হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে দুর্গাদেবীর একটি বিশেষ রূপ হলো কালী। এই কালীদেবীরই অন্য নাম আবার শ্যামা। শ্যামাবন্দনা বা শ্যামাদেবীর উদ্দেশ্যে নিবেদিত গানগুলোকে সাধারণভাবে শ্যামাসঙ্গীত বলা হয়।
চৈতন্যদেবের আগে থাকে শ্যামা বা কালীর আরাধনা করতেন তান্ত্রিকরা। চৈতন্যপূর্বযুগে এই দেবীর উদ্দেশ্যে নিবেদিত গান ছিল চণ্ডীগান। শ্রীচৈতন্যের সময় নামসংকীর্তন বৈষ্ণবদের ভিতর ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করে। এরই সূত্রে সৃষ্টি হয় পালাকীর্তন। মূলত চণ্ডীগানের ধারার সাথে কীর্তনের ধারা মিশে বিকশিত হয়েছিল পালাকীর্তন।
শ্যামাসঙ্গীতের ধারাটি বিকাশলাভ
করে খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে। এই সময় বঙ্গদেশে রাজনৈতিক তৎকালীন
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বৈষ্ণবধর্মের চেয়ে শাক্তদর্শন ও শক্তিপূজা ক্রমশ
জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। এরই সূত্রে সৃষ্টি হয়েছিল শাক্তদর্শনভিত্তিক
শাক্তসঙ্গীত। এই নব্যসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবি
রামপ্রসাদ সেন। তাঁকে
শ্যামাসঙ্গীতের প্রথম বাগগেয়কার হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।
চণ্ডীগানের ধারা ধরে গ্রামবাংলায় সৃষ্টি হয়েছিল উমা-সঙ্গীত বা উমার
উদ্দেশ্যে নিবেদিত আগমনী গান। পরবর্তী সময়ে এর সাথে যুক্ত হয়েছিল
বিজয়ার গান। এই গানগুলো গ্রাম বাংলার হিন্দু সম্প্রদায়ের ভিতরে
ব্যাপকভাবে চর্চিত হতো। কালক্রমে তা লোকগানের একটি ধারায় পরিণত হয়।
শ্যামসঙ্গীতের প্রকৃতি
- ১. এই গানে মূখ্য বিষয় শ্যামাদেবী
- ২. এই দেবীকে মূলত মাতৃরূপে উপস্থাপন করা হয় এবং ভক্তরা সেই মায়ের সন্তান হিসেবে সেবা এবং ভক্তি করে থাকেন। এই গানে শ্যামাকে দেবীর চেয়েও বড় তার মাতৃরূপ। সন্তানের মতোই এই দেবীর কাছে সন্তানের অভিযোগ, আবদার, মান-অভিমানের। সম্বোধনে গ্রাম-বাংলার চিরায়িত বা প্রচলিত রূপ পাওয়া যায়। এই গানে শ্যমাকে তুই, তুমি সম্বোধন করা হয়। দেবী হিসেবে আপনি জাতীয় সম্বোধন বিরল। এই গান ধর্মীয় গরিমায় শ্যাম প্রতিষ্ঠিত নয়। সমাজজীবন ও লৌকিক সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ এই দেবী অধিকতর জীবনমুখী, ভক্তির ক্ষেত্রে জননী। কখনো কখনো শ্যমার অল্প বয়সী চঞ্চল কন্যা হিসেবে দেখানো হয়। আবার এই গানে শ্যামাকে অনেক সময় শ্মশানচারিণীরূপে দেখা যায়। শাক্ত ও বৈষ্ণব ধারার সূত্রে কোনো কোনো শ্যমাসঙ্গীতে কৃষ্ণ ও শ্যামা একাকার হয়ে যায়।
- ৩. লোকগানের সরল সুরের প্রকাশ দেখতে পাওয়া যায়। এর ভিতরে বাউল গানের প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। তবে উপস্থাপনের রূপ একটু বিশেষ ধরনের। এই গানে ঝিঁঝিট, লুম রাগের প্রভাব সর্বাধিক। খাম্বাজ অঙ্গে এই গান সহজেই গাওয়া যায়। রামপ্রসাদী গানে সিন্ধু-কাফি রাগের
রামপ্রসাদ সেন রচিত শ্যামাসঙ্গীত