জাতীয় স্মৃতিসৌধ
উর্ধ্বক্রমবাচকতা {| নির্মাণ-কাঠামো | মানবসৃষ্টি | সমগ্র | দৈহিক লক্ষ্যবস্তু | দৈহিক সত্তা | সত্তা |}

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ৩৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত সাভার উপজেলায়, ৪৪ একর জায়গার উপরে নির্মিত স্মৃতিসৌধটি 'জাতীয় স্মৃতিসৌধ' নামে অভিহিত হয়ে থাকে। বিভিন্ন জাতীয় আন্দোলনে শহিদদের স্মরণে এই স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছে।

এর প্রাথমিক পর্যায় শুরু হয়েছিল ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে। এই পর্যায়ে ২৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই স্মৃতিসৌধের জন্য জমি অধিগ্রহণ ও রাস্তা তৈরি করা হয়। ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এর আনুসঙ্গিক অন্যান্য কার্যক্রম শেষ করা হয়। এই পর্যায়ে ব্যয় হয় প্রায় ৮ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা। এরপর মূল স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য, ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে বিভিন্ন স্থপতিদের কাছে নকশা আহ্বান করা হয়। মোট ৫৭টি নকশার ভিতরে স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন-এর নকশাটি মনোনীত হয়।  ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। এই পর্যায়ে ব্যয় হয় ৮৪৮.৬৫ লক্ষ টাকা।

সমগ্র স্মৃতি সৌধটি ৩৪ হেক্টর (৮৪ একর) জায়গার উপর স্থাপিত হয়েছে। আর এর বাইরে রয়েছে ১০ হেক্টর (২৪.৭ একর) জায়গা জুড়ে সবুজ ভূমি। স্মৃতি সৌধের অবকাঠামো ও পেভমেন্ট তৈরি করা হয়েছে মজবুত লাল ইট দিয়ে।  মূল সৌধস্তম্ভটি ছোটো থেকে বড় আকারে সাতটি ত্রিভূজাকৃতির কংক্রিটের দেয়াল দিয়ে তৈরি। এর ভিতরে সবচেয়ে বড় দেওয়ালটির উচ্চতা ১৫০ ফুট।

১. ভাষা আন্দোলন, ১৯৫২
২.যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৪
৩. শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ১৯৫৬
৪. শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬২
৫. ছয়দফা আন্দোলন, ১৯৬৬
৬. গণ অভ্যুত্থান, ১৯৬৯
৭. স্বাধীনতা সংগ্রাম, ১৯৭১

এই মূলস্তম্ভের সামনে রয়েছে একটি কৃত্রিম জলাশয়। এই জলাশয়ের দুই পাশে আছে বাগান এবং গণকবর। উল্লেখ্য ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তনি সৈন্যরা সাভার অঞ্চলের বহু মানুষকে হত্যা করে নিচু জমিতে বা খাল কেটে এই অঞ্চলে পুঁতে রাখে। স্বাধীনতার পরে এই অঞ্চলে বধ্যভূমি ও গণকবর আবিষ্কৃত হয়। এই গণকবরগুলো এই স্মৃতিসৌধের এলাকার মধ্যেই রাখা হয়েছে।

এই স্মৃতিসৌধের উপকরণগুলোকে বিভিন্ন প্রতীকী ভাবনা থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন
১. বাংলাদেশের সাতটি জাতীয় আন্দোলনের সূত্রে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে, তাই এরই প্রতীক হিসাবে সাতটি দেয়াল তৈরি করা হয়েছে।
২. এর চত্বরের লাল ইট, রক্তাক্ত সংগ্রামের প্রতীক।
৩. এর সামনের জলাশয়, অশ্রুর প্রতীক।
৪. এর ভিতরে গণকবর থাকায়, প্রত্যক্ষভাবে শহীদের উপস্থিতিকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
৫. এর সবুজ বেষ্টনী, শ্যামল বাংলার প্রতীক।
৬. স্মৃতিস্তম্ভে পৌঁছার জন্য রাখা হয়েছে উঁচুনিচু পথ। স্বাধীনতার চড়াই উৎরাই পথকে নির্দেশিত করছে।