কুমার
বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত একটি নদী। বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা জেলার হাটবোয়ালিয়ায় মাথাভাঙ্গা নদী থেকে এই নদী উৎপন্ন হওয়ার পর প্রায় ২৫ কিমি পথ অতিক্রম করে ঝিনাইদহ জেলার সীমানা বরাবর এসে শৈলকুপা উপজেলায় প্রবেশ করেছে এবং মাগুরা জেলা শহরের কাছে নবগঙ্গায় মিলিত হয়েছে। এরপর  উভয় নদীর মিলিত স্রোত নবগঙ্গা নামেই দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। হাটবোয়ালিয়ায় থেকে নবগঙ্গায় মিলিত হওয়ার স্থান পর্যন্ত এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪৪ কিমি।  নদীটির উৎস থেকে গাড়াগঞ্জ পর্যন্ত গড় প্রস্থ ১০৭ মি এবং পরবর্তী অংশের (মাগুরা পর্যন্ত) গড় প্রস্থ ২৩০ মি।

জেমস রেনেল ১৭৬৪ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর মানচিত্রে এই নদীর উল্লেখ করেছেন। সে সময়ে এই নদী বর্ষা মৌসুমে পানিতে পূর্ণ থাকলেও শুকনা মৌসুমে নদীটি শুকিয়ে যেত। আশপাশের বহু বিল ও হাওরে পানি এই নদীতে পতিত হতো। এই কারণে এর পানির রঙ ছিল অনেকটা কালো। ফলে স্থানীয়ভাবে এই নদীকে অনেকে কালোবিল বলতো।

একসময় এই নদীর প্রবাহ পথে কালীগঙ্গা, ছাকু, হানু, মুচিখালী ইত্যাদির জলপ্রবাহ পেত। উল্লিখিত সবকটি নদীই গড়াই নদীর শাখা। গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প (জি-কে প্রজেদ্ম) বাস্তবায়নের ফলে মাথাভাঙ্গা থেকে কুমারের উৎসমুখ এবং অন্যান্য নদীনালাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে কুমার এখন ক্ষীণকায় একটি নদীতে পরিণত হয়েছে। কেবল গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের প্রয়োজনাতিরিক্ত পানি এবং স্থানীয় বৃষ্টিপাতই এখন এই নদীর জলপ্রবাহের প্রধান উৎস। বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে তিন-চার মাস এই নদীতে নৌকা চলাচল করতে পারে। সার্বিকভাবে ভাঙন প্রবণতা নেই, তবে ফরিদপুর জেলা শহর এবং নগরকান্দা উপজেলা শহরের কাছে কিছুটা ভাঙন প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। স্থানীয়ভাবে বেশি বৃষ্টিপাত হলে শৈলকুপা উপজেলার অংশবিশেষ এই নদী দ্বারা প্লাবিত হয়।

আলমডাঙ্গা, হরিণাকুণ্ডু, শৈলকুপা, শ্রীপুর, মাগুরা প্রভৃতি কুমার নদীর তীরবর্তী উল্লেখযোগ্য স্থান। এই নদীর তীরে শৈলকুপা উপজেলার অদূরে মনহরদীতে বাদশাহ আকবরের আমলের একটি প্রাচীন মসজিদ এবং কবিরপুরে একটি নীলকুঠির ধগ্ধংসাবশেষ রয়েছে। উল্লেখ্য, নগরকান্দা শহরের নিকট নদীটি স্থানীয়ভাবে শীতলক্ষ্যা নামে পরিচিত।