আগ্নেয় পর্বত
ইংরেজি:
Volcano Mountain
সমনাম: সঞ্চয়জাত পর্বত
(Mountain of Accumulaion)

পর্বতের শ্রেণিগত নাম। ভূগর্ভের উত্তপ্ত গলিত তরল শিলা বা ম্যাগমা ভূস্তরের ফাটল দিয়ে লাভারূপে বাইরে বেরিয়ে এসে শীতল ও কঠিন হয়ে যে গম্বুজাকৃতি পর্বতের সৃষ্টি হয় তাকে সঞ্চয়জাত পর্বত বা আগ্নেয় পর্বত বলে।

পাতসঞ্চালন তত্ত্ব
(Plate Tectonic Theory) অনুসারে কোনো একটি মহাসাগরীয় পাত অপর একটি মহাদেশীয় পাতের দিকে অগ্রসর হলে দুইটি পাতের সংযোগস্থলে মহাসাগরীয় প্লেটের প্রান্তসীমা মহাদেশীয় পাতের নিচে ঢুকে যায়। একে বলা হয় অধোগামী (subduction) প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার ফলে দুটি পাতের সংযোগস্থলে প্রচণ্ড চাপের ফলে ভূপৃষ্ঠের একটি অংশের ৮০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার নিচে তাপমাত্রা ভয়ানক বেড়ে যায়। এই তাপে ভূ-অভ্যন্তরের বিভিন্ন পদার্থ গলে গিয়ে তরল শিলাস্রোত বা ম্যাগমা (Magma) এবং গ্যাসের উৎপত্তি হয়। এর গ্যাসীয় অংশের চাপে ভূ-গর্ভের অতি উত্তপ্ত তরল শিলাস্রোত ভুত্বকের নলের মতো ফাটল বা সুড়ঙ্গ তৈরি করে এবং ওই পথে ভূপৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। ফলে আগ্নেয় গিরির শীর্ষদেশে অবস্থিত জ্বালামুখ নামে এক বা একাধিক মুখ বা গহ্বর (crater) দিয়ে লাভা রূপে ছড়িয়ে পড়ে ।

তবে ঊর্ধ্বগামী সমস্ত শিলাস্রোত একসঙ্গে ভূপৃষ্ঠে উঠে আসে না। সাধারণত দেখা যায় ভূপৃষ্ঠের ৩-৫ কিলোমিটার নিচে বিশালাকার গহ্বরে ম্যাগমা সঞ্চিত হয়। এই ঘরকে ম্যাগমা ঘর
(Magma Chamber) বলা হয়। এই ঘরে থাকা অবস্থায় গ্যাসের চাপ যদি আরও বৃদ্ধি পায়, তা হলে ম্যাগমা স্রোত ক্রমান্বয়ে ভূগর্ভ থেকে ভূপৃষ্ঠে উঠে আসে। জ্বালামুখ দিয়ে ভূপৃষ্ঠে নির্গত লাভা ক্রমশ শীতল ও কঠিন হয়ে আগ্নেয়গিরি বা আগ্নেয় পর্বতে পরিণত হয়।

ক্রমাগত লাভা নির্গমনের সূত্রে আগ্নেয়গিরির উচ্চতা ক্রমশ বৃদ্ধি পায় এবং আগ্নেয় পর্বতটি ক্রমশ শঙ্কুর মতো আকৃতি নেয়। অনেকক্ষেত্রেই পরবর্তী অগ্নুৎপাতের প্রবল বিস্ফোরণে আগ্নেয়গিরির শঙ্কুর মতো আকৃতি অনেকটা নষ্ট হয়ে যায়। তাই বেশির ভাগ আগ্নেয় পর্বতগুলো মাঝারি উচ্চতাবিশিষ্ট হয় এবং এদের ঢাল মাঝামাঝি রকমের হয়। অগ্নুৎপাতের সময় লাভা ছাড়াও আগ্নেয় ধূলিকণা
(Volcanic Dust), ছোটো বড়ো পাথরের টুকরো এবং সালফার ডাই-অক্সাইড (SO2), কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2), নাইট্রোজেন অক্সাইড (NO2) প্রভৃতি বিষাক্ত গ্যাস আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে।

অগ্নুৎপাতের বৈশিষ্ট্য অনুসারে আগ্নেয় পর্বতকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়।

আগ্নেয় পর্বতের বৈশিষ্ট্য:
অগ্নুৎপাতের সময় ভূগর্ভ থেকে উঠে আসা গলিত লাভা জমাট বেঁধে আগ্নেয় পর্বতের সৃষ্টি করে। সাধারণত আগ্নেয় পর্বতকে দেখতে অনেকটা ত্রিভুজ বা শঙ্কুর মতো হয়। আগ্নেয় পর্বতের শীর্ষদেশে এক বা একাধিক জ্বালামুখ নামে গহ্বর থাকে। এই জ্বালামুখের সাথে ভূগর্ভের ম্যাগমা গহ্বরের সঙ্গে যুক্ত থাকে। কখনও কখনও আগ্নেয় পর্বতগুলোতে লাভাস্তরের মধ্যে ছাই এবং প্রস্তরখণ্ড দেখা যায়। আগ্নেয় পর্বতের ঢাল ও উচ্চতা খুব বেশি হয় না ।

প্রধানত প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলভাগ এবং সমুদ্রের শৈলশিরার ওপর ভূত্বকের দুর্বল স্থানগুলোতে আগ্নেয় পর্বতের আধিক্য দেখা যায়। অনেক সময় আগ্নেয় পর্বতগুলো গভীর সমুদ্রতল থেকে সঞ্চিত হতে হতে দ্বীপের মতো সমুদ্রের ওপরে উঠে আসে। পরবর্তী অগ্নুৎপাতের প্রবল বিস্ফোরণে কোনো কোনো আগ্নেয় পর্বত অনেকাংশে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যায়। যেমন
ক্রাকাতোয়া আগ্নেয় পর্বতটি ১৯৯৩ সালে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

উদাহরণ: