ভাব-বিশেষণ
বিশেষণ পদের দুটি প্রধান প্রকরণের একটি। যে সকল শব্দ বিশেষ্য ও সর্বনাম ব্যতীত অন্যপদগুলোকে বা বাক্যকে বা উভয়ের অর্থকে বিশেষিত করে, তাদেরকে ভাব-বিশেষণ। এখানে অন্যপদগুলো হলো- বিশেষণ, ক্রিয়া ও অব্যয়। বাক্যের ক্ষেত্রে হতে পারে- বাক্যাংশ বা একটি পুরো বাক্য। এছাড়া উদ্দেশ্য-বিধেয়-এর বিচারে ভাব বিশেষণের সৃষ্টি হতে পারে। এই বিচারে ভাব-বিশেষণ ৬ প্রকার। যেমন-
১. ক্রিয়া-বিশেষণ : যে শব্দ ক্রিয়ার ভাব, কাল ও রূপ নির্দেশ করে, তাকে ক্রিয়া-বিশেষণ বলা হয়। যেমন-
অবিলম্বে ফিরে
এসো।
ক্রিয়া-বিশেষণ
বিভিন্নভাবে গঠিত হতে পারে।
যেমন-
১.১. বিভক্তিহীন শব্দযোগে :
ভাবজ্ঞাপক সে অবশ্য আসবে।
সময়জ্ঞাপক ক্রমাগত ভুল করো না।
স্থানবাচক
হেথা আর এসো না।
১.২. এ-বিভক্তি যোগে : সুখে থাকতে চাই।
পরিস্থিতি চরমে উঠেছে।
১.৩.
-পূর্বক,
-ভাবে
-রূপে,
-সহকারে,
সহিত,
সাথে দ্বারা সমাসবদ্ধ
করে এই জাতীয় ক্রিয়া-
বিশেষণ তৈরি হয়।
যেমন-
যত্নপূর্বক কাজটি করো।
এরূপ-
ভালোভাবে,
ভালোরূপে,
মনোযোগ-সহকারে,
আদবের সহিত,
আদবের
সাথে।
এছাড়া একটি শব্দের ভাব অন্য শব্দের যুক্ত হয়ে যদি পরের কোনো
শব্দকে বিশেষিত করে তখনও ক্রিয়া-বিশেষণ হয়। এই জাতীয় শব্দের শেষে এ প্রত্যয় যুক্ত
হয়। যেমন- অকুণ্ঠপ্রাণে। এখানে অকুণ্ঠ শব্দটি প্রাণ শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে তৈরি হয়
তৈরি হয় অকুণ্ঠপ্রাণ। এই শব্দের সাথে এ যুক্ত হয়ে তৈরি হয় অকুণ্ঠপ্রাণে। এই জাতীয়
শব্দ হতে পারে—
অকপটচিত্তে,
অকপটমনে,
অকুণ্ঠচিত্তে,
অকুণ্ঠপ্রাণে,
অকুণ্ঠমনে,
অকুণ্ঠহৃদয়ে,
অকুণ্ঠিতচিত্তে,
অকুণ্ঠিতপ্রাণে,
অকুণ্ঠিতমনে,
অকুণ্ঠিতহৃদয়ে,
উদারচিত্তে,
উদারহৃদয়ে,
সরলচিত্তে,
সরলমনে,
সরলহৃদয়ে।
১.৪. তঃ, থা, ধা, শ, বত্, মত, মতন প্রত্যয়ান্ত শব্দ বিশেষণ হয়।
তঃ
সম্ভবতঃ তিনি আসবেন।
ধা
জলস্রোতটি শতধায় বিভক্ত।
শ
ক্রমশ বিষয়টি পরিষ্কার হলো।
ত্র
ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান।
মত ঠিকমত
কাজ করো।
মতন ঠিকমতন
কাজ করো।
করে
অসমাপিকা ক্রিয়াপদ যোগে:
ভালো করে জেনে আস।
মাত্র
যোগে:
ট্রেনটি চলামাত্র সে ঘুমিয়ে পড়লো
শব্দ
দ্বৈতে:
ধীরে ধীরে সাপটি চলে গেল।
২. বিশেষণীয় বিশেষণ : যে শব্দ বিশেষণ বা ক্রিয়া-বিশেষণকে বিশেষিত করে। তাকে বিশেষণীয় বিশেষণ বলা হয়। যেমন- সামান্য একটু পানি দিও।
৩. অব্যয়-বিশেষণ : যে শব্দ অব্যয়কে বা অব্যয়ের ভাবকে বিশেষিত করে, তাকে অব্যয়-বিশেষণ বলা হয়। যেমন-শত ধিক নির্লজ যে জন।
৪. নির্ধারক বিশেষণ : দ্বিরুক্ত শব্দ যখন আধিক্য বা অল্পত্ব প্রকাশকে নির্দেশিত করে, তখন তাকে নির্ধারক বিশেষণ বলা হয়। যেমন-
ছোট ছোট মাছ
বড় বড় পুকুর
৫. ধ্বন্যাত্মক বিশেষণ : কিছু কিছু শব্দ দুইবার উচ্চারিত হয়ে ধ্বন্যাত্মক ধ্বনির সৃষ্টি করে এবং তা বিশেষ্যকে বিশেষিত করে। এই জাতীয় শব্দকে ধ্বন্যাত্মক বিশেষণ বলা হবে। যেমন- কলকল ধ্বনি, ছলছল চোখ।
৬. বাক্যের বিশেষণ : যখন কোন পদ একটি পুরো বাক্যকে বিশেষিত করে, তখন তাকে বাক্যের বিশেষণ বলা হয়। যেমন- বাস্তবিকই এটা একটা কঠিন কাজ।
চ।
বিধেয়-বিশেষণ
: বাক্যের বিধেয় অংশে
অবস্থিত বিশেষণকে বলা হয় বিধেয়-বিশেষণ।
ছেলেটি ভালো
বটে।
এখানে ছেলেটি উদ্দেশ্য এবং ভালো বটে। এই বিচারে ভালো বিধেয়-বিশেষণ।
শব্দ সংখ্যার
বিচারে বিশেষণের গঠনরীতি
কয়টি শব্দের
দ্বারা একটি বিশেষণ তৈরি হতে পারে,
তার উপর ভিত্তি করে
বিশেষণকে দুটি ভাগ ভাগ করা যায়।
যেমন-
১।
এক পদময় বিশেষণ
মৌলিক বিশেষণ (একটির
বেশি শব্দ দিয়ে তৈরি নয়) :
ছোট মাছ অল্প পানিতে লাফায়
বেশি।
কৃদন্ত প্রত্যয় দ্বারা তৈরি বিশেষণ
:
চলন্ত বাস থেকে লাফিয়ে নামলেন।
তদ্ধিত প্রত্যয় দ্বারা তৈরি বিশেষণ
:
শক্তিমান পুরুষ।
বিভক্তি যুক্ত বিশেষণ
:
ঘাটের মরা।
উপসর্গযুক্ত বিশেষণ : প্রখর রৌদ্র। (প্র উপসর্গ যোগে প্রখর। )
২। বহুপদী বিশেষণ : একাধিক পদ দ্বারা গঠিত বিশেষণ। এক্ষেত্রে পদগুলো পৃথকভাবে থাকতে পারে, কিম্বা সমাস বা সন্ধিযোগে যুক্ত অবস্থায় থাকতে পারে।
পদ
পৃথক অবস্থায় : দশ দিনের পথ।
সন্ধি বা সমাস-সিদ্ধ
অবস্থায় :
ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ,
চায় দুটো ভাত একটু নুন।