পাবনা জেলার ঐতিহ্য
পাবনা জেলার লোক সংঙ্গীত, লোকগাঁথা, লোকনৃত্য, কৌতুক, নকশা, পালাগান, ইত্যাদি
লোকসংস্কৃতিতে অত্যন্তঐতিহ্য মণ্ডিত। এ জেলার বস্ত্র শিল্প প্রসিদ্ধ , গ্রামে
গ্রামে বস্ত্র বয়নকারী হিন্দু মুসলমান উভয় জাতি সম্প্রদায় মিলে মিশে কাজ করে।
একমাত্র এখানেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলের সমস্ত ভারতবর্ষের চার পঞ্চমাংশ রেশম
আমদানি হত। পাবনার সাদুলনাপুর, সুজানগর, দোগাছি, শিবপুর, সিলিমপুরের-সহ অনেক এলাকায়
রয়েছে তাঁতী সম্প্রদায়। দোগাছির শাড়ী ও লুঙ্গী দেশ খ্যাত। পাবনা ব্যতীত অন্য কোথাও
কাপড় প্রস্তত উপযোগী সূতা রংকারক দেখা যায় না। একটি সরকারী বিবরণী থেকে জানা যায়
জেলার সাঁড়া , সাঁথিয়া , সুজানগর সহ অনেক এলাকায় ইক্ষু নির্ভর শিল্প রয়েছে। জেলায়
প্রচুর পরিমাণে সরিষা উৎপাদিত হয় , আর এর ফলে এখানে গড়ে উঠেছে অনেক তেল কল। পূর্বে
খুলু সম্প্রদায় এই পেশার সাথে সম্পৃক্ত ছিল, যন্ত্রের সাথে প্রতিযোগিতায় তারা আজ
বিলুপ্তর পথে।
স্থাপত্য ঐতিহ্য
জোড়বাংলা
মন্দির :
পাবনা
শহরের প্রাণকেন্দ্রে দক্ষিণ রাঘবপুরে শহরের পূর্ব-দক্ষিণে, রাঘবপুরে একটি শান
বাঁধানো পুকুরের কাছে,
এই জোড়বাংলা মন্দিরটি অবস্থিত। তবে চারিদিকের বাড়িঘরের কারণে বাইরের রাস্তা থেকে এ
মন্দির দেখা যায় না। পাবনায় জোড়বাংলা মন্দিরে কোন শিলালিপি নেই।
ব্রিটিশ শাসন আমলে যখন ইমারতটি প্রত্নতত্ত্ব ও যাদুঘর অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষণের
জন্য গৃহীত হয়েছিল তখনো এর কোন শিলালিপি ছিল না। স্থানীয়
লোকমুখে প্রচলিত কাহিনীতে জানা যায় যে, ব্রজমোহন ক্রোড়ী নামক মুর্শিদাবাদের নবাবের
এক তহশিলদার আঠার শতকের মধ্যভাগে এ মন্দির নির্মাণ করেন। এ মন্দিরটি আয়তনে বৃহৎ না
হলেও বাংলাদেশের সকল জোড়বাংলা নিদর্শনের মধ্যে সুন্দরতম। এর গায়ে খণ্ড
খণ্ড টেরাকোটায় উৎকীর্ণ শিল্পকর্ম মন্দিরটিকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে।
বনমালী ইনস্টিটিউট : পাবনা শহরের একটি ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিক অঙ্গন হলো বনমালী ইনস্টিটিউট। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ মার্চ এর ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই ইনস্টিটিউটি একটি সম্মিলিত কার্যক্রমের সম্মিলিত রূপ। এর বনমালী হল অংশটি— ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণী পেশা নির্বিশেষে সংস্কৃতিমোদী নাগরিকবৃন্দের মতামত আহরণের সম্মিলন কক্ষ। এর কান্ত মেমোরিয়াল হল অংশটি তৈরি হয়েছিল—নাগরিকগণের প্রয়োজন উপস্থাপনযোগ্য সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকাণ্ড প্রদর্শনের জন্য। আর মুক্তিবুদ্ধির চর্চার লালন, সম্প্রসারণে জন্য কিশোরী মোহন স্টুডেন্টস লাইব্রেরী ও অফিস স্থাপিত হয়েছিল।
শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের
সৎসঙ্গ(আশ্রম-মন্দির)
পাবনা
শহরের সন্নিকটে হেমায়েতপুর গ্রামে শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের সৎসঙ্গ
আশ্রম-মন্দিরটি অবস্থিত। উল্লেখ্য অনুকূল চন্দ্রের পিতা ছিলেন হেমায়েতপুর গ্রামের
শ্রী শিবচন্দ্র চক্রবর্তী এবং মাতা ছিলেন শ্রীযুক্তা মনমোহিনী দেবী। সৎসঙ্গ আশ্রমটি
