মুসলিম লীগ
১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত একটি রাজনৈতিক দল। ব্রিটিশ ভারতে ভারত উপমহাদেশে মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র তৈরির ক্ষেত্রে প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে সক্রিয় ছিল।

১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে আমীর আলীর উদ্যোগে ‘সেন্ট্রাল মোহামেডান এ্যাসোসিয়েশন’ গঠন করেন। এই সময় এই সংগঠন সৃষ্টির বিষয়ে স্যার সৈয়দ আহমদ দ্বিমত পোষণ করেন। সে সময় সৈয়দ আহমদ মুসলমানদেরকে রাজনীতি থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিয়েছিলেন।

এরপর ভারতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেস আত্মপ্রকাশ করে এবং এই সূত্রে হিন্দি এবং উর্দুর বিরোধ সৃষ্টি হয়। এই প্রেক্ষিতে সৈয়দ আহমদ মুসলমানদের স্বার্থের ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠেন এবং ১৮৮৯ সালে ‘ইউনাইটেড ন্যাশনাল ডিফেন্স এ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন।।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে উত্তর ভারতে মোহমেডান ‘এ্যাংলো ওরিয়েন্টাল ডিফেন্স অরগানাইজেশন অব আপার ইনডিয়া’, ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে সাহরানপুরে মুসলিম রাজনৈতিক সংস্থা এবং ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে পাঞ্জাবে ‘মুসলিম লীগ’ নামক রাজনৈতিক সংস্থাগুলো গঠিত হয়। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গভঙ্গের সূত্রে সমগ্র ভারত জুড়ে হিন্দু জনগোষ্ঠীর প্রতিবাদ সোচ্চার হয়ে উঠে। এর ভিতর দিয়ে স্যার সলিমুল্লাহ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ভিতরে মুসলিম বিদ্বেষের রূঢ় রূপ দেখতে পান। এই সময় তিনি সর্বভারতীয় মুসলিম ঐক্যের কথা ভাবা শুরু করেন।
 
১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে সলিমুল্লাহ সমগ্র ভারতের বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দের কাছে পত্রালাপে নিজের অভিমত তুলে ধরেন। এ সকল চিঠিতে তিনি সর্বভারতীয় 'মুসলিম সংঘ' গড়ে তোলার প্রস্তাব রাখেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৮-৩০শে ডিসেম্বর ঢাকাতে সর্বভারতীয় শিক্ষা সম্মেলন আহুত হয়। তৎকালীন ঢাকার শাহবাগে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে সমগ্র ভারতের প্রায় ৮ হাজার প্রতিনিধি যোগ দিয়েছিলেন। এই সম্মেলনে নবাব সলিমুল্লাহ ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম কনফেডারেন্সী’ অর্থাৎ সর্বভারতীয় মুসলিম সংঘ গঠনের প্রস্তাব দেন। তাঁর এই প্রস্তাবে হাকিম আজমল খান, জাফর আলী এবং আরো কিছু প্রতিনিধি সমর্থন করেন। কিছু প্রতিনিধির আপত্তির কারণে কনফেডারেন্সী শব্দটি পরিত্যাগ করে লীগ শব্দটিকে গ্রহণ করা হয়। অবশেষে সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে 'অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ' নামে একটি দল তৈরি হয়। এই ঐতিহাসিক সম্মেলনে বঙ্গভঙ্গের সমর্থন করা হয় এবং একই সাথে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের নিন্দা করা হয়।

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের বিভাজন ও পাকিস্তান স্বাধীনতার পর, অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ পাকিস্তান মুসলিম লীগ হয়ে ওঠে। সে সময়ে পূর্ব-পাকিস্তানে পাকিস্তান মুসলিম লীগ ক্ষমতায় আসে।

১৯৬০-এর দশকে মুসলিম লীগ দুটি পৃথক দলে পরিণত হয়। এই দলটি হলো- পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কনভেনশন) এবং কাউন্সিল মুসলিম লীগে বিভক্ত হয়।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের মুক্তিযুদ্ধের সময় এই দলটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর, পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কনভেনশন) এবং কাউন্সিল মুসলিম লীগ সহ সকল ধর্ম ভিত্তিক দল নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে রাজনৈতিক দলসমূহের জন্য অধ্যাদেশ অনুসারে উভয় পক্ষকে বৈধতা করে দেয়।

১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই আগস্ট উভয় পক্ষ একত্রিত হয়ে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ গঠিত হয়। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ দুটি ভাগে বিভক্ত হয়েছিল। এর একটি অংশের নেতৃত্বে ছিলেন আব্দুস সবুর খান, অপর ভাগটি ছিল শাহ আজিজুর রহমান। আজিজুর রহমান বিএনপি-র সাথে যোগ দিলে মুসলিম লীগের নেতৃত্বে চলে আসে সবুর খান।

১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই ফেব্রুয়ারি সামরিক আইনের অধীনেই দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আবদুস সবুর খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ সংসদ নির্বাচনে ২০ টি আসন জয় লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল।

 জিতেছিল।[২] সাবুর খানের মৃত্যুর পর, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ একাধিক ভগ্নাংশে বিভক্ত হয়ে যায়।[৫] দুইটি বিভক্ত অংশ (বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ - বিএমএল) এখনও বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিবন্ধিত।[৬] বাংলাদেশ মুসলিম লীগের বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহম্মদ বদরুদ্দোজা আহমেদ সুজা ও সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল খায়ের।[৪][৬]