ্রাস না পায়। এবং রাত্রি যেন পোহায়, কণ্ঠলগ্না প্রেয়সীর বাহুবন্ধন শিথিল না হয়। কামনামদির নিশিপুষ্প যেন বাসি হয়, যেন পূর্ণ থাকে যৌবনের রস-পাত্র। আগের জনমের মরণস্মৃতি যেন তাঁকে কাতর না করে, যেন প্রেম-সৌরভ চিরনূতন থাকে। যেন অভিমান করে প্রিয়ার দূরে চলে যাওয়ার বিরহ-বেদনা না থাকে, কখনও যদি প্রেয়সী দূরে চলেও যায়, যেন সে আবার ফিরে আসে।
ক. রচনার প্রেক্ষাপট, কাল ও স্থান:
রচনার প্রেক্ষাপট:
ভারতীয় রাগ সঙ্গীতের নানা দিক নিয়ে নজরুল
ইসলাম নানা রকমের গবেষণা করেছিলেন। 'যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম' হলো তার একটি।
ভারতীয় রাগ-সঙ্গীত শাস্ত্রে রাগ-পরিবেশনায় দিনের বিভিন্ন সময় এবং ঋতু
বৈচিত্র্যের প্রভাব রয়েছে। দিনের বিচারে ভারতীয় সঙ্গীতঋষিরা দিবারাত্রির
বিভাজিত অংশ হিসেবে প্রহর বা যাম নামক এককটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এই
গবেষণার সূত্রে তিনি রচনা করেছিলেন 'যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম নামক একটি গীতি
আলেখ্য। এটি কলকাতা বেতারে প্রচারিত হয়েছিল ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে জুন।
এই গীতি আলেখ্যের প্রথম
৮টি রাগাশ্রয়ী গানের অষ্টম বা শেষ গানটি হলো
'পরজনমে যদি আসি এ ধরায়'।
এই
গানের শুরুতে যাম যোজনায় পরজ রাগের রূপ বর্ণনা করা হয়েছে। নিচে নজরুলের
পাণ্ডুলিপি থেকে এই বিষয়ক পাঠ তুলে ধরা হলো।
বেহাগের পর নিশীথের তৃতীয় প্রহরে কড়ি মধ্যম ধ'রে আনে চঞ্চল 'পরজ'কে। এঁর মান অত্যন্ত প্রবল ─ অর্থাৎ কড়ি মধ্যম ও নিখাদে এঁর অত্যন্ত প্রীতি। এর তীব্র নিখাদ ও মধ্যম ঘুমন্তের ঘুম ভেঙে দেয়। এর বিরহ যেন বিলাস। বসন্তের সাথে এর অত্যন্ত প্রীতি।
রচনাকাল ও স্থান:
'যাম-যোজনায়
কড়ি মধ্যম' নামক গীতি-আলেখ্যটি কলকাতা বেতারে প্রচারিত হয়েছিল ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে জুন।
ধারণা করা হয়, এই গীতি-আলেখ্য উপলক্ষেই গানটি রচিত হয়েছিল। এই
ধারণা থেকে অনুমান করা যায়, গানটি রচনার সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৪১
বৎসর।
খ. প্রকাশ ও গ্রন্থভুক্তি:
বেতার:
১. সঙ্গীতানুষ্ঠান -
বাসন্তীকুঞ্জ। প্রচার তারিখ - ২৭ এপ্রিল, ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ।
পরজ─ত্রিতাল।
সুর - নজরুল ইসলাম।
১. গীতি-আলেখ্য -
যাম
যোজনায় কড়ি মধ্যম। প্রচার তারিখ - ২২ জুন, ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ।
পরজ─ত্রিতাল।
১. গীতিচিত্র -
প্রহর
পরিচায়িকা। তারিখ - ১১ ডিসেম্বর, ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ।
১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে H.M.V. রেকর্ড কোম্পানি গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশ করে। রেকর্ড নং- N. 27787.। শিল্পী ছিলেন দ্বিজেন চৌধুরী। সুর করেছিলেন শৈলেশ দত্তগুপ্ত। মিশ্র বাগেশ্রী খাম্বাজ─কাহারবা।
গ. সঙ্গীত বিষয়ক তথ্যাবলী: