পাত
সঞ্চালন (পৃথিবী)
Plate tectonics।
পৃথিবীর অশ্মমণ্ডল (lithosphere)
সঞ্চালনের বিশাল টুকরোর সঞ্চালনকে পাত সঞ্চালন বলা হয়। পৃথিবীর অভ্যন্তরে অবস্থিত
এই মণ্ডলটি
প্রায় ২০০ কিলোমিটার পুরু।
ভূত্বকের বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে মাটি। পৃথিবীর উপরের মাটি বা এই জাতীয় স্তর এবং এর
নিচের কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত ভিত্তির উপরিভাগ একত্রে অশ্মমণ্ডল বলা হয়। তারপরেও এই
মণ্ডলের উপরে একটি পাতলা স্তরকে ভূত্বক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অশ্মমণ্ডলের
নিচে
রয়েছে অত্যন্ত নমনীয় চটচটে পদার্থ সমৃদ্ধ
এ্যাস্থোনোস্ফিয়ার
(asthenosphere)।
এই অঞ্চলের উপর অশ্মমণ্ডলের কঠিন শিলা স্তর।
ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। পৃথিবীর ঘূর্ণনের
জন্য অশ্মমণ্ডল চলমান দশায় রয়েছে। বিশাল এই পাথরে স্তরটি বিভাজিত হয়ে বড় বড় খণ্ড
তৈরি করেছে। এই খণ্ডগুলোকে বলা হয় পাত (Plate)।
এই খণ্ডগুলো বৎসরে ১০-৪০ মিলিমিটার গতিতে অগ্রসর হয়। তবে একই গতিতে সকল পাত
সঞ্চালিত হয় না। ফলে
এই পাতগুলো কখনো কখনো পরস্পরের সাথে
ঠোকাঠুকি করে, আর এর ফলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। কখনো কখনো দুটি পাতের আলগা অংশ থেকে
বেরিয়ে আসে ভূ-অভ্যন্তরের গলিত অংশ লাভা হয়ে। তৈরি হয় পাহাড় কিম্বা নিচু ভূমি।
পাতগুলোর সংঘাতকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। ভাগগুলো হলো-
১. সঞ্চারণ (Transform) সংঘাত : এই জাতীয় সংঘাতে ভূত্বকে তেমন ব্যাপক কোনো পরিবর্তন ঘটে না। এই সংঘাতে পাহাড়, সাগর ইত্যাদির মতো কোনো উপকরণ তৈরি হয় না বা ধ্বংসও হয় না। মূলত ধাক্কাধাক্কি করে দুটোপাত নিজ নিজ অবস্থান ঠিক করে নেয়। ভিড়ের ভিতরে যেমটা ঠেলাঠলি করে লোকে জায়গা করে নেয়। তবে এর ফলে ভূকম্পনের সৃষ্টি হয়।
২. অভিসারী (Divergent) সংঘাত: যখন দুইটি পাত পরস্পরকে প্রচণ্ড শক্তিতে ধাক্কা দেয়, তখন একটি পাত অন্য পাতের উপর উঠে যায়। এর ফলে নিচের পাতের প্রান্তীয় অংশ নিচের ম্যাগমা স্তরে ডুবে যায়। কিন্তুর ম্যাগমার প্রবল চাপ উপরের পাতকে আরো উত্থিত করে। এই প্রক্রিয়া নতুন পাহাড় তৈরি হয়। ইন্দো-অস্ট্রেলীয় পাতের সাথে ইউরেশীয় পাতের সংঘর্ষে হিমালয় পর্বতের সৃষ্টি হয়েছিল। পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত এবং মারিয়ান পাতের অভিসারী চলনে সৃষ্টি হয়েছে, পৃথিবীর গভীরতম খাদ মারিয়ানা ভূখাদ।
