চিত্র : মথুরায় প্রাপ্ত ভাস্কর্য

ইন্দ্র

ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনি মতে, দেবতাদের রাজা ঋগ্বেদে তিনি দেবতাদের মধ্যে প্রধান হিসাবে বিবেচিত হয়েছেন। এছাড়া বেদে এঁকে প্রজাপতি হিসাবেও উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু পুরাণ-মতে তিনি ব্রহ্মা, বিষ্ণু মহাদেব অপেক্ষাকৃত কম ক্ষমতাবান দেবতা ি ে এই তিন দেবতার নুগ্রহভাজন।  মহাভারতের আদিপর্বের একত্রিংশ অধ্যায়ে বলা হয়েছে- ব্রহমা ইন্দ্রকে ত্রিভুবন নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার প্রদান করেছিলেন।

এঁর পিতার নাম
কশ্যপ মায়ের নাম অদিতিঅদিতি সহস্র বৎসর ইন্দ্রকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন। পরে তাঁর মায়ের উদরের পার্শ্বভেদ করে জন্মগ্রহণ করেন। [ঋগ্বেদ ৪।১৮]

জন্মগ্রহণের পরপরই তিনি আকাশকে উজ্জ্বল করেন এঁর জন্মের সময় পর্বত, আকাশ ও পৃথিবী ভয়ে প্রকম্পিত হয়েছিল তিনি ঝড়, বৃষ্টি, বিদ্যু ও বজ্রের দেবতা এবং উষাকে প্রকাশ করেন তিনি জন্মাবধি যোদ্ধা, শত্রুদমনকারী তাঁর অস্ত্র ছিল বজ্র, ধনুর্বাণ, অঙ্কুশ ও পারন্ধ নামক তরবারিএ ছাড়া কাঁটা, জাল প্রভৃতি দ্বারা শত্রুকে জড়িয়ে ধরতেন

এঁর সহস্র চোখ ছিল কথিত আছে সুন্দ-উপসুন্দ নামক অসুরদ্বয়কে হত্যা করার জন্য বিশ্বকর্মা তিলোত্তমা নামক একটি অপরূপ নারী সৃষ্টি করেছিলেন তিলোত্তমাকে দেখার জন্য ইন্দ্রের সহস্র চোখের সৃষ্টি হয়েছিল আবার মহাভারতের মতে- গৌতম মুনির অনুপস্থিতে ইন্দ্র গৌতমের রূপ ধরে তাঁর স্ত্রী অহল্যাকে ধর্ষণ করেন এই কারণে মুনির অভিশাপে এঁর শরীরে সহস্র যোনী-চিহ্ন প্রকাশ পায় পরে ইন্দ্রের অনুনয় বিনয়ে গৌতম তাঁর ওই চিহ্নগুলিকে চোখে পরিণত করেছিলেন আবার রামায়ণের মতে- গৌতমের অভিশাপে অণ্ডদ্বয় খসে পড়েছিল পরে অশ্বিনীকুমারদ্বয় মেষের অণ্ড কেটে সেখানে সংযোজিত করে দেন

এঁর গায়ের রঙ, চুল, দাড়ি, ঘোড়া, রথ সবই ছিল হরি বা পিঙ্গল বর্ণের এঁর প্রিয় পানীয় ছিল সোমরস সোমরস পান করতে করতে তাঁর উদর স্ফীত হয়েছিল এবং দাড়িতে জটা বেঁধেছিল আর তাঁর জন্য সোমরস রাখার ঘটের নাম হয়েছিল ইন্দ্রোদর কথিত আছে তিনি এক চুমুকে ত্রিশ হ্রদ সোমরস পান করতে পারতেন

এঁর স্ত্রীর নাম
ইন্দ্রাণী বা শচী এঁর রাজধানীর নাম ছিল অমরাবতী। তাঁর রাজসভা তৈরি করেছিলেন বিশ্বকর্মা। মহাভারতের এই রাজসভার যে রূপ বিবরণ পাওয়া যায়, তা হলো

