অনিবদ্ধ গান
ভারতীয় রাগসঙ্গীতের প্রাচীনতম একটি
ধারা 'প্রবন্ধগান'-এর
একটি প্রকরণ বিশেষ।
খ্রিষ্টপূর্ব ২০০ অব্দের
ভিতরে, প্রাচীন
গান্ধর্ব গান নিবদ্ধ ও অনিবদ্ধ
রূপে বিকশিত হয়েছিল।
শারঙ্গদেব তাঁর
সঙ্গীতরত্নাকর গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণা করেছেন। তাঁর মতে- অনিবদ্ধ গান
ছিল এই গান রাগালাপের মতো।
এতে তালের ব্যবহার ছিল না। তবে অক্ষর, ছন্দ ও যতি এই গানে থাকত। এতে সরগম
ও তারানার মতো অর্থহীন ধ্বনি ব্যবহার করা হতো।
অনিবদ্ধ গানের চারটি ভাগ ছিল। এই ভাগগুলো হলো- রাগালাপ,
রূপকালাপ, আলপ্তি, ও স্বস্থান
- রাগালাপ:
রাগের দশটি লক্ষণ উপস্থাপনের দ্বারা রাগরূপকে প্রকাশ করা হতো। রাগালাপের
পূর্বে গায়ক বা বাদক রাগের ব্যখ্যা শোনাতেন। এই দশটি রূপ হলো-
- স্বরের বিচারে:
গ্রহস্বর, অংশস্বর, ন্যাসস্বর
- সপ্তকস্থান:
মন্দ্র, মধ্য, তার
- স্বরের সময় মান:
অল্পত্ব, বহুত্ব
- জাতি: ষাড়বত্ব,
ঔড়বত্ব
- রূপকালাপ:
বাণীবিহীন গান। রাগের ১০টি লক্ষণ-সহ, রাগের রূপদান করা হতো এই গানে। রূপকালাপে
রাগের বিভিন্ন রূপ প্রকাশ করা হতো। বিষয়টি ছিল একালের রাগবিস্তারের মতো। এই
আলাপ পাঁচটি ধাতুতে বিভক্ত করে পরপর গাওয়া হতো। এই ভাগগুলো ছিল- উদগ্রাহ,
মেলাপক, ধ্রুব, অন্তরা, ও আভোগ।
- আলপ্তি:
রাগের আলাপ অংশ। এই অংশে রাগের দশটি
প্রকাশ করার সাথে রাগের অন্য রাগের আবির্ভাব
ও তিরোধান উপস্থাপন করা হতো। রাগালাপ, রূপাকালপের পর আলপ্তি
প্রকাশ করা হতো।
- স্বস্থান:
রাগালাপ, রূপকালাপ ও আলপ্তির যে সকল সূত্র অনুসরণে পরিবেশিত হতো, তার মুখ্যবিষয়
এই অংশে দেখানো হতো।
মূলত রাগে ব্যবহারত স্বরগুলোর গুরুত্ব বা বোঝানোর জ্ন্য স্বস্থান প্রদর্শন করা
হতো। রাগালাপে চার ধরনের স্বরকে মুখ্য স্বরকে গুরুত্বসহকারে উপস্থাপন করা হতো।
এগুলো হলো- স্থায়ী স্বর, দ্বয়র্থ স্বর, দ্বিগুণ স্বর, অর্থস্থিত স্বর।
- স্থায়ী স্বর:
এটি মূলত ছিল রাগের ভিত্তি স্বর। এই স্বর থেকেই রাগ শুরু করা হত। এই
বিচারে এটি রাগের গ্রহস্বর ছিল। আবার এই স্বরকে বারবার উপস্থাপন করে রাগের
রূপ প্রকাশ করা হতো। এই বিচারে এই স্বর বাদী স্বরে পরিণত হত।
- দ্বয়র্ধ
স্বর: স্থায়ী স্বরের পরবর্তী চতুর্থ স্বরকে দ্বয়র্ধ স্বর বলা হতো।
গ্রহস্বরই যখন বাদীস্বর হিসেবে উপস্থাপন হতো, তখন চতুর্থ স্বর হয়ে যেতো
সমবাদী স্বর। এই বিচারে দ্বর্ধস্বর হতো-
- স্থায়ী
স, দ্বর্ধ ম
- স্থায়ী র,
দ্বর্ধ প
- স্থায়ী গ,
দ্বর্ধ ধ
- স্থায়ী ম,
দ্বর্ধ ন
- স্থায়ী প
দ্বর্থ র্স
- স্থায়ী ন,
দ্বর্ধ র্র বা র
- স্থায়ী ধ,
দ্বর্ধ রগ বা গ
- দ্বিগুণ
স্বর: স্থায়ী স্বরের পরবর্তী অষ্টম স্বর হতো দ্বিগুণ স্বর। যেমন-
- স্থায়ী
স, দ্বিগুণ
র্স
- স্থায়ী র,
দিগুণ র্র
- স্থায়ী গ,
দিগুণ র্গ
- অর্ধস্থিত
স্বর: দ্বয়র্ধ ও দ্বিগুণ
স্বরের স্বরের মধ্যবর্তী স্বরগুলো ছিল অর্ধস্থিত স্বর। যেমন স যদি স্থায়ী
স্বর হয়, তা হলে এর দ্বয়র্ধ স্বর ম এবং দ্বিগুণ স্বর র্স। এবার অর্ধস্থিত
স্বর হবে ম এবং র্স-এর মধ্যবর্তী স্বর। এক্ষেত্রে মধ্যবর্তী বা
অর্ধসইত স্বরগুলো হবে প ধ ও ন
সূত্র:
- সঙ্গীতরত্নাকর।
শার্ঙ্গদেব। অনুবাদ: সুরেশচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়। রবীন্দ্রভারতী বিশ্বদ্যালয়। ২২
শে শ্রাবণ ১৪০৮। প্রকীর্ণ অধ্যায়। পৃষ্ঠা: ১৩২।