আবুগিদা
ইংরেজি
Abugida
লিখন পদ্ধতির একটি প্রকরণ। বর্ণ এবং অক্ষরের সমন্বয়ে এই লিখন পদ্ধতি গড়ে উঠেছে। এই
কারণে একে অনেক সময় বর্ণাক্ষরিক পদ্ধতি (alphasyllabar
sytem)
বলা হয়। ১৯৯০
খ্রিষ্টাব্দে এই লিখন পদ্ধতির নামকরণ করেন Peter T. Daniels।
তিনি ইথিওপিয়ার
Ge'ez script-এর চারটি বর্ণ থেকে
এই শব্দটি গ্রহণ করেন। এই বর্ণ চারটি হলো ’ä bu gi da।
ভারতবর্ষের প্রায় সকল লিখন পদ্ধতিই এই রীতির। ভারতবর্ষের বাইরে রয়েছে -তিব্বতীয়,
সিংহলী, থাই খ্মের, বালি, জাভা, মায়ানমার, আফ্রিকার কতিপয় ভাষার লিখন পদ্ধতি এই
রীতির।
এই লিখন পদ্ধতি কতকগুলি সূত্র দ্বারা সিদ্ধ। যেমন‒
১. ভাষার প্রধান উচ্চারণযোগ্য সকল ধ্বনির
জন্য এককভাবে মৌলিক স্বরচিহ্ন, ব্যঞ্জনধ্বনির সাথে যুক্ত করার উপযোগী
স্বরচিহ্ন, ব্যঞ্জনচিহ্ন, রুদ্ধ ধ্বনির চিহ্ন থাকবে। যেমন-
আ =মৌলিক স্বরচিহ্ন
া = আ বর্ণের চিহ্ন যা শুধু
ব্যঞ্জনধ্বনির সাথে যুক্ত হওয়ার সময় ব্যবহৃত হয়।
ক্=মৌলিক ব্যঞ্জনবর্ণ
্= হসন্ত চিহ্ন যা, যা
ব্যঞ্জনধ্বনির মৌলিকত্ব রক্ষা করে এবং ধ্বনিকে রুদ্ধ করে দেয়।
২. প্রতিটি মৌলিকবর্ণ রুদ্ধ ধ্বনি হিসেবে
বিবেচিত হয়। মৌলিক ব্যঞ্জনধ্বনি কোনো স্বরধ্বনির সহায়তায় উচ্চারিত হয়। যেমন-
ক্=উচ্চারণের অযোগ্য।
ক্ +অ=ক [অ-সহযোগে উচ্চারিত হয়]
একইভাবে হতে পারে- কা, কু, কি, কী, কু,
কূ, কে, কৈ, কো কৌ।
এক্ষেত্রে কোনো ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে হসন্ত বা কোনো কার-চিহ্ন না থাকলে, উক্ত
বর্ণের সাথে কোনো স্বরবর্ণ পূর্ব নির্ধারিত রীতি অনুসারে বসে। যেমন‒
বাংলাতে হসন্ত ও কারচিহ্ন হীন ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে একটি পূর্বনির্ধারিত অ ধ্বনি
আছে এমনটিই ধরে নেওয়া হবে। অবশ্য উচ্চারেণের বিচারে বাংলার ধ্বনিতত্ত্ব অনুসারে
এই সহগ অ-এর উচ্চারণ 'অ' বা 'ও' হতে পারে। রোমান বর্ণমালায় যখন
klm লেখা হয়, তখন সব
মিলিয়ে তিনটি যুক্তবর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। কিন্তু বাংলা, হিন্দি উড়িয়া,
সংস্কৃত ইত্যাদি ভাষায় 'কলম' লিখলে প্রতিটি বর্ণ পৃথক
অক্ষর
(syllable)
হিসেবে বিবেচিত হবে। এই তিনটি বর্ণের সাথে সহগ-অ ধ্বনি যুক্ত হয়ে যুক্তধ্বনিকে
রোধ করবে। যদি ধ্বনিগুলিকে যুক্তধ্বনির বিচারে লিখতে হয়, তাহলে লিখতে হবে-
ক্ল্ম। এই পদ্ধতি অনেক সময় যুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির জন্য পৃথক যুক্তবর্ণ ব্যবহার
করা হয়ে থাকে।
৩. স্বরধ্বিনি সবসময়ে ব্যঞ্জনধ্বনির পরে
বসে ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণে বিশিষ্টতা প্রদান করে। কিন্তু লিখন পদ্ধতির বিচারে
স্বরচিহ্ন সবসময় ব্যঞ্জনধ্বনির পরে বসে না। অনেক ক্ষেত্রেই ব্যঞ্জনবর্ণের আগে,
উপরে বা নিচে বসে। বাংলাতে
ি, ে, ৈ, ব্যঞ্জনবর্ণের আগে বসে।
ু, ূ ব্যঞ্জনবর্ণের নিচে বসে।
ৌ বর্ণের 'ডান-বাম' উভয় দিকে বসে।
অবশ্য বাংলাতে স্বরচিহ্ন আরো কয়েক ভাবে বসে। দেবনাগরীতে একার বর্ণের মাথার উপরে
বসে।
৪. কোনো কোনো বর্ণমালায় অত্যাবশ্যকীয় কোনো স্বরধ্বনি না থাকলেও কার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য ভিন্নতর চিহ্ন দিয়ে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। যেমন- বাংলাতে এ্যা ধ্বনির জন্য কোনো স্বরচিহ্ন নাই। কিন্তু লেখার সুবিধার্থে ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে তা ব্যবহার করা হয়। যেমন- के।
৫. রুদ্ধ ও মুক্ত স্বরে উচ্চারণগত বৈশিষ্ট্য অনুসারে অক্ষর (syllable) নির্ধারিত হয়।