ছবি : জ্যোতি চাকমার সৌজন্যে

আলাম
 

এটি একটি চাকমা শব্দ। কাপড়ে নকশা ফুটিয়ে তোলার জন্য বিভিন্ন ফুলের নকশা দ্বারা সৃষ্ট বস্ত্রখণ্ড বিশেষ। চাকমা মেয়েরা আলামের অঙ্কিত ফুল ও নকশা দেখে তাদের বয়নকৃত কাপড়ে নকশা ফুটিয়ে তোলে। আলাম অপেক্ষাকৃত মোটা কাপড়ে মোটা সুতায় বয়ন করা হয়। এরা আকার বিভিন্ন রকমের হলেও, এগুলোর দৈর্ঘ্য প্রস্থের চেয়ে বড় হয়। এতে যথাসম্ভব বেশি ফুলের নকশা দ্বারা তৈরি করা হয়। আলামে যে সকল ফুল বিশেষভাবে নমুনা হিসাবে অঙ্কিত থাকে, সেগুলো হলো বেগুনবিজি ফুল, চরকা-আদা ফুল, সামুলেজ ফুল, বিলেইখুজ ফুল, উলুফুল ইত্যাদি। আলাম-এর নকশা অনুসারে মূলত পিননের চাবোগি, খাদিতে নকশা তোলা হয়। চাকমা পরিবারে যখন কোনো কন্যা কৈশোর ছেড়ে তরুণী হয়ে উঠে, তখন কন্যার মা বা বয়ঃজেষ্ঠ্যরা ওই কন্যাকে আলাম থেকে কোনো পোশাকে নকশা তোলার শিক্ষা দেয়। এই শিক্ষা শেষে যে কন্যা সবচেয়ে কৃতিত্ব অর্জন করে, তাকে চাকমা সমাজে বিশেষভাবে সম্মানিতা করা হয়। বিবাহযোগ্যা কন্যার জন্য আলামের সকল ফুল তুলতে পারাকে, চাকমা সমাজে বিবাহের সবচেয়ে উপযুক্তা পাত্রী হিসাবে বিবেচনা করা। উল্লেখ্য প্রতিটি চাকমা কন্যা তাঁর তৈরিকৃত আলামের ভিতর থেকে একটি শ্রেষ্ট আলামকে সারা জীবনের জন্য সংরক্ষণ করে রাখে। এই কারণে চাকমা মেয়েদের কাছে আলাম একটি একটি মর্যাদাপূর্ণ সম্পদ হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে।


আলাম
চাকম সংস্কৃতি একটি ঐতিহ্যগত উপকরণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। চাকমা লোকসাহিত্য রাধামন ধনপতির পালাগানে আলামের উল্লেখ পাওয়া যায়। ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে চাকমা রাণী দয়াময়ী রায়, কলকাতায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে আলাম নকশা প্রদর্শন করেন। এই সময় রাণী এই প্রদর্শনীর জন্য পুরস্কৃত হয়েছিলেন।