সমতট
প্রাচীন বাংলার জনপদ বিশেষ।

পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় বঙ্গের নিম্নে অবস্থিত আর্দ্র অঞ্চল হিসেবে সমতট পরিচিত। চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং-এর বর্ণনা অনুসারে জানা যায়
কামরূপ (পূর্ব আসাম) থেকে দক্ষিণ দিকে ১২০০-১৩০০ লি (প্রায় ৩৫০ কিমি) অতিক্রম করে তিনি সমতট (সান-মো-তট-অ) পৌঁছেছিলেন। এর প্রদক্ষিণ পথ ছিল প্রায় ৩০০০ লি (প্রায় ৮০০ কিমি)। জনপদটি ছিল সমুদ্রের পাশে অবস্থিত, নিচু এবং আর্দ্র। প্রায় ২০ লি (প্রায় ৫.৫ কিমি) আয়তনের বিশিষ্ট নগরী ছিল সমতটের রাজধানী

ই-ৎসিঙ্ নামক অপর এক চৈনিক পরিব্রাজক এবং তীর্থযাত্রী, চৈনিক শ্রমণ শেং চি সাত শতকের সূত্র ধরে জানান যে, রাজভট্ট নামক একজন শাসক সমতটে রাজত্ব করতেন। উল্লেখ্য, এই রাজভট্টই খড়গ বংশের রাজারাজভট্ট নামে পরিচিত। রাজা রাজভট্টের রাজধানী (জয়স্কন্ধবার) ছিল কর্মান্তবাসক। কুমিল্লা শহর থেকে ৮ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে কৈলাণ থেকে উদ্ধারকৃত শ্রীধারণ রাত-এর তাম্রশাসনে রাজাকে ‘সমতটেশ্বর’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই রাজার রাজধানী ছিল দেবপর্বত। উল্লেখ্য, আট শতকে দেবপর্বত উক্ত অঞ্চলের শাসক দেব রাজবংশেরও রাজধানী ছিল। দশ শতকে চন্দ্ররাজাদের তাম্রশাসনেও সমতট ও দেবপর্বতের উল্লেখ আছে। এই সূত্রে বলা যায়, লালমাই পাহাড় ও ময়নামতীতে প্রাপ্ত ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে দেবপর্বতের সম্পৃক্ততা ছিল। তেরো শতকের দামোদরদেব-এর মেহার তাম্রশাসনের মাধ্যমে, মেহার (কুমিল্লার ১৪.৫ কিমি দক্ষিণ-পূর্বে)-এর সন্নিকটে যে ভূমি দান করা হয়, তা ছিল সমতটের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

চন্দ্রবংশীয় রাজা ভবদেব কুমিল্লায় আনন্দ বিহার বা শালবন বিহার প্রতিষ্ঠা করেন। এই সময়ে বিহার এশিয়ার জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিগণিত হয়। সে সময় একে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা দেওয়া হয়। বিখ্যাত চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং আনন্দ বিহারে আসেন। তখন বিহারে চার হাজার ভিক্ষু (ছাত্র) ছিল। হিউয়েন সাং ময়নামতী অঞ্চলে ৩৫টি শিক্ষাকেন্দ্র (বিহার) দেখতে পান। তখন তিনি সমতট তথা কুমিল্লাবাসীকে প্রবল শিক্ষানুরাগী বলে আখ্যায়িত করেন।


সূত্র :
ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।
http://www.banglapedia.org