রাতবংশ
প্রাচীন পূর্ববঙ্গের প্রাচীন জনপদ সমতট-এর রাজ বংশ বিশেষ। এই রাজবংশ সম্পর্কে জানা যায় শ্রীধারণ রাতের কৈলান তাম্রশাসন থেকে। উল্লেখ্য, ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে কুমিল্লার প্রায় ২৭ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত কৈলান (বা কৈলাইন) নামক এক গ্রামে এই তাম্রশাসনটি আবিষ্কৃত হয়।

কৈলান তাম্রশাসনটিতে প্রাচীন সমতট সম্পর্কে নানা রকম তথ্য পাওয়া গেলেও, রাত বংশের শাসকদের বংশীয় পরিচয় বা তাদের শাসন সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না।

রাত বংশের দ্বিতীয় শাসক শ্রীধারণ রাত তাঁর রাজত্বের ৮ম বর্ষে রাজধানী দেবপর্বত থেকে এই তাম্রশাসন প্রকাশ করেছিলেন। এই তাম্রশাসন থেকে জানা যায় যে, রাজা দাতব্যকাজে ২৫ পাটক ভূমি দান করেছিলেন। এর ভিতরে ৪১/২ পাটক বৌদ্ধ সঙ্ঘ, ১৩ পাটক ব্রাহ্মণ-দের দিয়েছিলেন। অবশিষ্ট ১/২ পাটক সাময়িকভাবে থেকে যায় রাজার মন্ত্রীদের কাছে রক্ষিত ছিল।

এই তাম্রশাসনে উল্লেখিত ভূমি দান করা হয়েছিল গুপ্তিনাটন এবং পটল্যি অঞ্চলে। তবে দুটি অঞ্চলের অবস্থান সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় নি। এই ভূমিদানের বর্ণনা থেকে কতগুলি বিশেষ বিশেষ জায়গার নাম ও আঞ্চলিক শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়, যেমন দশগ্রাম, অড়বগঙ্গ নদী, বিল্ল (বিল), নৌদণ্ড (নৌদর), নৌশিবভোগ ইত্যাদি। উল্লিখিত নামগুলোর ভিতরে বিশেষ কিছু নাম দেখে মনে হয়, যেখানকার অধিবাসীদের জীবনে পানি আর নৌকার ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

লেখটিতে এই রাজবংশের শাসক ও রাজপরিবারের যে পরিচয় পাওয়া যায়, তা হলো-

শ্রীজীবনধারণ রাত: রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি একজন খড়গ রাজবংশের শাসনামলে সামন্ত অধিপতিরূপে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। খড়্‌গ রাজ্যের অপর শক্তিশালী সামন্ত লোকনাথের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিলেন। সম্ভবত এই বিবাদে জয়ী হন এবং ক্রমে ক্রমে শক্তিশালী হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল বন্ধুদেবী। এঁদের দুই পুত্রের নাম পাওয়া যায়। এঁরা হলেন শ্রীধারণ রাত ও বলধারণ রাত।

শ্রীধারণ রাত:
রাত বংশের দ্বিতীয় রাজা। তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া রাজত্বকে শক্তিশালী করেন এবং সমতটের শক্তিশালী রাজা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

এই তাম্রশাসন থেকে জানা যায়, রাজ্যের  রাজধানী ছিল ক্ষীরোদা নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত। এই নদীতে ‘হাতিরা জলকেলি করতো এবং নদীর উভয়তীরে ছিল সারিবদ্ধ নৌকার ভিড়। রাজধানী শহরের কেন্দ্রে ছিল পর্বতদুর্গ এবং এই দুর্গের ভিতরে ছিল প্রাসাদ। এর ছিল চারটি প্রধান প্রবেশ পথ। এই কারণে একে বলা হয়েছে ‘সর্বতোভদ্রক’।


সূত্র: