খোল
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{
|
আনদ্ধ
বাদ্যযন্ত্র
|
ঘাত
বাদ্যযন্ত্র
|
সঙ্গীতযন্ত্র
|
যন্ত্র
|
ডিভাইস
|
যন্ত্রকরণতা
|
মানবসৃষ্টি |
সমগ্র |
দৈহিক লক্ষ্যবস্তু
|
দৈহিক
সত্তা
|
সত্তা
|}
বঙ্গদেশের কীর্তন গানে ব্যবহৃত তালবাদ্যযন্ত্র বিশেষ। এর দেহকাঠামো মাটির তৈরি বলে,
একে মৃদঙ্গ শ্রেণির বাদ্যযন্ত্র বলা হয়। কেউ কেউ সখের ফাইবার বা তামার দেহ কাঠামোযুক্ত
খোল তৈরি করেন ।
ভারতবর্ষের মানুষ যখন মাটি পুড়িয়ে নানা উপকরণ তৈরির কৌশল শিখেছিল, সেই সময় থেকে ইট, তাবিজ মূর্তি, পাত্র ইত্যাদি তৈরির সূচনা হয়।
সাধারণভাবে এগুলোকে পোড়া মাটির জিনিসপত্র বলা হয়। এই সূত্রে প্রাচীন ভারতের
সঙ্গীত শিল্পীরা তালবাদ্যযন্ত্রের কাঠামোতে মাটির ব্যবহার শুরু করেছিল। এই ধারাতেই যাবতীয়
নানা ধরনের মৃদঙ্গের সৃষ্টি হয়েছিল। মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারায়
ভারতবর্ষের সিন্ধু নদীর তীরে খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ৫০০০ বৎসর বা তার আগে থেকে যে
প্রাচীন সভ্যতা গড়ে উঠেছিল, তাকেই সিন্ধু সভ্যতা নামে অভিহিত করা হয়। এই সভ্যতার
পাঁচটি পর্বের প্রথম তিনটি ধাপে মানুষ প্রস্তর যুগ অতিক্রম করেছিল। এই সভ্যতার
শেষার্ধে পাথরে পাথর ঢুকে আগুন জ্বালনো শিখেছিল। আগুনের ব্যবহার
শেখার পর এসেছে পোড়া মাটির উপকরণ তৈরির কাল। প্রত্বতত্ত্ববিদরা প্রাচীন ভারতে এই সময় স্তরগুলো
যেভাবে ভাগ করেছেন, তা হলো—
মেহেরগড় (প্রথম ধাপ) : খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ অব্দ, প্রস্তরযুগ।
মেহেরগড় (দ্বিতীয় ধাপ) : খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০-৩০০০ অব্দ, প্রস্তরযুগ।
মেহের গড়ের তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ধাপ এবং হরপ্পার সভ্যতার পত্তন : ৩০০০-২৯০০ অব্দ, প্রস্তর যুগ
মেহের গড়ের ষষ্ঠ, সপ্তম ধাপ এবং হরপ্পার প্রথম ধাপ : খ্রিষ্টপূর্ব ২৯০০-২৮০০ অব্দ
মেহের গড়ের চতুর্থ, পঞ্চম ষষ্ঠ ধাপ এবং হরপ্পার তৃতীয় ধাপ : খ্রিষ্টপূর্ব ২৮০০-২৬০০ অব্দ।
হরপ্পার পরবর্তী বিকাশ : খ্রিষ্টপূর্ব সর্বশেষ ধাপ ২৬০০-৩০০ অব্দ।
সিন্ধু সভ্যতার বিকাশ হয়েছিল ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে। ভারতের পূর্বাঞ্চলে সভ্যতার
বিকাশ ঘটেছিল বৃহত্তর বঙ্গদেশে। এই ধারায় প্রাচীন সভ্যতার নমুনা পাওয়া গেছে
বাংলাদশের নরসিংদীর জেলার বেলাব উপজেলায় অবস্থিত উয়ারী ও
বটেশ্বর নামক দুটি গ্রামে। কার্বন-১৪ পরীক্ষার দ্বারা প্রমাণ পাওয়া গেছে, এই অঞ্চলের সভ্যতা গড়ে উঠেছিল
খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০ অব্দের দিকে। এই সভ্যতায় পোড়া মাটির তৈরি উপকরণ পাওয়া গেছে।
প্রাচীন বঙ্গদেশের এই অঞ্চলে পাথর ছিল না। ফলে এই অঞ্চলের মানুষ উত্তর ভারতের
তুলনায় পোড়া মাটির উপকরণ তৈরিটা একটু আগেভাগেই শিখেছিল।
ধারণা করা হয়, ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে আদি জনগোষ্ঠী মৃদঙ্গের আদ্যরূপটি
আর্যদের ভারতবর্ষে আসার আগেই আয়ত্ব করতে সক্ষম হয়েছিল। কালক্রমে নানা পরিবর্তনের
মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে মৃদঙ্গ ভিন্ন ভিন্ন রূপ লাভ করেছে। এই
ক্রমবিবর্তনের ধারায় বঙ্গ এবং এর আশেপাশের অঞ্চলে মৃদঙ্গের আদ্যরূপ সৃষ্টি হয়েছিল।
বিশেষ করে বঙ্গ, আসাম, মণিপুর অঞ্চলে মৃদঙ্গ নানাভাবে পরিবর্তিত হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। এই সব
অঞ্চলের নানা ধরনের মৃদঙ্গের মধ্যে খোল একেবারেই বাঙালির।
প্রাচীন বাংলায় খোলের
নানা রকম ছিল। খ্রিষ্টীয় চতুর্দশ শতকে চৈতন্যদেবের
বঙ্গদেশের কীর্তন গানের সূত্রে বিশেষ ধরনের খোল, বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছিল।
শ্রীকৃষ্ণলীলাকে সঙ্গীতের মাধ্যমে প্রকাশের সূত্রে কীর্তনের সৃষ্টি, আর এর সাথে ব্যবহৃত
তালযন্ত্রটিও নাম পেয়েছিল শ্রীখোল। হয়তো নানা ধরনের খোল থেকে পৃথক করার জন্যই এই
নাম দেওয়া হয়েছিল।
খোলের মুখ |
খোলের মধ্যভাগ স্ফীত এবং গোলাকার। দেখতে
অনেকটা পটলের মতো। এর দুই পাশ ক্রমশ ঢালু হয়ে কম ব্যাসের দুটি মুখ তৈরি করে। উভয়
মুখই চর্মাচ্ছাদিত। এই কারণে খোল আনদ্ধ শ্রেণির বাদ্যযন্ত্র। এই আচ্ছাদনকে বলা হয়
ছাউনি। এর বামদিকের মুখ
ডানদিকের মুখের চেয়ে ছোট হয়ে থাকে। উভয় মুখের চামড়ার ছাউনির প্রান্তভাগে গোলাকার
পৃথক চামড়ার আবরণ থাকে। একে বলা হয় কানি। মূল ছাউনির উপরে গাব বা স্যাহি ব্যবহার
করা হয়। ডানদিকের মুখের ব্যাস প্রায় ১২ সে মি এবং বামদিকের প্রায় ২৪ সে মি অর্থাৎ
বামদিকের পরিধি ডানদিকের তুলনায় দ্বিগুণ।
খোলের ডানদিকের ধ্বনি তীক্ষ্ণ আর বাম দিকের সুর গম্ভীর। বামদিকের মুখে ডানদিকের অপেক্ষা বড় আয়তনের গাব থাকে।
দুই প্রান্তের মুখের ছাউনি
ছাগল বা গরুর চামড়ার ফিতা দ্বারা টেনে বাঁধা হয়। এই বাদ্যযন্ত্র আঙ্গুলের সাহায্যে
বাজানো হয়। কীর্তন গানের সময়, খোলের সাথে ফিতা, দড়ি বা কাপড় বেঁধে গলায় ঝুলিয়ে বাজানো হয়। আসরে বসে
বাজানোর সময়, খোল কোলে রেখে বাজানো হয়।
খোলের বাম মুখ |
খোলের ডান মুখ |