মাচুপিচুর বাড়ির দেওয়াল |
যতদূর জানা যায়, ১৪৩৮ খ্রিষ্টাব্দে ইনকার সম্রাট ছিলেন পাচুকুটি। ১৪৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি তৈরি করেছিলেন মাচুপিচু নগরী। এই নগরীটি কেন তৈরি করেছিলেন, তা নিয়ে নানা জনের নানামত রয়েছে। অনেকে মনে করেন মাচুপিচু নগরীটি ছিল সম্রাটের নিজস্ব সম্পদ। এখানে একটি শক্তিশালী তৈরি করা হয়েছিল। এছাড়া শীতকালীন রাজধানী হিসেবে নগরীটি ব্যবহার করা হতো। দক্ষিণ আমেরিকায় স্প্যানিশদের আক্রমণে ইনকা সভ্যতার পতন ঘটে এবং এদের অধিকাংশ শহর ধ্বংস হয়ে যায়। তবে স্প্যানিশরা মাচুপিচু শহরটি খুঁজেই পায় নি। স্প্যানিশদের আক্রমণে ইনকা সভ্যতার মানুষদের একটি বিরাট অংশ নিহত হয়। বাকিরা বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে। ফলে একসময় মাচুপিচু পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হয়ে পড়ে।
১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাইরাম বিংহাম ((Hiram Bingham) মাচুপিচু শহরটির সন্ধান পান। মূলত তিনি এই বছরে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণার সূত্রে ২৪শে জুলাই মাচুপিচুতে পৌঁছেছিলেন। মাচুপিচু পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী কৃষকরা মাচুপিচু সম্পর্কে জানতো। তাদের কাছে এর কোনো ঐতিহাসিক গুরুত্ব *ছিল না। মূলত হাইরাম বিংহাম প্রথম গুরুত্ব সহকারে এই নগরীর কথা জনসমক্ষে প্রকাশ করেন। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে ইউনেস্কো মাচুপিচুকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তালিকায় স্থান দেয়৷
বর্তমানে মাচুপিচুর ঘরের পাথুরে দেয়াল পাওয়া যায়। সম্ভবত এর ছাদ ছিল কাদা ও ঘাস দিয়ে তৈরি। দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে ছাদের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। এই সকল বাড়িগুলো পাহাড়ের গা ঘেঁষে ধাপে ধাপে তৈরি করা হয়েছিল। আর পাশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল সিঁড়িপথ। উপত্যাকার মাঝের অংশে ঘিরে সমতল করে তৈরি করা হয়েছিল কৃষিভূমি। এই ভূমিগুলোও পাহাড়ের উচ্চতার সাথে সমন্বিত করে ধাপে ধাপে উন্নীত করা হয়েছিল। এই কারণে, মাচুপিচুকে নগরপ্রান্ত ও কৃষিপ্রান্ত নামে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। এর কৃষি প্রান্তকে ছুঁয়ে তৈরি হয়েছিল কৃষকদের বাড়ি। আর অভিজাত শ্রেণি, সৈনিক, সরকারি কর্মচারীরা থাকতেন কৃষি প্রান্ত থেকে একটি দূরে বা উঁচু ধাপে।
মাচু পিচুর বেশির ভাগ স্থাপনা নির্মিত হয়েছে আয়তকার পাথরের খণ্ড একটির উপর অপর একটি বসিয়ে। এক্ষেত্রে কোন প্রকার চুন, সিমেন্ট বা মাটির গাঁথুনি ব্যবহার করা হয় নি। এভাবে স্বাধীনভাবে পাথর গেঁথে তৈরিকৃত নির্মাণশৈলীকে অ্যাসলার বলে। দেয়ালগুলো ভিত্তি থেকে উপরের দিকে কিছুটা সরু হয়ে উঠেছে। ফলে দেয়ালগুলো সোজা খাড়াভাবে তৈরি না হয়ে একটু হেলানোভাবে তৈরি হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় পাথরের ব্লকগুলোর বাইরের দিকটা মসৃণ করা থাকে। ভেতরের দিকটা বেশির ভাগ অমসৃণ হয়। একটা পাথরের সাথে আরেকটা পাথর এমনভাবে খাপ খাওয়ানো হয়েছে যে একটা চিকন ছুরিও দুটো পাথরের মাঝখানে প্রবেশ করানো সম্ভব না।কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তৈরি হয়েছিল, মাটির গাঁথুনি ব্যবহার করে। দরজা জানালাগুলো ঘরের ভেতরের দিকে খানিকটা হেলানো।
মাচু পিচু নগরীতে মোট ১৪০টি পাথরের স্থাপনা রয়েছে। এর ভিতরে রয়েছে বাসস্থান, মন্দির, স্যাংচুয়ারি (ধর্মীয় পবিত্র উপকরণ রাখার জন্য), পার্ক ইত্যাদি। একশ'টার মত সিঁড়ি পাওয়া যায়। এর কোন কোনটি বা সবগুলো ধাপসহ একটা মাত্র গ্র্যানাইট কেটে বানানো। ১৬টি পানির ঝরণা দিয়ে সম্পূর্ণ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাথর ছিদ্র করে পানি চলাচলের পথ করা হয়েছিল। উল্লেখ্য প্রায় আধ মাইল দূরের প্রাকৃতিক পানির উৎস থেকে, মাচুপিচু নগরীতে সয়ংক্রিয়ভাবে পানির সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।