চিত্রলিপি
pictograph

ল্যাটিন pictus (চিত্র) graph/gram (লিখন)। এই দুটি শব্দের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয়েছে pictograph শব্দটি। এই লিখন পদ্ধতিতে ব্যবহৃত চিহ্ন বা চিত্রের মধ্য দিয়ে কোনো ধারণা বা তথ্য উদপস্থাপন করা হ। অনেক সময় এই চিত্র প্রতীকধর্মী হয়ে থাকে। লিখন পদ্ধতির বিচারে চিত্রলিপিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যখন পাথর খোদাই করে লেখা হয় তখন তাকে বলা হয় প্রস্তর খোদিত (petroglyphs)। আর যখন পাথরের উপরে রঙের সাহায্যে ছবি আঁকা হয় , তখন তাকে বলা হয় প্রস্তরচিত্র (petrograms)। প্রাগৈতিহাসিক যুগে চিত্রলিপিতে ব্যবহৃত হতো-পাখি, বৃ্ত্ত, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, পাতা, তীরধনুক ইত্যাদির মতো চিত্র।

কোনো বিষয়ের চিত্রময় রূপকে অর্থবোধক চিহ্ন হিসাবে ব্যবহৃত প্রতীককে চিত্রলিপি বলা হয়। এই লিখন পদ্ধতিতে প্রত্যক্ষভাবে বিষয়াবলীর ছবির ছাপ দেওয়া হতো, কিন্তু কালক্রমে এই চিত্রলিপি প্রতীকধর্মী লিপিতে পরিণত হয়েছিল। এই লিপি ব্যবহৃত হয়েছে সুমেরীয় লিপি
 

প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতায় ব্যবহৃত চিত্রলিপি। খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০- ২৮০০ অব্দ পর্যন্ত চিত্রলিপি প্রচলিত ছিল।

উরুক নগরে প্রাপ্ত চিত্রলিপি, খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ অব্দ

বাইবেলে সুমের অঞ্চলের নাম শিনার (Shinar) হিসেবে উল্লেখ আছে। ভৌগলিক দিক নির্দেশনায় এই অঞ্চল দক্ষিণ মেসোপোটেমিয়া নামে পরিচিত। আধুনিক হিসাবে এই অঞ্চল ছিল ইরাকের দক্ষিণ ব্যবিলনীয় অংশ। অবশ্য সুমেরিয়ানরা নিজেদেরকে স্যাগ-গিগা (Sag-giga) নামে নিজেদের পরিচয় দিত।

খ্রিষ্ট-পূর্ব ৫৩০০ বৎসর পূর্বে এই অঞ্চলে একটি উন্নত সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছিল এই অঞ্চলে। ইতিহাসে একে উবাইদ
(Ubaid) সভ্যতা নামে অভিহিত করা হয়। উন্নত পাথর-সভ্যতার জন্য এই সভ্যতা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০০ বৎসর এই অঞ্চলে নূতন সভ্যতার সূচনা হয়। সুমেরিয় নগর উরুক (uruk) –এর নামানুসারে এই সভ্যতাকে উরুক সভ্যতা বলা হয়। এই সভ্যতার মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ খ্রিষ্টপূর্ব ৩৪০০- ৩২০০ অব্দের ভিতরে এই অঞ্চলে লিখন পদ্ধতির উদ্ভব ঘটে।

 

গোড়ার দিকে এই প্রতীকধর্মী চিহ্নগুলিতে বক্র এবং সরল উভয় ধরনের রেখাই দেখা যায়। কিন্তু সুমের অঞ্চলের কাদার ফলকের উপর নলখাগড়ার কাঠি দিয়ে এই চিত্রলিপিগুলিকে প্রতীকাকারে আঁকার ফলে প্রতীকী এই চিহ্নগুলো কীলক বা খোঁটার মতো সরল রূপলাভ করেছিল। এই সকল লিপির বাম বা উপরের দিকে ত্রিভুজাকার চিহ্ন লক্ষ্য করা যায়। এরূপ গড়নের কারণে এই লিপিকে কীলকরূপ (Cuneiform) লিপি বলা হয়। কালক্রমে এই বর্ণ আক্কাডিয়ান (Akkadian), এলামাইট (Elamite), হুরিয়ান (Hurrian) ভাষার লিপি হিসাবে গৃহীত হয়েছিল।