রাঢ়
প্রাচীন বাংলার
জনপদ
বিশেষ।
ভাগীরথী নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত অঞ্চলকে
রাঢ় বলা হয়।
পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলা, বর্ধমান জেলার মধ্যভাগ,
বাঁকুড়া জেলার পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব ভাগ ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পশ্চিমভাগ রাঢ়ের
অন্তর্গত। এছাড়া প্রেসিডেন্সি বিভাগের মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমার অংশবিশেষ
ও হুগলি জেলার সামান্য অংশ রাঢ়ের অন্তর্গত।
এর সীমানা পশ্চিমে ছোটনাগপুর মালভূমির প্রান্তভাগ
থেকে পূর্বে গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলের পশ্চিম সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত। এই অঞ্চল ঈষৎ
ঢেউ খেলানো ও এর ঢাল পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে
বিস্তৃত। সাঁওতালি ভাষার 'রাঢ়ো' (পাথুরে
জমি) শব্দটি থেকে রাঢ় শব্দটি গৃহীত হয়েছে। অন্যমতে, গঙ্গারিডাই রাজ্যের নাম থেকে এই
শব্দটি উৎপন্ন।
উত্তর ও দক্ষিণের বিচারে এই জনপদ উত্তর রাঢ়
রাঢ়ের প্রাচীন নাম সূহ্ম। রাঢ়ের বিস্তৃতি ছিল ভাগীরথীর পশ্চিমাঞ্চল। রাঢ় উত্তর এবং দক্ষিণ রাঢ় এই দুই ভাগে বিভক্ত ছিল।
উপরের রাঢ় ‘বজ্রভূমি’ এবং নিম্নরাঢ় সূহ্মভূমি নামে পরিচিত ছিল। বজ্রভূমি বলতে মোটামুটি বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদ জেলাকে বোঝাত এবং সূহ্মভূমি বলতে বর্ধমানের দক্ষিণাংশ, হুগলীর অনেকাংশ, কান্দি মহকুমা, বীরভূম এবং বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমাকে বোঝাত। জৈনগ্রন্থ ‘আচারঙ্গ সুত্র’র মধ্যে বজ্র এবং সূহ্ম এই দুই ভূমিরই উল্লেখ আছে।
পশ্চিমের মালভূমি থেকে
কাঁকুড়ে পলিমাটি বয়ে এনে এই অঞ্চলের নদীগুলি এই সমভূমি সৃষ্টি করেছে।
এই অঞ্চলে ল্যাটেরাইট লাল মাটির প্রাধান্যই
বেশি। মাটির স্তর এখানে অগভীর। মাটির জলধারণ ক্ষমতা কম। নদী অববাহিকাগুলি বাদে
অন্যত্র তাই মাটি খুব একটা উর্বর নয়। এই অঞ্চলের প্রধান নদনদীগুলো হলো—
ময়ূরাক্ষী, অজয়, দামোদর, দ্বারকেশ্বর, শিলাই ও কাঁসাই। এই নদীগুলির উৎপত্তিস্থল
ছোটনাগপুর মালভূমি ও এগুলির প্রতিটিই ভাগীরথী-হুগলি বা তার কোনও উপনদীতে মিলিত
হয়েছে। সুবর্ণরেখা নদীর অংশবিশেষও এই অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে
পতিত হয়েছে। বর্ষাকালে প্রায়ই দুকুল ছাপিয়ে বন্যা দেখা দেয়।
সমুদ্র থেকে দূরে অবস্থিত
হওয়ায় রাঢ় অঞ্চলের জলবায়ু চরমভাবাপন্ন। গ্রীষ্ম ও শীতকালের গড় তাপমাত্রা এখানে
যথাক্রমে ৩৫ ডিগ্রি থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ১২ ডিগ্রি ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এই অঞ্চলে বছরে গড়ে ১৪০-১৬০ সেন্টিমিটার
বৃষ্টিপাত হয়। তবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ উত্তর রাঢ়ের তুলনায় দক্ষিণ রাঢ়ে বেশি।
এপ্রিল-মে মাস নাগাদ কালবৈশাখী ও অক্টোবরে আশ্বিনের ঝড়ও এই অঞ্চলের জলবায়ুর
অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক উদ্ভিদের মধ্যে শাল, মহুয়া,
শিমূল, কুল, বাবলা, বাঁশ ও বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস উল্লেখযোগ্য। এক সময় এই অঞ্চলে
গভীর বন ছিল। বর্তমানে চাষাবাদের কারণে গাছপালা বিহীন প্রান্তরে পরিণত হয়েছে।
সূত্র :
ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।
http://www.banglapedia.org/HTB/102800.htm