নাট্যভারতী
(১৯৩৯-১৯৪৩) খ্রিষ্টাব্দ
একটি বিংশ শতাব্দীর একটি নাট্যমঞ্চ
১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে রঘুনাথ মল্লিক
কলকাতার হ্যারিসন রোডে (বর্তমান মহাত্মা গান্ধী রোড), কলেজ সিটি মার্কেটের পাশের সিনেমা হলটিকে
বর্তমান (গ্রেস সিনেমা) ভাড়া নিয়ে
একটি নতুন রঙ্গালয় তৈরি করেন।
এই মঞ্চটি
উদ্বোধন হয়েছিল ১৯৩৯
খ্রিষ্টাব্দের ৫ আগস্ট। প্রথম নাটক শচীন সেনগুপ্তের
নাটক 'তটিনীর বিচার'। এরপর কয়েক রাত্রি কিছু পুরানো নাটক অভিনীত হয়। এরপর
১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৯শে অক্টোবর (বৃহস্পতিবার ২ কার্তিক ১৩৪৬)
নজরুল ইসলামের 'মধুমালা' নামে নৃত্যগীতবহুল নাটক
অভিনীত হয়। এরপর
২৩ ডিসেম্বর অভিনীত হয় শচীন সেনগুপ্তের 'সংগ্রাম ও
শাস্তি'।
১৯৪০-৪১ খ্রিষ্টাব্দ নতুন পুরাতন মিলিয়ে বেশ কয়েকটি নাটক মঞ্চস্থ হয়। এর ভিতরে নতুন
টকা ছিল
- নার্সিং হোম।
রচনা শচীন সেনগুপ্ত। ১৩ জুন, ১৯৪০
- সিঁথির সিঁদুর। রচনা জলধর চট্টোপাধ্যায়। ২৪ আগস্ট,
১৯৪০
- পি-ডবলু-ডি। রচনা জলধর চট্টোপাধ্যায়।
১ অক্টোবর, ১৯৪০
- কালিন্দী। রচনা তারাশঙ্কর
বন্দ্যোপাধ্যা। ১২ জুলাই, ১৯৪১। এই নাটকের জন্য
সঙ্গীত রচনা করেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম।
- প্লাবন। রচনা মনোজ বসু।
২৪ জুলাই, ১৯৪১।
১৯৪২-এর জানুয়ারি মাসে নাট্যভারতীর মালিক রঘুনাথ মল্লিক থিয়েটারের
মালিকানা মুরলীধর চট্টোপাধ্যায়ের কাছে হস্তান্তর করেন।
মুরলীধরের নেতৃত্বে থিয়েটার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন শিশির মল্লিক। এই সময়
থিয়েটার হলটিকে সংস্কার করা হয়। সেই সাথে বিধি-ব্যবস্থা এবং দর্শক-আসনগুলো
পরিবর্তন করা হয়।
এই বছরে সতুসেন নাট্যপরিচালক হিসেবে যোগদান করেছিলেন।
নতুন ব্যবস্থাপনায় এবং পরিচালনায় ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মে তারাশঙ্কর
বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটক 'দুইপুরুষ' অভিনীত হয়েছিল। এই নাটকটি বেশ
দর্শকনন্দিত হয়েছিল। এরপর তারাশঙ্করের 'পথের ডাক',
শরংচন্দ্রে 'দেবদাস' উপন্যাসের নাট্যরূপ মঞ্চস্থ করেছিল। নাট্যরূপ দিয়েছিলেন শচীন সেনগুপ্ত।
এরপর মঞ্চস্থ হয়েছিল শচীন সেনগুপ্তের 'ধাত্রীপান্না। এই নাটকটিও দর্শকনন্দিত
হয়েছিল।
এই নাটকগুলোর সাফল্যে নাট্য ভারতীর আর্থিক অবস্থা
ভালো অবস্থায় ছিল। তারপরেই অজ্ঞাত কারণে মালিক মুরলীধর চট্টোপাধ্যায় থিয়েটার না চালানোর
সিদ্ধান্ত নেন। পরে চিরতরে এ্ই থিয়েটার বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থিয়েটার মঞ্চকে ভেঙে
ফেলে সিনেমা হলে রূপান্তর করা হয়। বর্তমান এর নাম গ্রেস সিনেমা।
সূত্র :
- বঙ্গীয় নাট্যশঠালার ইতিহাস। ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। বঙ্গীয়
সাহিত্য পরিষদ মন্দির, ১৩৪৬
- বাংলা থিয়েটারের ইতিহাস। দর্শন চৌধুরী। পুস্তক বিপনী কলকাতা ১৯৯৫।
- বাংলা থিয়েটারের পূর্বাপর। নৃপেন্দ্র সাহা। তূণ প্রকাশ। ১৯৯৯।
- বাংলা নাটকের ইতিবৃ্ত্ত। হেমেন্দ্র নাথ দাশগুপ্ত
- বাংলা নাটকের ইতিহাস। অজিতকুমার
ঘোষ
- বাংলা নাট্য সাহিত্যের ইতিহাস। আশুতোষ ভট্টাচার্য
- বাংলা নাট্যসাহিত্যের পূর্ব্ব-কথা। শ্রীশরচ্চন্দ্র ঘোষাল। নারায়ণ
[পৌষ ১৩২১ বঙ্গাব্দ]
- বাংলা নাটকের বিবর্তন। সুরেশচন্দ্র
মৈত্র। মুক্তধারা। ১৯৭১