কর্ণসুবর্ণ
বঙ্গদেশের একটি জনপদ ও বাংলার প্রথম স্বাধীন শাসক শশাঙ্ক(৬০৬-৬৩৭ খ্রি) রাজধানী

ধারণা করা হয়— মুর্শিদাবাদ জেলার সদর বহরমপুর থেকে ৯.৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ভাগীরথী নদীর তীরে এই নগরীটি ছিল। বর্তমানে স্থানটি রাঙামাটি গ্রাম হিসেবে পরিচিত। ১৯৬২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ রাঙামাটির রাজবাড়ি ডাঙ্গার উঁচু ঢিবি খনন কার্য চালিয়ে কিছু নিদর্শন পায়। এগুলোর ভিতরে ছিল-  দুটি ব্রোঞ্জ নির্মিত বৌদ্ধ মূর্তি। একটিতে বুদ্ধদেব পদ্মের উপর দাঁডিয়ে, অন্যটিতে ভূমি স্পর্শ মুদ্রায় বসে আছেন। স্থাপত্য নিদর্শন হিসেবে পাওয়া যায়, পঞ্চায়তন ইঁট এবং পাথরের গাঁথা ভিত্তি। এছাড়া কিছু পোড়ামটির সিলমোহর পাওয়া যায়। এসকল সিলমোহরে রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মচক্রের ছাপ, জোড়া হরিণ, গাছ ও পাখির চিত্র।

খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর দিকে রচিত বরাহমিহিরের বৃহৎসংহিতায় বঙ্গদেশের যে সব
রাজ্যের নাম পাওয়া যায়, তা হলো- পৌণ্ড্র, সমতট, বর্ধমান, সুহ্ম, তাম্রলিপ্ত, বঙ্গ ও উপবঙ্গ। এই তালিকায় কর্ণসুবর্ণের নাম পাওয়া যায় না। হয়তো কর্ণসুর্বণ তখন প্রতিষ্ঠা পেলেই ততটা উল্লেখযোগ্য ছিল না। খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে  চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন-সাং-এর ভ্রমণ বৃত্তান্ত থেকে জানা যায়- তাঁর সময়ে বঙ্গের ভাগগুলো ছিল- পুণ্ড্রবর্ধন, কর্ণসুবর্ণ, সমতট ও তাম্রলিপ্ত।

খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন-সাং-এর ভ্রমণ বৃত্তান্ত থেকে জানা যায়- তাম্রলিপ্ত থেকে যাত্রা করে ৭০০ লি (প্রায় ১০০ মাইল) দূরে অবস্থিত 'কিয়েলোনাসুফালানো' জনপদে উপস্থিত হয়েছিলেন।  ধারণা করা হয়, এই জনপদের কেন্দ্র ছিল কর্ণসুবর্ণ। অনেকে মনে করেন মুর্শিদাবাদের ৯ মাইল দূরে 'করুসোন-কা-গড়' হলো কর্ণসুবর্ণের ধ্বংসাবশেষ।

প্রত্নতত্ত্ববিদ ফার্গুসনের ধারণা বর্ধমানের উত্তরাংশ, সমগ্র বীরভূম জেলা, মুর্শিদাবাদ, কৃষ্ণনগর এবং প্রাচীন যশোহর জুড়ে ছিল কর্ণসুবর্ণের শাসনের অন্তর্গত ছিল। হিউয়েন-সাং-এর মতে কর্ণসুবর্ণের পরিধি ছিল ৭০০ লি (১০০ মাইল) আর রাজধানীর পরিধি ছিল ২০ লি। হিউয়েন-সাং-এর ভ্রমণকালে এই স্থান জনাকীর্ণ ছিল। বহুজাতের মানুষ এখানে বাস করতো। এখানকার ভূমি উর্বর ছিল। স্থানীয় মানুষ ছিল সরল এবং ধার্মিক। কর্ণসুবর্ণে ১০-১১টি বৌদ্ধ সঙ্ঘারাম ছিল। এসকল সঙ্ঘারামে প্রায় দুই হাজার বৌদ্ধ ভিক্ষু ছিলেন। এছাড়া ছিল প্রায় পঞ্চাশটি হিন্দু দেবদেবীর মন্দির ছিল।
 

সূত্র: