গোমতী
ভারত বাংলাদেশ মিলে এই নামে দুটি নদী পাওয়া যায়।

১. গোমতী (ভারত-বাংলাদেশ)
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য এবং বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত একটি নদী। এর অপর নাম ঘুমতী নদী। বাংলাদেশে গোমতী নদীর মোট দৈর্ঘ্য ১৩৫ কিমি। গোমতীর উল্লেখযোগ্য দুটি উপনদী হলো ডাকাতিয়া ও বুড়ি।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর-পূর্বপ্রান্তীয় পার্বত্য অঞ্চল ডুমুর নামক স্থান থেকে উৎপন্নদী হয়েম পার্বত্যভূমির মধ্য দিয়ে ১৫০ কিমি সর্পিল পথ পার হয, বাংলাদেশের কুমিল্লা সদর উপজেলার কটক বাজারের কাছে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে। নদীটি কুমিল্লা শহরের উত্তর প্রান্ত এবং ময়নামতীর পূর্ব প্রান্ত অতিক্রম করে প্রবাহিত হয়ে বুড়িচং উপজেলায় প্রবেশ করেছে। এই উপজেলার ডানপ্রান্ত ঘেঁসে দেবিদ্বার উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রায়  ৬০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে কোম্পানীগঞ্জ বাজারে পৌঁছেছে।  এরপর প্রায় ৫০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে কোম্পানীগঞ্জ থেকে পশ্চিম দিকে বাঁক নিয়ে নদীটি দাউদকান্দি উপজেলার শাপটা নামক স্থানে এসে মেঘনা নদীতে পতিত হয়েছে।

গোমতী মূলত খরস্রোতা পার্বত্য নদী। কুমিল্লায় এর প্রবাহ মাত্রা ১০০ থেকে ২০,০০০ কিউসেক পর্যন্ত উঠানামা করে। নদীটি বর্ষার সময়  নদীটি কানায় কানায় পূর্ণ থাকে। এর গড় প্রশস্ততা দাঁড়ায় প্রায় ১০০ মিটার। এই সময় এর স্রোত দ্রুতগতি সম্পন্ন হয়। কিন্তু শীত মৌসুমে নদীটি সংকীর্ণ হয়ে আসে এবং অধিকাংশ স্থানে হেঁটেই নদী পার হওয়া যায়।

স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের বছরে নদীর পানির উচ্চতা পার্শ্ববর্তী এলাকার স্তর থেকে ১.৫ মিটারের উপরে বৃদ্ধি পায়। আকস্মিক বন্যার কারণে এক সময় এই নদীটি ‘কুমিল্লা শহরের দুঃখ’ হিসেবে পরিচিত ছিল। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীটির ধ্বংসাত্মক প্রবণতা প্রতিরোধে এবং কুমিল্লা শহর রক্ষায় বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বন্যা প্রতিরোধের জন্য ভেড়িবাঁধ এবং নদীর গতিপথ সোজা রাখতে ১৯টি লুপকাট নির্মাণ করা হয়েছে। এসকল ব্যবস্থা গৃহীত হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন সময় বন্যার প্রকোপে কুমিল্লা শহর বিপদাপন্ন হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক গৃহীত আরও কিছুসংখ্যক প্রকল্প বাস্তবায়নের পর, বর্তমানে গোমতী দৃশ্যত নিয়ন্ত্রণাধীন।

নদীটি বড় নৌকা চলাচলের মতো নাব্যতা নেই। দাউদকান্দি পর্যন্ত গোমতী জোয়ারভাটা প্রভাবাধীন, কিন্তু উজান অঞ্চলে জোয়ারভাটার প্রভাব পরিলক্ষিত হয় না। এই নদীর উল্লেখযোগ্য তীরবর্তী বন্দর হলো-কুমিল্লা, ময়নামতী, বুড়িচং, কোম্পানীগঞ্জ, মুরাদনগর এবং দাউদকান্দি।

২. গোমতী (ভারত)
এটি গঙ্গার একটি উপনদী। সনাতন হিন্দু ধর্ম মতে- নদীটি ঋষি বশিষ্ঠের কন্যা। একাদশীতে গোমতীতে স্নান করলে পাপমোচন হয়। এই কারণে এই নদীটি এই ধর্মের একটি পবিত্র নদী।

ভারতের উত্তর প্রদেশের ফুলহার হ্রদ থেকে এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে। উৎপত্তি স্থল থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে গাইহাইয়ে নদীর সাথে মিলিত হয়ে প্রায় ৬৮ কিলোমিটার সঙ্কীর্ণ নদী হিসেবে হিলখিমপুর খেরি জেলায় প্রবেশ করেছে। এরপর সুখেতা, চোহা, এবং অন্ধ্র চোহা নদীর সাথে মিলিত হয়ে অগ্রসর হয়ে ময়ালানীর কাছে কাথিয়া নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এই সময় নদীটি বড় নদী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এরপর জৌনপুরের কাছে নদীটি সাই নদীর সাথে মিলিত হয়ে আরও প্রশস্ত হয়েছে। জৌনপুর থেকে ১৯০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে নদীটি লক্ষ্ণৌতে প্রবেশ করেছে। মূলত নদীটি লক্ষ্ণৌকে দুই ভাগে বিভাজিত করে অগ্রসর হয়েছে। লক্ষ্ণৌ অতিক্রান্ত হওয়ার পর নদীটিকে গোমতী বাঁধ দ্বারা শাসন করা হয়েছে। এই বাঁধে কারণে একটি কৃত্রিম হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে।

কাথিতে এই নদী গঙ্গার সাথে মিলিত হয়েছে। এই গঙ্গা-গোমতী সঙ্গমস্থলে রয়েছে প্রখ্যাত মার্কেণ্ড ঋষির মন্দির।
সূত্র: