সোদিলো (ৎসোদিলো)
Tsodilo
আফ্রিকা
মহাদেশের দক্ষিণাংশে অবস্থিত
বোৎসোয়ানা
নামক রাষ্ট্রের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ওকাভাঙ্গো জেলার একটি
পার্বত্য প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চল। স্থানীয় সোদিলো পর্বতের নামানুসারে এই অঞ্চল চিহ্নিত হয়ে
থাকে। প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটারের ছোট আকারের এই অঞ্চলে পাওয়া গেছে প্রায় ৪৫০০ এর বেশি প্রস্তরচিত্র। এই কারণে
অনেকে প্যারিসের ল্যুভর যাদুঘরের সাথে তুলনা করে বলে থাকেন মরুভূমির ল্যুভর
('Louvre of the Desert'')
।
ধারণা করা হয়, প্রায় ১ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে এই অঞ্চলে আধুনিক মানব তথা
হোমো স্যাপিয়েন্সদেরএকটি দল এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল।
সোদিলো পার্বত্য অঞ্চল ছোটো বড় অনেক বড় বড় পাহাড় রয়েছে। এর ভিতরে
সবচেয়ে উচ্চতর পাহাড়কে বলা হয় পুরুষ পাহাড়। এর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৪০০
মিটার। এর চেয়ে ছোটো পাহাড়ের নাম নারী পাহাড় এবং এর চেয়ে ছোটো পাহাড়ের নাম
শিশু পাহাড়। এর চেয়ে ছোটো পাহাড়ের জন্য এরূপ কোনো নামকরণ করা হয় নি।
প্রায় ১ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে এই অঞ্চলে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়েছিল।
সম্ভবত এরা ছিল আফ্রিকার কালাহার মরুভূমির 'সান' নামক বুশম্যানদের পূর্বপুরুষ। এরা
এই সকল পাহাড়ের গুহায় বা বড় বড় পাথরের ফাঁক-ফোকরে বাস করতো। এদের দ্বারাই এই
অঞ্চলের আদিম প্রস্তর চিত্রের সূচনা হয়েছিল।
গুহাচিত্র
নারী পাহাড়ের উত্তর দিকের শেষ প্রান্তে
বড় বড় দুটি পাথরের দেয়াল রয়েছে। এর মূল দেয়ালে রয়েছে শ্বেত-গণ্ডার গুহা। এই দেয়ালের
বিভাজিত বর্ধিত অংশের নাম দেওয়া হয়েছে লোহিত জিরাফ দেয়াল বা গুহা। উভয় গুহার মেঝে
খনন করে পাওয়া গেছে বহু উট পাখির ডিমের খোলস, অস্থি চিত্র, হাঁড়ি-পাতিল ও লৌহ
নির্মিত সামগ্রী। এছাড়া
পাওয়া
গেছে মঙ্গোঙ্গো নামক বৃক্ষের শক্ত ফলের খোসা। এখানে পাওয়া গেছে প্রচুর কয়লার নমুনা।
এই গুহাগুলোর আদিম ছবি এঁকেছিল বুশম্যান সান বা এদের পূর্বপুরুষরা। এ সব ছবির
অঙ্কনকাল ছিল ৩০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। এই সময় এরা মোঙ্গোঙ্গো ফলের শক্ত খোসাতেও
ছবি এঁকেছে।
আফ্রিকার মধ্য প্রস্তর যুগ এবং পরবর্তী শেষ প্রস্তর যুগে এই অঞ্চলের মানুষ লোহার
ব্যবহার শিখেছিল। এই অঞ্চলের শিল্পীরা এই সময় বেশিরভাগ শিল্পকর্ম করেছিল স্থানীয়ভাবে
পাওয়া স্ফটিক এবং জেস্পার। এই সময়ে এই অঞ্চলের মানুষ ধাতব অলঙ্কার এবং যন্ত্রপাতি
ব্যবহার করতো। এক্ষেত্রে এরা ব্যবহার করেছে লোহা এবং তামা। অলঙ্কার হিসেবে পাওয়া
গেছে বালা, শিকল, কর্ণালঙ্কার, আংটি ইত্যাদি। এরা তীর বা বর্ষার মাথায় ধাতব ফলা
ব্যবহার করতো। এছাড়া তরবারির মতো অস্ত্র তৈরি করতে শিখেছিল।
গণ্ডার গুহায় প্রাপ্ত অধিকাংশ চিত্রকর্মে ব্যবহার করেছিল লাল এবং লাল-কমলা জাতীয় রঙ।
কিন্তু গণ্ডারের ছবি এঁকেছিল সাদা রঙ দিয়ে। এই বিশেষত্বের জন্য এই গুহার নামকরণ করা
হয়েছিল গণ্ডার গুহা। তবে এদের আকার ছিল অনেকটা গভীর মতো।
লাল
রঙে আঁকা ছবিগুলো আঁকা হয়েছিল সম্ভবত ২৪ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে। এই ছবিগুলো
এঁকেছিল বুশম্যান সান বা এদের পূর্বপুরুষরা। সম্ভবত সাদা রঙের এই ছবিগুলো এঁকেছিল
পরবর্তী সময় আগত বান্টু ভাষাভাষী মানুষ। এরূপ বহু চিত্র পাওয়া গেছে পুরুষ
পাহাড়ে। এর পাশাপাশি রয়েছে লাল রঙের বিভিন্ন প্রাণীর চিত্র এবং মনুষ্য আকারের চিত্র।
এখানে পাওয়া গেছে মধ্য ও শেষ প্রস্তর যুগে অঙ্কিত উটপাখির ডিমের খোলসে আঁকা ছবি।
সূত্র: