হাফ-আখড়াই
ঊনবিংশ শতাব্দীতে বিকশিত আখড়াই গানের একটি বিবর্তিত ধারা। ১৮০৪
খ্রিষ্টাব্দে আখড়াই গানের নবতর রূপ দেন
নিধুবাবু। এই
নবতর আখড়াই গানের ধারা তিনি কলকাতায় প্রচলন করেন। পরবর্তী দুই দশক
ধরে এই নবতর আখড়াই গান প্রচলিত থাকলেও ক্রমে ক্রমে তা নিষ্প্রভ হয়ে যায়। নিধুবাবুর
বারধ্যক্যের কারণে এবং উপযুক্ত পরিচালকের অভাবে নবতর আখড়াই গান গৌরব হারনো শুরু
করে। এরই মধ্যে নিধুবাবুর প্রধান শিষ্য মোহনচাঁদ বসু
১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দে দাঁড়াকবি গানের গানের মতো
করে হাফ আখড়াই গানের সূচনা করেন।
উল্লেখ্য,
১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দে বড়বাজারের রামসেবক মল্লিকের বাড়িতে সর্বসাধারণের সামনে প্রথম
হাফ-আখড়াই গানের আসর বসেছিল।
এই গানে তিনি কবিগানের মতো উত্তর-প্রত্যুত্তর ও
সখীসংবাদ যুক্ত করেছিলেন। টপ্পা অঙ্গের আখড়াই গানে ছিল রাগের নানারূপ আলঙ্করিক
প্রয়োগ। হাফ আখড়াই গানের শিল্পীরা সেখান থেকে সরে এসে সরল সুরের গান বাঁধতেন। এই
গানে অন্তরা থাকত না। হাফ-আখড়াই গানের পদ রচিত হতো চিতেন, পরচিতেন, ফুকা,
ডবল ফুকা, মেলতা, মহড়া, খাদ, দ্বিতীয় ফুকা, দ্বিতীয় ডবল ফুকা, দ্বিতীয় মেলতা
ইত্যাদিত এই ধারাক্রমে। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে হাফ আখড়াই গান জনপ্রিয়তা
হারাতে থাকে এবং এক সময় বিলুপ্ত হয়ে যায়।
হাফ আখড়াইয়ের আসরে এক ধরনের প্রেমের গান পরিবেশন করা হতো। এর নাম ছিল খেউড়। এই গান
ছিল চটুল বাক্যে এবং অঙ্গভঙ্গীতে পরিবেশন করা হতো। কোনো কোনো কবিয়ালের গানে থাকতো
আদি রসাত্মক শব্দ এবং অঙ্গভঙ্গী।