খরোষ্ঠীলিপি
ভিন্ন নাম : গান্ধারীলিপি
ইংরেজি
:
Kharosthi Script

প্রাচীন ভারতীয় লিপি বিশেষ। ভারতে প্রাপ্ত সম্রাট
অশোকের শিলালিপিগুলোর ভিতরে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত মানসেহরা ও সাহবাজগঢ়ীর লিখাগুলো ছিল খরোষ্ঠীলিপিতে। এই লিপিকে সাধারণভাবে অশোকলিপির একটি বিভাগ বলা হয়। এই লিপি থেকে ধারণা করা হয় এই, সম্রাট অশোক তার রাজত্বকালে ভারতের উত্তর-পশ্চিমাংশে খরোষ্ঠীলিপি প্রচলিত ছিল। বর্তমান পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের আশেপাশে, বিশেষ করে গান্ধার অঞ্চলে এই লিপির বহু নিদর্শন পাওয়া যায়। এই কারণে অনেকে একে গান্ধারী লিপি (Gandhari script) বলে থাকেন। উল্লেখ্য প্রাচীন গান্ধারের অঞ্চল বলতে বুঝানো হতো আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যবর্তী অঞ্চলকে। অন্যভাবে গান্ধারকে চিহ্নিত করা হয় সিন্ধু ও খাইবার পাসের মধ্যবর্তী অঞ্চল। ললিত বিস্তার নামক গ্রন্থের লিপি-তালিকায় দ্বিতীয় সংখ্যক লিপি হিসাবে খরোষ্ঠীর উল্লেখ পাওয়া যায়।

এই লিপির উদ্ভব ঘটেছিল প্রাচীন আরামাইক বর্ণমালা
(Aramaic alphabet) থেকে। উল্লেখ্য আকামেনীয় রাজবংশের শাসনামলে সম্রাট সাইরাস দ্বিতীয় (Cyrus II) তাঁর রাজত্বকালে (খ্রিষ্ট-পূর্ব ৫৫৮-৫২৯ অব্দ) আফগানিস্তান এবং গান্ধার অঞ্চল দখল করে নেন। এর পরবর্তী কয়েকজন সম্রাট ভারতের দিকে আর মনোযোগ দেন নাই। এই সময় এই অঞ্চলের উপর আকামেনীয় রাজবংশের আধিপত্য ক্ষুণ্ণ হয়। এই বংশের তৃতীয় সম্রাট প্রথম দারিয়াস (Darius I) খ্রিষ্ট-পূর্ব ৫২১ অব্দে সিংহাসনে বসেন এবং খ্রিষ্ট-পূর্ব ৪৮৬ অব্দ পর্যন্ত এই রাজত্ব করেন। এই সময়ে ইনি গান্ধার এবং ভারতের পাঞ্জাব অঞ্চল দখল করে নেন। খ্রিষ্ট-পূর্ব ৩২৭ অব্দের দিকে আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের পূর্ব-কাল পর্যন্ত এই অঞ্চল পারস্যের অধিকারে ছিল।

দীর্ঘকাল পারস্যের অধীনে থাকার সময়, আফগানিস্তান, গান্ধার ও পাঞ্জাব অঞ্চলে আরামাইক লিপির চর্চা ছিল বলে অনুমান করা হয়। স্থানীয় ভাষার ধ্বনিগত বৈশিষ্ট্যের কারণে, স্থানীয় লিপিকারদের দ্বারা পরিবর্তিত হয়ে আরামাইক লিপি যে নতুন রূপ লাভ করে, তাকেই খরোষ্ঠী লিপি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
 

 ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রক্ষিত
হাদ্দা নগরীতে পাওয়া খরোষ্ঠী লিপি'র নমুনা

এই লিপিতে রচিত প্রাচীন বৌদ্ধ-সাহিত্যের কিছু নমুনা আবিষ্কৃত হয়েছে পশ্চিম খাইবার পাসের হাদ্দা (Hadda) নগরীতে। ১৯৯৪ সালে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে এই পাণ্ডুলিপিটি জমা দেওয়া হয়। ধারণা করা হয় এই পাণ্ডুলিপিটি রচিত হয়েছিল খ্রিষ্ট-পূর্ব প্রথম শতাব্দীর দিকে। বর্তমানে এই পাণ্ডুলিপিকেই খরোষ্ঠীলিপিতে লিখিত প্রাচীন গ্রন্থ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
 

 চীনের পশ্চিম তারিম বেসিনে (Tarim Basin) প্রাপ্ত কাগজে লিখিত যে খরোষ্টী লিপির নমুনা

খরোষ্ঠীলিপি ভারতবর্ষ থেকে চীনেও ছড়িয়ে পড়েছিল। খ্রিষ্ট-পূর্ব দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম শতাব্দীদে ভারতবর্ষ থেকে এই লিপি চীনে প্রবেশ করলেও চীন লিখন পদ্ধতিতে তার কোনো প্রভাব লক্ষ্য করা যায় না। চীনের পশ্চিম তারিম বেসিনে (Tarim Basin) প্রাপ্ত কাগজে লিখিত যে খরোষ্টী লিপির নমুনা পাওয়া যায়, ধারণা করা হয়, তা খ্রিষ্ট-পূর্ব দ্বিতীয়-পঞ্চম শতাব্দীর কোনো এক সময় দিকে লেখা হয়েছিল।

খরোষ্ঠীলিপি লিখা হতো ডান দিকে থেকে বাম দিক বরাবর। অর্থা একালের আরবি বা ফারসি ভাষার মতো করে। এই কারণে এই লিপিকে সেমেটিক লিপি শ্রেণীতে ধরা হয়ে থাকে।

ইউনিকোড ৪.১০ সংস্করণে খরোষ্ঠীলিপিকে গ্রহণ করা হয়েছে। এই লিপির মানসীমা
U+10A00—U+10A5F। নিচে ইউনিকোড তালিকা অনুসারে খরোষ্ঠীলিপির নমুনা দেখানো হল।
 

স্বরবর্ণ ও সময়জ্ঞাপক চিহ্ন

ব্যঞ্জনবর্ণ

বিরাম ও অন্যান্য চিহ্ন

অংক ও সংখ্যাবাচক চিহ্ন