বহুবাজার
বঙ্গনাট্যালয়
খ্রিষ্টীয় ঊনবিংশ শতাব্দীর একটি নাট্যশালা।
১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার বহুবাজার অঞ্চলে
'বহুবাজার নাট্যালয়'-এর প্রাথমিক পর্যায়ের নাট্য স্থাপিত হয়েছিল। এর প্রধান
উদ্যোগী ছিলেন বলদেব ধর ও চুনিলাল বসু। এঁদের উৎসাহ ও প্রেরণায় এবং
স্থানীয় যুবকবৃন্দের চেষ্টায়
বহুবাজারের ২৫নং বাঞ্চারাম অক্রুরের গলির
গোবিন্দচন্দ্র সরকারের বাড়িতে প্রথমে অস্থায়ীভাবে একটি মঞ্চ তৈরি হয়েছিল। এই রঙ্গমঞ্চের প্রধান উপদেষ্টা
ছিলেন মধ্যস্থ পত্রিকার সম্পাদক ও নাট্যকার
মনোমোহন বসু
।
এই নাট্যশালায়
নাট্যাভিনয় শুরু হয়, ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩ অক্টোবর। নাটকটি
ছিল
মনোমোহন বসুর
রামাভিষেক। দৃশ্য পরিকল্পনা, পোশাক ও সাজসজ্জা
প্রশংসিত হয়েছিল। নাট্যাভিনয় খুব উচ্চমানের হয়েছিল। 'রামাভিষেক' নাটকের
উল্লেখযোগ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন দশরথ
(অম্বিকা বন্দ্যোপাধ্যায়), রাম
(উমাচরণ ঘোষ), লক্ষ্মণ
(বলদেব ধর)।
বিদুষক (মতিলাল বসু), কৌশল্যা
(চুনিলাল বসু) সুমিত্রা (চন্দ্র মুখোপাধ্যায়),
সীতা (আশুতোষ চত্রুবর্তী) এবং মন্থরা
(ক্ষেত্রমোহন দে)।
১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে বহুবাজারের ধনাবান
ব্যক্তিদের চেষ্টায় ও অর্থে ২৫ নং মতিলাল লেনে
বহুবাজার নাট্যাসমাজের স্থায়ী নাট্যশালা তৈরি হয় গোবিন্দ
চন্দ্র সরকারের বাড়িতে। এই নতুন নির্মিত
স্থায়ীমঞ্চের নাম রাখা হয় বহুবাজার বঙ্গনাট্যালয়।
এর স্বত্বাধিকারী ছিলেন নীলকমল মিত্র এবং অপর কয়েকজন
ধনবান ব্যক্তি। পরিচালকমণ্ডলীর সম্পাদক ছিলেন
প্রতাপচন্দ্র বন্দ্যোপাধায়।
এই নতুন রঙ্গমঞ্চে প্রথম অভিনীত হয়
মনোমোহন বসুর
'সতী' নাটক। ১৮৭৪
খ্রিষ্টাব্দের ৩, ১০ বা ১৭ জানুয়ারি (৩ কিংবা ১০
জানুয়ারি, শনিবার। এই নাটক দেখার
জন্য, ভিজিয়ানা গ্রামের মহারাজা, নাটোরের রাজা
চন্দ্রনাথ রায় এবং পাকুড়ের রাজা উপস্থিত ছিলেন।এই মঞ্চে
এই নাটকটি ১৮৭৪-এর ৪ঠা এপ্রিল
পর্যন্ত প্রতি শনিবার অভিনীত হয়েছিল। এই নাটকে যাঁরা
অভিনয় করেছিলেন, তাঁর হলেন চুনিলাল বসু (শিব ও
দক্ষ), প্রতাপচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
(নারদ), বলদেব ধর
(নগরপাল)। আশুতোষ চক্রবর্তী (সতী),
চন্দ্র মুখোপাধ্যায় (অশ্বিনী),
মেনকা ও নটী (নন্দ
ঘোষ)।
১৮৭৫ খিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে
মঞ্চস্থ হয়েছিল মনোমোহন বসুর
'হরিশ্চন্দ্র'। এই নাটকে যাঁরা অভিনয় করেছিলেন, তাঁরা
হলেন- চুনিলাল বসু (হরিশচন্দ্র),
ননীলাল দাস (রোহিতাশ্ব),
প্রতাপচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (বিশ্বামিত্র),
বলদেব ধর (নগরপাল)।
অবিনাশচন্দ্র ঘোষ (শৈব্যা)।
বিহারী
ধর (কমলা), নন্দ ঘোষ
(মল্লিকা)।
এই নাট্যমঞ্চটি ছিল মূলত অপেশাদারী সখের নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য।
দর্শকদের জন্য টিকিট ছিল না। তবে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে নাটক দেখার জন্য
আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হতো। ফলে এই মঞ্চটি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে
গিয়েছিল।
সূত্র:
- বঙ্গীয় নাট্যশঠালার
ইতিহাস। ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ মন্দির, ১৩৪৬
-
বাংলা থিয়েটারের গান। শ্রীরাজ্যেশ্বর মিত্র। ইন্দিরা সংগীত-শিক্ষায়তন।
১৯৮২।
-
বাংলা থিয়েটারের
ইতিহাস।
দর্শন চৌধুরী।
পুস্তক বিপনী।
জানুয়ারি
১৯৯৫।
-
বাংলা থিয়েটারের পূর্বাপর। নৃপেন্দ্র সাহা। তূণ প্রকাশ। ১৯৯৯।
-
বাংলা নাটকের বিবর্তন। সুরেশচন্দ্র মৈত্র। মুক্তধারা। ১৯৭১