আদিতে সাদামাঠা বৈশিষ্টে নির্মিত হয়েছিল। তবে বর্গাকৃতির ভবনটির শীর্ষদেশ চারটি
ত্রিভূজ আকৃতির ক্রমহ্রাসমান ছাদে আচ্ছাদিত ছিল। এ মন্দিরের শিখর ক্ষুদ্রাকৃতির কলস
আকর্ষণীয় বৈশিষ্টমণ্ডিত ছিল। মন্দিরের পাশেই শ্রী শ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের পূজার
ঘর অবস্থিত। এ ক্ষুদ্র ভবনটি গম্বুজবিশিষ্ট এবং ধনুক বক্র কার্নিশ ও গম্বুজের
চারকোণে চারটি দৃষ্টিনন্দন শিখর ধারণ করে এক বৈচিত্রময় বৈশিষ্টের অবতারণা করেছে।
শ্রী শ্রীঅনুকূল চন্দ্রের পিতা-মাতার স্মৃতিরক্ষার্থে এই মন্দির নির্মিত হয়েছিল। মন্দিরের সম্মুখ প্রাসাদে 'স্মৃতি মন্দির' কথাটি পাথরের উপরে উৎকীর্ণ আছে। অনুকূলচন্দ্র 'সৎসঙ্গ' নামে একটি জনহিতকর সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। প্রকৃত অর্থে অনুকূল ঠাকুর মানবকল্যাণে তাঁর জায়গা-জমি যথাসর্বস্ব উৎসর্গ করে গেছেন। স্মৃতিমন্দিরটি অন্যান্য ইমারতের তুলনায় এখনো সুসংরক্ষিত অবস্থায় আছে। সম্প্রতি নব নির্মিত সৎসঙ্গ-আশ্রম-মন্দির সমন্বয়ে গঠিত স্থাপত্য নিদর্শনটি সহজেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এখানে শ্রী শ্রীঅনুকূল চন্দ্রের জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকীকে কেন্দ্র করে বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঐ সময় এখানে প্রচুর ভক্ত ও অতিথির সমাগম হয়।
মানসিক হাসপাতাল
পাবনা হেমায়েতপুরের মানসিক হাসপাতাল শহরের নিকটেই পশ্চিমে দিকে অবস্থিত। এটি ১৯৫৭
খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মূলত পাবনা মানসিক হাসপাতাল মানসিক চিকিৎসায় দেশের
একমাত্র পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠান। জানা যায়, এখানে রোগীদের প্রতিদিন গড় অবস্থানের
সংখ্যা ৪২৫-৪৫০ জন। হাসপাতালটি দীর্ঘদিনের পুরানো বিধায় এটির সার্বিক
মেরামত/সংস্কার খুবই প্রয়োজন।
পাবনা এডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়
কলেজ
এটি
পাবনা জেলার প্রাচীন এবং সর্ববৃহৎ মহাবিদ্যালয়। স্বনামধন্য এ কলেজটি ১৮৮৯
খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে স্থাপিত হয়। বনমালী রায় বাহাদুর(জমিদার), অধ্যাপক হেম
চন্দ্র রায় (দাতা), গোপালচন্দ্র লাহিড়ী, রাধিকা নাথ বসু প্রমুখ ব্যক্তিবর্গের
উদ্যোগে কলেজটি স্থাপিত হয়েছিল। সে সময়ে এর নাম রাখা হয়েছিল ছিল পাবনা ইনস্টিটিউট।
ব্রিটিশ ভারত সম্রাট সপ্তম এডওয়ার্ডের স্মৃতির স্মরণে ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে এর নামকরণ
করা হয় এডওয়ার্ড কলেজ। একটি ট্রাস্টিবোর্ডের অধীনে এই কলেজটি পরিচালিত হতো। ১৯৬৮
খ্রিষ্টাব্দে ১ মার্চ তারিখে কলেজটি সরকারীকরণ করা হয়। উত্তর বাংলার এই বৃহৎ শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান কলা, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য অনুষদের জন্য পৃথক চত্বরে সর্বোচ্চ তিনতলা
পর্যন্ত প্রাসাদোপম ভবনে বর্তমানে কয়েকটি বিষয়ে সনাতকোত্তর কোর্স চালু করার মাধ্যমে
এটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মর্যাদা লাভ করেছে।
সূত্র :
বিশ্বকোষ। একাদশ ভাগ। শ্রীনগেন্দ্রনাথ বসু কর্ত্তৃক সঙ্কলিত ও প্রকাশিত।
১৩০৭ বঙ্গাব্দ।
http://www.dcpabna.gov.bd/
http://www.banglapedia.org/httpdocs/HTB/102744.htm