শ্রবণযোগ্য
সঙ্গীত
ইংরেজি:
Audible Music।
সঙ্গীতের শ্রবণযোগ্য অধ্যায় হলো
শ্রবণযোগ্য সঙ্গীত। শ্রবণেন্দ্রিয় দ্বারা
গ্রাহ্য বিশেষ অনুভূতি নিয়ে সঙ্গীতের এই জগৎ। এর প্রধান দুটি অঙ্গ হলো সুর ও ছন্দ।
সুর: সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনির নান্দনিক বিন্যাসের ভিতর দিয়ে সুরের রূপ গড়ে উঠে। উপস্থাপনের মাধ্যম হিসেবে সুরকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়।
কণ্ঠ্য-সুর: মনুষ্য কণ্ঠের দ্বারা সৃষ্ট সুর। এই ধারার সঙ্গীত কণ্ঠসঙ্গীত নামে পরিচিত।
যান্ত্রিক সুর: বাদ্যযন্ত্র দ্বারা সৃষ্ট সুর। এই ধারার সঙ্গীত যন্ত্রসঙ্গীত নামে পরিচিত।
এই দুটি ধারার সুর সমন্বিত হয়ে মিশ্র সুরবিন্যাসের সৃষ্টি করে। হারমোনিয়ামের সাথে গান করাটা এই মিশ্র সুরবিন্যাসের সৃষ্টি করে।
ছন্দ: সঙ্গীতশাস্ত্রে আবর্তনযুক্ত ছন্দের উপস্থাপনকে বলা হয় তাল। অবশ্য বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে তালের সংজ্ঞাকে আরও বিস্তারিতভাবেই বলতে হয়। সুরের ধ্বনি প্রকৃতি ও ছন্দ-প্রকৃতির সাথে সমন্বয় করে যন্ত্রের সাহায্যে বাজানো হয়।
যদিও শ্রবণসঙ্গীত শুধু শ্রবণেন্দ্রিয় নির্ভর। কিন্তু বাস্তবে সঙ্গীতের রস গ্রহণে পূর্ণতা আসে শ্রবণ-দর্শনে। তাই বেতারে গানের চেয়ে টেলিভিশনে গানে মানুষের বেশি আকৃষ্ট হয়।
শ্রবণযোগ্য সঙ্গীতের মৌলিক উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয় শব্দ বা ধ্বনি। মানুষ তার শ্রবণ ক্ষমতার সীমার ভিতরে যত ধরনের ধ্বনি শুনতে পায়, তার ভিতরে কিছু ধ্বনিকে সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনি নির্বাচন করেছে। এই নির্বাচিত সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনিসমূহ থেকে ব্যবহার-উপযোগী বিশেষ কিছু ধ্বনির নাম দিয়েছে স্বর। একাধিক স্বরের বিন্যাসে তৈরি হয়ে সুর। বিশেষ বিশেষ সুরের বিন্যাসে গড়ে উঠে সুরশৈলী। সুরশৈলী এবং অন্যান্য সুরের মিশ্রণে তৈরি হয় এক একটি সুরসঙ্গীত। এই সুর বাদিত হতে পারে সুর-উৎপাদক বাদ্যযন্ত্রে। সাধারণত কণ্ঠে সুর ভিন্নমাত্রায় প্রকাশ পায় ভাষার অবলম্বনে। তবে ভাষা ছাড়াও কণ্ঠে সুরের প্রকাশ করা যায়। এই বিচারে কণ্ঠসঙ্গীতের সুর হতে পারে-
স্বর ধ্বনিনির্ভর সুর: যেমন আ, ই, এ ইত্যাদি ধ্বনি দিয়ে সুর তৈরি করা যায়।
অর্থহীন ধ্বনিনির্ভর সুর: এক্ষেত্রে স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি উভয়ই ব্যবহার করা যায়। যেমন 'তারানা' ব্যবহৃত শব্দসমূহ।