৩. অপসরণশীল (Convergent) সংঘাত: এই প্রক্রিয়া দুটি পাতের সংঘর্ষ হলে, পাত দুটো পরস্পর থেকে দুরে সরে যায়। এর ফলে দুটি পাতের ভিতরে বড় ধরনে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়। এই ফাঁকা জায়গা পূরণ করে, নিচের গলিত ম্যাগমা। অনেক সময় ম্যাগমার প্রবল চাপে ওই ফাঁকা জায়গায় আগ্নেয় পর্বতের সৃষ্টি হয়। আগ্নেয় পরবতের উপরভাগ জমে গিয়ে একসময় অগ্ন্যুৎপাত বন্ধ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ভূমিকম্প তৈরি হয়। এছাড়া সাগর তলে এই ধরনের ঘটনায় সুনামির সৃষ্টি হয়।
বর্তমানে পাতগুলোকে ৭টি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো−
উত্তর আমেরিকান পাত: এই পাতের উপরে রয়েছে উত্তর আমেরিকা, গ্রিনল্যান্ড, কিউবা, বাহামা দ্বীপপুঞ্জ, রাশিয়ার উত্তরাঞ্চল, আইসল্যান্ড, পর্তুগালের অংশবিশেষ।
ইউরেশিয়ান পাত: ইউরোপ ও এশিয়ার বিশাল অংশ নিয়ে গঠিত এই পাত। এই পাতের বাইরে রয়ে গেছে, ভারতীয় পাত, আরব উপদ্বীপের পাত, পূর্ব সাইবেরিয়ার কিছু অংশ।
ইন্দো-অস্ট্রেলীয় পাত: এই পাতের
উপরে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া এবং তৎসংলগ্ন মহাসাগর। এর উত্তর-পূর্বে রয়েছে ভারত
উপমহাদেশ এবং তৎসংলগ্ন জলরাশি। বিজ্ঞানীদের অনুমান ইন্দো-অস্ট্রেলীয়
পাতের সঙ্গে ইউরেশিয়ার সংঘাতের ফলে হিমালয় তৈরি হয়েছিল
এই পাত ক্রমান্বয়ে ভেঙে যাচ্ছে।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত (Pacific Plate): প্রশান্ত মহাসাগর ও এর বুকে জেগে থাকা দ্বীপসমুহ।
অন্যান্য পাতসমূহ
ভারতীয় পাত: এই পাতের উপরে রয়েছে ভারত উপমহাদেশ এবং তৎসংলগ্ন সাগর।
ফিলিপিনীয় পাত: ফিলিপাইন এবং তৎসংলগ্ন সাগরের তলদেশ।
ওখোৎস্কো পাত: ওখোৎস্কো সাগর, কাম্চাৎকা উপসাগর, শাখালিন দ্বীপ, জাপানের তোহোকু ও হোক্কাইদো।
আমুরাইন পাত: মাঞ্চুরিয়া, কোরিয়ান উপসাগর, পশ্চিম জাপান, রাশিয়ার প্রিমোস্কি ক্রাই অঞ্চল।
ওকিনাওয়া পাত (Okinawa Plate): তাইওয়ান থেকে কিয়ুশু দ্বীপ।
বার্ডস হেড পাত (Bird's Head Plate): নিউ গিনির দ্বীপের পশ্চিম প্রান্তীয় অঞ্চল
আফ্রকান, এন্টার্কটিক, ইউরেশিয়ান, উত্তর আমেরিকান, দক্ষিণ আমেরিকান, প্রশান্ত মহাসগরীয় এবং ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান। বর্তমানে ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান পাতকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এই ভাগ দুটি হলো ভারতীয় পাত এবং অস্ট্রেলিয়ান পাত। এছাড়া রয়েছে বেশ কিছু অপ্রধান পাত। এগুলো হলো আরব্য পাত, ক্যারিবীয় পাত, জুয়ান দে ফুকা পাত, কোকাস পাত, নাজকা পাত, ফিলিপিনীয় পাত, স্কোশিয়া পাত।