খিজিরপুর দুর্গ/হাজীগঞ্জ দুর্গ
নারায়ণগঞ্জ শহরের হাজীগঞ্জ এলাকায় শীতলক্ষ্যার পশ্চিম তীরে অবস্থিত একটি দুর্গ। এটি খিজিরপুর দুর্গ নামেও পরিচিত।

মোগল আমলে দুর্গটি শীতলক্ষ্যার সঙ্গে পুরাতন বুড়িগঙ্গার সঙ্গমস্থলে নির্মিত হয়েছিল। ধারণা করা হয়, ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে মোগল সুবাদার
ইসলাম খান ঢাকায় রাজধানী স্থাপনের কিছু পরে এই দুর্গ নির্মিত হয়েছিল। উল্লেখ্য, সে সময়ে নদীপথে মগ ও পর্তুগীজ জলদস্যুরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে লুটতরাজ চালাতো। এদের  আক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে দুর্গটি নির্মিত হয়েছিল। বর্তমানে এই দুর্গ এলাকা নারায়ণগঞ্জ সদরে অবস্থিত।

দুর্গটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫০ মিটার, প্রস্থ ২০০ মিটার। দুর্গটি চতুর্ভুজাকার। দুর্গ ঘিরে ছিল পঞ্চভুজি বেষ্টনী প্রাচীর। প্রাচীরের গায়ে বড় গর্ত দেখা যায়। সম্ভবত এই গর্ত ব্যবহৃত হতো- বন্দুকের নল ঢুকিয়ে গুলি চালানোর জন্য। এর চারকোণে রয়েছে গোলাকার বুরুজ। প্রাচীরের চারদিকে অভ্যন্তরভাগে রয়েছে দেয়ালের ভিত থেকে ১.২২ মিটার উঁচুতে চলাচলের পথ। চারকোণের প্রতিটি বুরুজের অভ্যন্তরভাগে দুর্গ প্রাচীরের শীর্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত সিঁড়ি দেখা যায়। এখানে রয়েছে বন্দুকের গুলি চালাবার উপযোগী ফোকর। দুর্গের চতুর্ভুজাকৃতির অঙ্গনের এক কোণে রয়েছে ইটের তৈরি একটি সুউচ্চ চৌকা স্তম্ভ। ধারণা করা হয়, দূর থেকে শত্রুকে দেখার জন্য এই স্তম্ভ ব্যবহার করা হতো।

এই দুর্গের ভিতরে রয়েছে কামান বসানোর উপযোগী উঁচু বেদী। এর প্রবেশ পথ ছিল নদীর দিকে উত্তর দেয়ালে। ফটকটির আয়াতাকার কাঠামোতে রয়েছে পঞ্চভূজি প্রবেশপথ। প্রবেশপথের দু’পাশে রয়েছে খোদাই করা আয়তাকার খিলান এবং এর শীর্ষভাগ পদ্মফুলের অলঙ্করণ শোভিত। দুর্গের অভ্যন্তরে অপর কোনো নির্মাণ কাঠামো নেই। মূলত দুর্গটিকে বর্ষাকালে জলদস্যুদের আক্রমণের সম্ভাবনা দেখা দিলে সৈন্য মোতায়েন করা হতো। কোনো আবাসিক গৃহ না থাকায়, ধারণা করা হয়, সৈন্যরা তাঁবুতে আশ্রয় নিত। বর্তমানে এই দুর্গ এলাকার ব্যাপক অংশ জুড়ে এখন রয়েছে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার ব্রিগেড সদর দফতর।