অশ্বমেধ
ভারতীয় আর্যদের পালিত
যজ্ঞ বিশেষ।
অশ্ব বলি দিয়ে এই হোম বা যজ্ঞ করা হতো।
বড় বড় রাজারাই এই যজ্ঞ করতেন।
নিরানব্বইটি যজ্ঞ করার পর সর্বসুলক্ষণাক্রান্ত একটি অশ্বের কপালে জয়পত্র বেঁধে ছেড়ে
দেওয়া হতো।
যজ্ঞের ঘোড়ার বর্ণনায় বলা হয়েছে― এই ঘোড়া হবে কৃষ্ণবর্ণের,
মুখ সুবর্ণতুল্য,
মুখের দুই পাশে থাকবে অর্ধচন্দ্র চিহ্ন অঙ্কিত,
পুচ্ছ হবে বিদ্যুতের মতো প্রভাযুক্ত,
পেট হবে কুন্দ ফুলের ন্যায় শ্বেতবর্ণ।
এর
হরিৎবর্ণের পা
থাকবে এবং
কান হবে সিঁদুরের মতো রক্তিম।
জিহ্বা হবে প্রজ্জ্বলিত আগুনের মতো,
চোখ হবে তেজস্কর
এবং
সর্বাঙ্গ জুড়ে থাকেব সুগন্ধ।
এই ঘোড়া হবে অত্যন্ত বেগবান।
এইরূপ ঘোড়া এক বৎসর ধরে ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়াত।
এই সময়,
এই ঘোড়াকে রক্ষা করার জন্য এর সাথে সৈন্যসামন্ত থাকতো।
কেউ ওই ঘোড়াকে ধরলে এর সাথের সৈন্যরা তার সাথে যুদ্ধ করে সে ঘোড়াকে উদ্ধার করতো।
এইভাবে বৎসরান্তে ঘোড়াটি ফিরে এলে,
ঘোড়ার অধিকারী রাজা রাজচক্রবর্তী উপাধি প্রাপ্ত হতেন।
ঘোড়া ফিরে এলে ব্রাহ্মণেরা শাস্ত্রমতে তাকে হত্যা করতো।
রাত্রে রাজপত্নীরা এই ঘোড়াকে রক্ষা করতেন।
এই যজ্ঞে অশ্বকে বলিদানকালে বাঁধার জন্য একুশটি কাঠের যূপ তৈরি করা হতো। এর ছয়টি
যূপ বেলকাঠের, ছয়টি খদির কাঠের, ছয়টি পলাশ কাঠের, দুটি দেবদারু কাঠের এবং একটি
শ্লাষ্মতক কাঠ দিয়ে তৈরি করা হতো। এই যজ্ঞে অশ্ব ছাড়াও প্রায় তিনশত গরু, ছাগল এবং
মেষও বলি দেওয়া হতো।এরপর
অশ্ব বলি দেওয়া হতো। যজ্ঞের অশ্বের
বক্ষঃস্থলের মেধ অগ্নিতে সংস্কার করা হত এবং দেহের অবশিষ্টাংশ দ্বারা
হোম করা হতো।
আর্যরা মনে করতেন, এই যজ্ঞের ফলে ব্রহ্মহত্যাসহ সর্বপ্রকার পাপের ক্ষয় এবং স্বর্গ ও মোক্ষ লাভ হবে। যজ্ঞশেষে ব্রাহ্মণদের দক্ষিণা এবং নিমন্ত্রিত রাজা ও অন্যান্য বর্ণের অতিথিদের উপহার দেওয়া হতো।
রামচন্দ্র ও যুধিষ্ঠির এই যজ্ঞ করেছিলেন। রাজা দশরথ পুত্র-কামনায় এই যজ্ঞ করেছিলেন। কথিত আছে শত অশ্বমেধ যজ্ঞ করলে ইন্দ্রত্ব লাভ করা যায়। এই কারণে ইন্দ্র তাঁর ইন্দ্রত্ব রক্ষার জন্য শতমেধ যজ্ঞের বাধা দিতেন। এই কারণেই ইন্দ্র দিলীপ ও সগররাজের শততম অশ্বমেধ যজ্ঞের অশ্ব অপহরণ করেছিলেন।
ব্রহ্মপুরাণে কলিকালে এই যজ্ঞ নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। অবশ্য আমেরের রাজা সেওয়ার জয়সিংহ অশ্বমেধ যজ্ঞ করেছিলেন।