ঋষভ
ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে স্বরসপ্তকের দ্বিতীয় স্বর। এর ব্যবহারিক নাম 'রে'। সামগানে এর নাম ছিল তৃতী্য়। লৌকিক নাম ঋষভ। চাতক-এর ধ্বনি থেকে এই স্বরের নাম গ্রহণ করা হয়েছিল। মতঙ্গমুনি তাঁর বৃহদ্দেশী গ্রন্থে স্বরে নামগুলোর উৎস হিসেবে কোহলের মত উদ্ধৃত করে বলেছেন-
ষড়জং বদতি ময়ুর ঋষভং চাতকো বদেৎ             
অজা বদতি গান্ধারং ক্রৌঞ্চো বদতি মধ্যমম॥
পুষ্পসাধারণে কালে কোকিল: পঞ্চমং বদেৎ।
সর্বদা চ তথা দেবি ! নিষাদং বদতি গজ।

[ বৃহদ্দেশী। ড: প্রদীপ কুমার ঘোষ দ্বারা সম্পাদিত। কলকাতা" রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ান মিউসিকোলজি, ১৯৮৬, ১০]
অর্থাৎ ময়ূর ষড়জ স্বর, চাতক ঋষভ স্বর, ছাগ গান্ধার স্বর, সারস মধ্যম স্বর, বসন্তকালে কোকিল পঞ্চম স্বর, বর্ষাকালে ভেক ধৈবত স্বর এবং হস্তি নিষাদ স্বর উচ্চারণ করে।
সামগানে ব্যবহৃত তিনটি স্বরস্থান (উদাত্ত, স্বরিত, অনুদাত্ত) থেকে এই প্রাথমিকভাবে সাতটি শুদ্ধ স্বর সৃষ্টি হয়েছে। সামগানে এই সাতটি স্বরের নাম ছিল- ক্রুষ্ট, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, মন্দ্র ও অতিস্বার্য। সেকালের লৌকিক গানে এই স্বরগুলো ভিন্ন ভিন্ন নামে প্রকাশ পেয়েছিল। এই লৌকিক স্বরগুলো হলো ষড়্জ,  ঋষভ, গান্ধার, মধ্যম পঞ্চম, ধৈবত ও নিষাদ।  যাজ্ঞবল্ক্যের  শিক্ষায় বলা হয়েছে-
ঊচ্চৌ নিষাদগান্ধারৌ নীচবৃষভধৈবতৌ।
শৈষাস্তু স্বরিতা জ্ঞেয়াঃ ষড়্‌জ-মধ্যম-পঞ্চমাঃ॥

এই বিচারে উদাত্ত থেকে ক্রমোচ্চারিত স্বরবিন্যাস ছিল- ঋষভ, ধৈবত, ষড়্‌জ, মধ্যম, পঞ্চম, গান্ধার ও নিষাদ।

ভরত তাঁর নাট্যশাস্ত্রে এই স্বরটির ব্যাপ্তী হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন তিন শ্রুতি। এই শ্রুতিগুলো ছিল― দয়াবতী, রঞ্জনী ও রক্তিকা। ভরত ঋষভের জন্য 'রক্তিকা' শ্রতি নির্ধারণ করেছিলেন। ভাতখণ্ডে ঋষভের জন্য 'দয়াবতী' শ্রুতিকে নির্দেশ করেছেন।

পণ্ডিত অহোবল যখন তারের ৩২ ইঞ্চির ধ্বনিকে মধ্য সপ্তকের ঋষভ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন, পরবর্তী সময়ে শ্রীনিবাস এবং ভাতখণ্ডে এই মত গ্রহণ করেছিলেন। শ্রীনিবাস তারের দৈর্ঘ্যের সাথে কম্পাঙ্কের সম্পর্ক নির্ধারণ করেছিলেন। তাঁর মতে ৩২ ইঞ্চি তারকে টেনে এমন অবস্থায় আনতে হবে, যখন তার টঙ্কার ধ্বনির মান হবে ২৭০ হার্ট‌জ।
শ্রুতি সংখ্যা ও নাম

প্রচলিত স্বর

প্রচলিত আকারমাত্রিক স্বরচিহ্ন

. তীব্রা  

ষড়্‌জ

. কুমুদ্বতী 

অতি কোমল ঋষভ

. মন্দা

কোমল ঋষভ

. ছন্দোবতী  

অনুকোমল ঋষভ

. দয়াবতী 

শুদ্ধ ঋষভ


তথ্যসূত্র: