বিষয়:
নজরুল
সঙ্গীত।
গান সংখ্যা : ১৫৮৬.
শিরোনাম
:
বিরহী বেণুকা যেন বাজে সখি ছায়ানটে।
পাঠ ও পাঠভেদ:
১৫৮৬.
রাগ: ছায়ানট, তাল: ত্রিতাল
বিরহী বেণুকা যেন বাজে সখি ছায়ানটে।
উথলি' উঠিল বারি শীর্ণা যমুনাতটে॥
নীরব কুঞ্জে কুহু
গেয়ে ওঠে মুহু মুহু,
আঁধার মধু বনে বকুল চম্পা ফোটে॥
সহসা সরস হল বিরস বৃন্দাবন,
চন্দ্রা যামিনী হাসে খুলি মেঘ-গুণ্ঠন।
সে এলো, তারে নিরখি'
পরান কি রবে সখি,
আবেশে অঙ্গ মম থরথর কেঁপে ওঠে॥
ভাবসন্ধান: 'যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম' গীতি-আলেখ্যের জন্য রচিত এই গানটিতে ছায়ানট রাগের রূপ বর্ণনা করা হয়েছে রূপকতার আশ্রয়ে। এটি রাত্র প্রথম প্রহরের রাগ। 'যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম' গীতি-আলেখ্যে, ছায়ানটে রাগকে উপস্থাপন করার জন্য এই গানটি লেখা হয়েছিল। গানটির শুরুতেও, কাজী নজরুল ইসলাম ছায়ানট রাগের সুরাবেশের বিষয় এনে সখিকে বলা হচ্ছে- হে সখি, বেদনাবিধুর বাঁশি কেন ছায়ানট রাগে বাজে। এই রাগের প্রভাবে শীর্ণা যমুনার জল উদ্বেলিত হয়ে উঠে। কবিকল্পনায় কল্পনাতে কবি অনুভব করেন নীরবকুঞ্জে কোকিলে কুহুকুহু রব, অন্ধকার মধুবনে বকুল-চম্পার প্রস্ফুটন। ছায়ানটের আনন্দ-আবেশে কবি অনুভব করেন, অনবগুণ্ঠিতা সহাস্য চন্দ্রশোভিত রাত্রির শোভা। এমনই রভসরসরাত্রিতে যদি প্রেয়সীর আবির্ভাব হয়, যখন সমগ্র চিত্ত কামনা-বিহ্বলতায় কম্পিত হয় হঠাৎ-পাওয়া সৌন্দর্য-সুখে তখন কি মনকে স্থির রাখা যায়।
তথ্যানুসন্ধান:
ক. রচনার প্রেক্ষাপট, কাল ও স্থান:
রচনার প্রেক্ষাপট:
ভারতীয় রাগ সঙ্গীতের নানা দিক নিয়ে নজরুল
ইসলাম নানা রকমের গবেষণা করেছিলেন। 'যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম' হলো তার একটি।
ভারতীয় রাগ-সঙ্গীত শাস্ত্রে রাগ-পরিবেশনায় দিনের বিভিন্ন সময় এবং ঋতু
বৈচিত্র্যের প্রভাব রয়েছে। দিনের বিচারে ভারতীয় সঙ্গীতঋষিরা দিবারাত্রির
বিভাজিত অংশ হিসেবে প্রহর বা যাম নামক এককটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এই
গবেষণার সূত্রে তিনি রচনা করেছিলেন 'যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম নামক একটি গীতি
আলেখ্য। এটি কলকাতা বেতারে প্রচারিত হয়েছিল ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে জুন।
এই গীতি আলেখ্যের প্রথম
৮টি রাগাশ্রয়ী গানের ষষ্ঠ গানটিই ছিল
'বিরহী বেণুকা যেন বাজে সখি ছায়ানটে।
এই
গানের শুরুতে যাম যোজনায় ছায়ানট রাগের রূপ বর্ণনা করা হয়েছে। নিচে নজরুলের
পাণ্ডুলিপি থেকে এই বিষয়ক পাঠ তুলে ধরা হলো।
পূরবী পুরিয়া প্রভৃতি রাগের কান্নার পর, রাত্রি যেমন ঘনিয়ে এল
অমনি চাঁদের চাঁদ-মুখ দেখে রাতের চোখে ফু'টে উঠ্ল হাসি।
তীব্র মধ্যম নিয়ে এল চঞ্চল ছায়ানটকে ধ'রে। নটের মত
এর আঁকা-বাঁকা গতি, মধুর অঙ্গ-ভঙ্গী কী অপরূপ
তার আভাস পাবেন এই সুরের গানে।
রচনাকাল ও স্থান:
'যাম-যোজনায়
কড়ি মধ্যম' নামক গীতি-আলেখ্যটি কলকাতা বেতারে প্রচারিত হয়েছিল ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে জুন।
ধারণা করা হয়, এই গীতি-আলেখ্য উপলক্ষেই গানটি রচিত হয়েছিল। এই
ধারণা থেকে অনুমান করা যায়, গানটি রচনার সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৪১
বৎসর।
খ. প্রকাশ ও গ্রন্থভুক্তি:
১. গীতি-আলেখ্য:
যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম।
তারিখ: ২২ জুন, ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ।
রাগ: ছায়ানট। তাল: ত্রিতাল। সুর: নজরুল ইসলাম।
২. গীতিচিত্র: প্রহর
পরিচায়িকা।
তারিখ: ১১ অক্টোবর, ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ।
গ. সঙ্গীত বিষয়ক তথ্যাবলী: স্বরলিপি পাওয়া যায় নি।