জলপ্রপাত
ইংরেজি waterfalls

ি প্রকৃষ্ঠরূপে পতন। ভূবিজ্ঞানে এর অর্থ ব্যাপক। কোনো উচ্চ স্থান থেকে উলম্ব বা আংশিক উলম্বভাবে নদী বা ঝর্নার পানি অবরিত পতিত হতে থাকলে, তাকে জলপ্রপাত বলা হয়।

পাহাড়ি এলাকায় ঝর্নার জলপ্রপাত প্রায়ই দেখা যায়। কিন্তু একে সাধারণভাবে ঝর্না বলা হয়। এই রকম অজস্র ঝর্নার সমন্বয়ে সৃষ্ট বিপুল জলপ্রবাহ পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে ক্রমান্বয়ে নিচু ভূমির দিকে অগ্রসর হয়। এরূপ কোনো নদী যখন কোনো উচ্চস্থান থেকে সবেগে উলম্বভাবে নিচু ভূমিতে পতিত হয়, তখনই জলপ্রপাত হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। অনেক সময়।

ভূবিজ্ঞানীরা জলপতনের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে জলপ্রপাতকে নানা ভাবে ভাগ করেছেন। যেমন

ব্লক জলপ্রপাত (Block waterfalls) : এই জাতীয় জলপ্রপাত অনেক বড় এলাকা ধরে পতিত হয়। এবং পতিত স্থানে পানি চাদরের মতো বিস্তৃত নিচের দিকে নেমে আসে। যেমন- নায়েগ্রা জলপ্রপাত

সোপান জলপ্রপাত (Cascade waterfalls) : এই জলপ্রপাতের জল যখন কোনো উচ্চভূমি থেকে ধাপে ধাপে সবেগে নেম আসে। তখন তাকে সোপান জলপ্রপাত বলা হয়। যেমন-
Ouzoud Falls, Morocco

পংক্তি জলপ্রপাত (Tiered waterfalls) : এই জলপ্রপাতের জল ধাপে ধাপে উচ্চভূমির গা বেয়ে নেমে আসে। কিন্তু এর ধাপগুলো সোপান জলপ্রপাতের মতো অতটা স্পষ্ট নয়। অনেকসময় পংক্তি এবং সোপান জলপ্রপাতের মধ্যে পার্থক্য নিরুপণ করা মুশকিল হয়ে পড়ে। অনেক সময় একই জলপ্রপাতে উভয় ধরনের জলপ্রপাত দেখা যায়।

নিমগ্ন জলপ্রপাত (Plunge waterfalls) : এই জাতীয় জলপ্রপাত উচ্চ স্থান থেকে নেমে এসে সরসারি নিচের ভূমিতে পতিত হওয়ার পরিবর্তে কোনো জলাশয়ে বিলীন হয়ে যায়। এক্ষেত্রে অবিরত জলপতনের কারণেই এই জলাশয়ের সৃষ্টি হয়। ফলে জলপতন স্থানে সব সময় পুকুরের মতো বড় অংশে পানি জমে থাকে। যেমন আরিজোনার হাভাসু জলপ্রপাত (Havasu Falls)। যে সকল জলপ্রপাতের পতনের স্থান পাথর বা পাথরের মতো কঠিন শিলায় না হয়ে অপেক্ষাকৃত নরম ভূমি হয়, বা জলপ্রপাতের স্থানের চারদিকে সামান্য উঁচু ভূমি বা পাথর থাকে, সেখানে জলবদ্ধতার কারণে নিমগ্ন জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়।

মিশ্রণাধার
জলপ্রপাত (Punchbowl waterfalls) : এই জাতীয় জলপ্রপাতের জল কোনো ছোটো একটি জলাশয় সৃষ্টি করে এবং সেখানে জলপ্রপাতের পানি অল্প উচ্চতা থেকে পতিত হয়ে মিশে যায়। এই বিচারে একে নিমগ্ন জলপ্রপাতের ক্ষুদ্র সংস্করণ বলা যেতে পারে। যেমন- নিউজিল্যান্ডের তাওহাই জলপ্রপাত (Tawhai Falls)।

অশ্বপুচ্ছ জলপ্রপাত (Horsetail Waterfalls): এই জলপ্রপাতকে দেখে ঘোড়ার লেজের মতো মনে হয়। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য সবেগে একটি প্রধান ধারায় কোনো স্থলভূমির উপর পতিত হয়ে, দ্রুত পানি সরে যায়। যেমন- ক্যালোফোর্নি্য়ার  নেভাদা জলপ্রপাত (Nevada Fall)

পেখম
জলপ্রপাত (Fan Waterfalls): এই জলপ্রপাতের পানি চারিদক বিস্তৃত হয়ে সবেগে কোনো ভূমির উপর আছড়ে পড়ে। যেমন নিউজিল্যান্ডের ফানটেইল জলপ্রপাত (Fantail Falls)।

খণ্ডিত জলপ্রপাত (
Segmented Waterfalls): কোনো বিশেষ জল প্রবাহ জলপ্রপাত হয়ে পতিত হওয়ার আগে, কোনো উচ্চ ভূমি বা পাথর দ্বারা বিভাজিত হয়ে খণ্ড খণ্ড হয়ে পতিত হয়, তখন তাকে সাধারণভাবে খণ্ডিত জলপ্রপাত বলে। এক্ষেত্রে খণ্ডগুলো পতনের সময় একত্রিত হয় না। যেমন আইসল্যান্ডের গ্লান্নি জলপ্রপাত (Glanni)। খণ্ডিত জলপ্রপাত পতনের সময়, এর কোনো অংশ অশ্বপুচ্ছ বা কোনো অংশ সোপান জলপ্রপাত হিসাবে পতিত হতে পারে।

সঙ্কীর্ণ জলপ্রপাত (Chute Waterfalls): কোনো সঙ্কীর্ণ পথে যখন জল প্রবাহ প্রবল বেগে উলম্ব বা আংশিক উলম্বভাবে পতিত হয়ে তীব্র গর্জন ও চাপের সৃষ্ট করে, তখন তাকে সঙ্কীর্ণ জলপ্রপাত বলা হয়। এই জাতীয় জলপ্রপাতে খুব উঁচু স্থান থেকে পতিত না হলেও, জলপ্রবাহের তীব্রতার জন্য প্রচুর জলীয়বাষ্প তৈরি করে।


সূত্র :
http://www.world-of-waterfalls.com/featured-articles-waterfalls-101-what-types-of-waterfalls-are-there.html

http://en.wikipedia.org/wiki/Waterfall