বাংলাদেশের ভূমির উপাদনগত রূপ
পূর্ব-পাঠ: বাংলাদেশের প্লাবনভূমি

বাংলাদেশের ভূমির উপাদানগত রূপ একরকম নয়। উপাদনের ভিত্তিতে বাংলাদেশের মাটিকে ৭ ভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। এই ভাগগুলো হলো

. মধুপুর অঞ্চল বা লাল মৃত্তিকা অঞ্চলঃ
বৃহত্তর ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলা এবং চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেট জেলার কিছু বিচ্ছিন্ন এলাকা নিয়ে গঠিত। এ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত এলাকার পরিমাণ প্রায় ১০,০০০ বর্গকিলোমিটার। অঞ্চলটি মধুপুর এলাকার লাল ল্যাটারাইটীয় মৃত্তিকা। এই অঞ্চলটি প্লাবন তলের উপরে অবস্থিত উঁচুভূমি। স্থানীয়ভঅবে ‘বাইদ’ নামে পরিচিত অসংখ্য ছোট ও বড় আকারের খাদ দ্বারা বিভক্ত। এই শ্রেণির মৃত্তিকাতে অধিক পরিমাণে আয়রন ও এ্যালুমিনিয়াম আছে। পৃষ্ঠমৃত্তিকার পি.এইচ মানের পরিসর ৫.৫ থেকে ৬.০। ধনাত্মক আয়রন বিনিময় ক্ষমতা কম এবং মৃত্তিকা অধিক পরিমাণে ফসফেট বন্ধনে সক্ষম। মৃত্তিকাগুলোতে জৈব পদার্থ, নাইট্রোজেন, ফসফেট ও ক্যালসিয়ামের অভাব রয়েছে।

বরেন্দ্র অঞ্চল:
বৃহত্তর রাজশাহী, দিনাজপুর ও বগুড়া জেলার প্রায় ১৩,০০০ বর্গকিমি নিয়ে এলাকা অবস্থিত। এ অঞ্চলটি একটি পুরাতন পাললিক স্তরসমষ্টিতে অন্তর্ভুক্ত। ফ্যাকাশে লালচে বাদামি রঙের সংহত মৃণ্ময়
(agrillaceous) স্তর দিয়ে গঠিত। প্রায়ই অবক্ষয়ের ফলে এগুলো হলুদাভ রঙে পরিণত হয়ে থাকে। সমগ্র মৃত্তিকা জুড়ে চুনের গুটি এবং কূমাণ্ডক (pisolitic) লৌহময় অনুস্তরণজাত পিণ্ড দেখা যায়। স্থানীয়ভাবে মৃত্তিকা চুনসমৃদ্ধ। মৃত্তিকার পি.এইচ পরিসর ৬.০ থেকে ৭.৫ এর মধ্যে। মৃত্তিকাতে নাইট্রোজেন ও ফসফরাসের অভাব রয়েছে।

তিস্তা পলি:
বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া ও পাবনা জেলার অংশবিশেষ নিয়ে এ অঞ্চলটি গঠিত। এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত এলাকার পরিমাণ প্রায় ১৬,০০০ বর্গ কিমি। মৃত্তিকার গঠন প্রধানত বেলে দোআঁশ। পৃষ্ঠমৃত্তিকার পি.এইচ মানের পরিসর ৫.৫ থেকে ৬.৫। মৃত্তিকাগুলো সাধারণত উর্বর এবং পটাশ ও ফসফেট সমৃদ্ধ।

বহ্মপুত্র পলল:
বৃহত্তর কুমিল্লা, নোয়াখালী ও পাহাড়ি এলাকা ব্যতীত সিলেট জেলা এবং ময়মনসিংহ, ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলার অংশবিশেষ নিয়ে এই অঞ্চল গঠিত। এর আওতাধীন এলাকার আয়তন ৪০,০০০ বর্গ কিমি। এই অঞ্চলের মাটি বেলে দোআঁশ সমৃদ্ধ। মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য এসিডীয় এবং পি.এইচ মানের বিস্তার ৫.৫ থেকে ৬.৮। মৃত্তিকাগুলো প্রকৃতিগতভাবেই উর্বর এবং প্রতিবছর বন্যার পানিবাহিত নবীন পলিযুক্ত হয়ে এসব মৃত্তিকার উর্বরতাশক্তি রক্ষিত হয় বা বৃদ্ধি পায়।

গাঙ্গেয় পলল:
বৃহত্তর যশোর ও কুষ্টিয়া জেলা এবং রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল ও ঢাকা জেলার অংশবিশেষ নিয়ে এই অঞ্চল গঠিত। এর আয়তন প্রায় ২৭,০০০ বর্গ কিমি। এটি গাঙ্গেয় সমভূমির নদীজাত
(riverine) ভূমির প্রতিনিধিত্ব করে। এঁটেল দোআঁশ, বেলে দোআঁশ প্রধান। মৃত্তিকার পি.এইচ মানের পরিসর ৭.০ থেকে ৮.৫। মৃত্তিকাগুলো মাঝারি মানের উর্বরতাসম্পন্ন এবং এসব মৃত্তিকাতে ক্যালসিয়াম কার্বনেট বিদ্যমান এবং ফসফেট ও পটাশিয়ামের পরিমাণও বেশি।

উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চল:
বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলার অংশবিশেষ নিয়ে এই অঞ্চলটি গঠিত। এই এলাকার অন্তর্ভুক্ত ভূমির পরিমাণ প্রায় ২০,০০০ বর্গকিমি। এটি উপকূলীয় বলয় বরাবর এবং মোহনাজ দ্বীপমালার সমতল নিচু এলাকার প্রতিনিধিত্ব করে। মৃত্তিকাগুলো লবণাক্ত এবং পি.এইচ মান নিরপেক্ষ থেকে মৃদুক্ষারীয়। মৃত্তিকাগুলোতে পটাশ ও ফসফেটের পরিমাণ বেশি। এই অঞ্চলেই সুন্দরবন অবস্থিত।

পাহাড় অঞ্চলঃ
পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পূর্বেকার বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার গারো পাহাড় নিয়ে গঠিত। পাহাড়ী অঞ্চলে প্রায় ১৫,০০০ বর্গ কিমি এলাকা অন্তর্ভুক্ত। মৃত্তিকাগুলো শক্ত লাল এঁটেল ও সেই সঙ্গে একই রঙের মিহি বালির মিশ্রণ দিয়ে গঠিত এবং মৃত্তিকাতে বিদ্যমান গুটিগুলোতে অধিক পরিমাণে সেসকুইঅক্সাইড
(sesquioxides) থাকে। মৃত্তিকাগুলো মধ্যম থেকে তীব্র এসিডীয়। মৃত্তিকাতে অধিক ক্ষালিত এবং স্বাভাবিক উর্বরতামাত্রা কম। পাহাড়গুলো সাধারণত প্রাকৃতিক ও আবাদি বনবৃক্ষের অধীনে অবস্থিত। স্থানান্তর প্রথায় চাষও কোনো কোনো এলাকায় করা হয়।


সূত্র:
ভূগঠন বিদ্যা। বিধানচন্দ্র মন্ডল ও আসম উবাইদ উল্লাহ।
কোয়াটারনারি এবং বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক ক্রম বিকাশ/ মোঃ হোসেন মনসুর।
Geological Survey of Bangladesh বকর, এম এ
Holcene Sea-Level Changes Along the Maiskhali & Cox’s Bazar./Hossain Mansoor
Tectonics of Bengal Basin/Sikder, A.M