সুনামি
জাপানি 津波 (ৎসুনামি, পোতাশ্রয়ের ঢেউ)>ইংরেজি Tsunami>বাংলা সুনামি।
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা {| তরঙ্গ | সচলন | ঘটনা | ঘটিত বিষয় | মনস্তাত্ত্বিক বিষয় | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্ত | সত্তা |}

জাপানি ভাষায় যে কোনো কারণে সৃষ্ট বিপুলাকারের জলোচ্ছ্বাসের সাধারণ নাম হলো ৎসুনামি (বাংলা বানানে সুনামি)। বর্তমানে প্রাকৃতিক বিপর্যয় সৃষ্টিকারী জলোচ্ছ্বাসের পারিভাষিক নাম হিসেবে সুনাম ব্যবহার করা হয়। ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির আকস্মিক অগ্ন্যুৎপাদের কারণে, যখন কোনো বিশাল আকারের জলাশয়ে জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয় এবং তা বহুদূর পর্যন্ত প্রবাহিত হয় উপকূলীয় ভূভাগকে প্লাবিত করে তখন তাকে সুনামি বলা হয়। ঘূর্ণিঝড়ের (সাইক্লোন, হারিকেন, টাইফুন) কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসকে সুনামি বলা হয় না। সাধারণত মহাসাগর, সাগর বা উপসাগরে সৃষ্ট এই জাতীয় জলোচ্ছ্বাস বেশি দেখা যায়। তবে বড় বড় নদী বা হ্রদেও সুনামি হতে পারে। কোনো বিপুল আকারের জলাশয়ের উপকূলীয় অঞ্চল বা জলাশয়ের তলদেশে অগ্ন্যুৎপাত হলে বা বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে, জলাশয়ের পানি আন্দোলিত হয় বিশাল আকারের ঢেউয়ের সৃষ্টি করে। এই বিশাল আকারের পাহাড়তুল্য ঢেউ জলাশয়ের উপরিভাগকে আন্দোলিত করে বহুদূর পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে উপকূলীয় ভূভাগে আঘাত হানার পর, সুনামির সমাপ্তি ঘটে।

সুনামির কারণসমূহ

সুনামির ঢেউয়ের প্রকৃতি
সুনামির ক্ষেত্রে সাধারণ কম্পনজাত তাড়নঢেউ উৎপন্ন হয় এবং তা উৎপত্তিস্থল থেকে এক বা একাধিক ঢেউয়ের সৃষ্টি করে চারিদিকে সমান মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে। সমুদ্রের ক্ষেত্রে উত্থিত ঢেউ নিকটবর্তি ভূভাগের দিকে ধাবিত হয়ে আঘাত হানে। সুনামির উৎপত্তিস্থল থেকে উপকূল বহু দূরে থাকলে, উৎপন্ন ঢেউ বিশাল জলক্ষেত্রের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হতে হতে দূর্বল হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে ভূভাগে সুনামির আঘাত তীব্র্তর হয় না। অনেক সময় মহাসাগরের সুগভীর অঞ্চলে সৃষ্ট ভূকম্পন বা ভূত্বকের স্থানচ্যুতির কারণে সৃষ্ট সুনামি সাগরের উপরিতলে আলোড়ন তুলতে পারে না। সমুদ্রের গভীরে যে পানির বিপুল চাপ থাকে, তা পানির আন্দোলনকে স্তিমিত করে দেয়। ভূভাগে আঘাত হানার উপযোগী সুনামি তৈরি হয় স্থলভাগের নিকটবর্তী অপেক্ষাকৃত অগভীর পানিতে।  পানির গভীরতা কম থাকায় ঢেউ উৎপন্ন হয় সহজে।

২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ১১ মার্চ, জাপানে আঘাত হানা সুনামিতে প্রায় ১৬ হাজার লোক মারা যায়।

সাধারণভাবে সমুদ্রে বাতাসতাড়িত সামুদ্রিক ঢেউয়ের শীর্ষস্থান এবং পাদস্থানের মধ্যবর্তী দৈর্ঘ্য হয় বড় জোর ২ মিটার (৬ .৬ ফুট) আর তরঙ্গদৈর্ঘ্য হয় ১০০ মিটার (৩৩০ ফুট)। কিন্তু গভীর সমুদ্রের উৎপন্ন সুনামির ঢেউয়ের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য হতে পারে ২০০ কিলোমিটার (১২০ মাইল)। আর এই ঢেউ ৮০০ কিলোমিটার/ঘণ্টা (৫০০ মাইল/ঘণ্টা) বেগে ছুটে চলতে পারে। এই ঢেউয়ের উলম্ব দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ মিটার (১০০ ফুট) হতে পরে। সুনামির ঢেউ সাধারণত ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি হয়ে থাকে। ঢেউয়ের একটি চূড়া থেকে আরেকটি ঢেউয়ের চূঁড়ার দূরত্ব ১০০ মাইলের (১৬০ কিমি) মতো হতে পারে। এক্ষেত্রে কোনো ভূভাগে প্রথম বড় ঢেউ আঘাত করার মোটামুটি ১ ঘন্টা বা সামান্য বেশি সময় পর দ্বিতীয় ঢেউটি আঘাত হানে। দ্বিতীয় ঢেউটি অপেক্ষাকৃত দুর্বল হয়। এই উৎপন্ন ঢেউসমূহ ক্রমাগত ভূভাগে আঘাত হানতে হানতে দুর্বল হতে থাকে। যদি পুনরায় সুনামি ঘটার মতো নতুন কোনো কারণ না ঘটে, তবে ৪-৫ ঘণ্টা পর সমুদ্রে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।


সূত্র :
http://www.tsunami.noaa.gov/
http://en.wikipedia.org/wiki/Tsunami