বাণী-নির্ভর সুর: যেকোনো অর্থবোধক বাণী সহযোগে যে গান গড়ে উঠে। সুর বাণীর প্রাধান্যের বিচারে এই ধরনের গানকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:
বাণী প্রধান গান: এই জাতীয় গানে গানের
বাণীটাই প্রধান। সুর হলো সেই বাণীর নান্দনিক প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত মাধ্যম।
বাণীর আবেদনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এবং বাণীর ভাবকে সুর দিয়ে তীব্রভাবে
প্রকাশ কারাটাই এই গানের মূখ্য উদ্দেশ্য। বাণীর প্রকৃতি অনুসারে সুরে নানা
ধরনের সুরালঙ্কার ব্যবহার করা যায় বটে, তবে তা যেন অলঙ্কার সর্বস্ব হয়ে উঠে
না। যেনো অলঙ্কারের আড়ম্বরে বাণীর কবর না হয়। এই শ্রেণির গানের ভিতরে
রয়েছে, পঞ্চকবির গান, আধুনিক গান, লোকসঙ্গীত।
সুর-প্রধান গান: এই জাতীয় গানে সুরটাই
প্রধান, বাণীটা অবলম্বন মাত্র। খেয়াল বা খেয়ালাঙ্গের গানকে সুরপ্রধান গান
হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ছন্দ-প্রধান গান: এই জাতীয় গানের বাণী
থাকলেও ছন্দকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়। পাশ্চাত্য সঙ্গীতে এর প্রচুর
উদাহরণ পাওয়া। যেমন মাইকেল জ্যাকসনের গান সাধারণ বাঙালি তরুণরা গানের বাণী
না বুঝেই শুধু ছন্দের দোলায় আন্দোলিত হয়। পাশ্চাত্য চিরায়ত সঙ্গীতের
সমৃদ্ধসুর বিন্যাস, শব্দের সুষ্পষ্টতা, বাণীর গভীরতা ইত্যাদির সন্ধান করার
জন্য এই জাতীয় গান শোনা হয়। এই জাতীয় গানের উৎসবে শ্রোতার যায় গান শোনার
চেয়ে, ছন্দের দোলায় উদ্বেলিত হয়ে নাচার জন্য। এক্ষেত্রে অন্যান্য
সুরযন্ত্রের যেয়ে তালযন্ত্রের ঘাত-ধ্বনির প্রতি বিশেষ
আগ্রহ সৃষ্টি করে।
মিশ্র-প্রকৃতির গান: সকল গানই কমবেশি মিশ্র প্রকৃতির। প্রাধান্য বিচারে আমরা কোনো কোনো গানকে বিশেষ শ্রেণির ভিতরে ফেলি। কিন্তু এ কালের গানে বাণীর সাথে সহযোগী যন্ত্র তো থাকেই, গানের শুরুতে এবং অন্তরা ও সঞ্চারীর আগেও যন্ত্রসঙ্গীত জুড়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া, প্রতিটি পংক্তির সাথে বাঁশি এসরাজ বেহালা ইত্যাদির সুরাংশও যুক্ত করা হয়। অনেক সময় তাল যন্ত্রে সাথে সওয়াল-জবাব উপস্থাপন করা হয়। এ সবই মিশ্র-প্রকৃতির গান। এই গানই যখন গীত-বাদ্য-নৃত্যের সমন্বিত রূপে উপস্থাপন করা হয়, তখন আক্ষরিক অর্থেই সঙ্গীত হয়ে উঠে।
শ্রবণযোগ্য সঙ্গীতে যা কিছুই
করা হোক না কেন, তার মূলে থেকে শব্দ এবং শ্রবনেন্দ্রিয়। তাই এই সূত্রে পরবর্তী
অধ্যায়ে আলোচনা করবো শব্দ বা ধ্বনি নিয়ে।
দেখুন:
শব্দ বা ধ্বনি