'দেবরাজ ইন্দ্র বহু প্রযত্নসহকারে বিশ্বকর্মা দ্বারা আপন সভা নির্মাণ করান। ঐ সভার প্রভা সূর্যের ন্যায়, উহা শতযোজন বিস্তীর্ণ, সার্দ্ধ শত-যোজন দীর্ঘ ও পঞ্চযোজন উন্নত। উহা শূন্যমার্গে স্থির এবং যথা ইচ্ছা গমনাগমন করিতে পারে।'
[সূত্র: মহাভারত, কালীপ্রসন্ন সিংহ অনূদিত। প্রথম খণ্ড। সাহিত্যতীর্থ জুন ২০১৪। পৃষ্ঠা: ২৯০।]

নগরীর উদ্যানের নাম ছিল নন্দন তাঁর হস্তির নাম-ঐরাবত ও অশ্বের নাম ছিল উচ্চৈঃশ্রবা এঁর রথের নাম ছিল বিসান ও সারথীর নাম ছিল মাতলি

রামায়ণের মতে- অমৃত নিয়ে দেবতা ও অসুরদের মধ্যে যুদ্ধ হলে, দেবতাদের হাতে অসুরেরা পরাজিত ও নিহত হয় ফলে অসুরদের মা দিতি (ইন্দ্রের সৎমা ও মাসী) কশ্যপের কাছে ইন্দ্রকে হত্যা করতে পারে এমন সন্তান প্রার্থনা করেন কশ্যপ দিতিকে বলেন যে, দিতি যদি এক বৎসর শুচি হয়ে থাকেন তা হলে এমন পুত্র পাবেন দিতি নয় শত নব্বই বৎসর শুচি থাকার পর, একদিন মধ্যাহ্নে ইনি তাঁর বিছানার মাথার দিকে পা ও পায়ের দিকে মাথা দিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন ফলে ইন্দ্র অশুচি জ্ঞানে বজ্র দ্বারা দিতির উদরের সন্তানকে সাতটি খণ্ডে বিভক্ত করে ফেলেন গর্ভস্থ শিশু কেঁদে ওঠায়- ইন্দ্র মা রুদ' মা রুদ' (কেঁদো না) বলে- কেটে ফেলেছিলেন এই শিশুটি সপ্ত মূর্তি ধরে জন্মগ্রহণ করেন এবং এঁদের নাম হয় মারুদ

ইন্দ্রের অহঙ্কারেসূত্রে অরুণ ও গরুড়ের জন্ম
একবার
কশ্যপ পুত্রলাভের আশায় একটি মহাযজ্ঞ করেন। উক্ত যজ্ঞে সাহায্য করার জন্য দেবতাগণ, ঋষিগণ ও গন্ধর্বগণ অংশগ্রহণ করেছিলেন। ইন্দ্র নিজের ক্ষমতাবলে প্রচুর কাঠ যোগাড় করে আনার সময় দেখতে পান যে, ক্ষুদ্রাকার বালখিল্য ঋষিরা সমবেতভাবে একটি পত্রবৃন্ত আনার চেষ্টা করছিলেন। উল্লেখ্য বালখিল্যরা উপাসনার জন্য প্রায় অনাহারে থাকতেন। এই কারণে তাঁরা দুর্বল ছিলেন। এ ছাড়া এঁরা আকারে এতটাই ক্ষুদ্র ছিলেন যে, গরুর পায়ের চাপে মাটিতে যে গর্ত হয়, তাতে জমে থাকা পানিতে ডুবে যেতেন। বলাই বাহুল্য এরূপ বালখিল্যদের একটি পত্রবৃন্ত সংগ্রহ করা এবং তা বহন করে নিয়ে যাওয়াটা অনেক কঠিন ছিল। ইন্দ্র বালখিল্যদের এই পত্রবৃন্ত সংগ্রহের দৃশ্য দেখে উপহাস করেন। এতে বালখিল্যরা অপমানিত হন, এবং ইন্দ্রের চেয়ে শক্তিশালী পুত্র কামনায় যজ্ঞ করেন। বিষয়ট ইন্দ্র জানতে পেরে, কশ্যপ্যের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। কশ্যপ  ইন্দ্রের অনুরোধে বালখিল্যদের কাছে এসে কার্যসিদ্ধির প্রার্থনা করলেন। বালখিল্যরা এ প্রার্থনা মঞ্জুর করেন। এরপর কশ্যপ বালখিল্যদের বলেন যে, ইন্দ্রকে ত্রিভুবনের নিয়ন্ত্রণ অধিকার ব্রহ্মা দিয়েছেন। সুতরাং ইন্দ্রের চেয়ে শক্তিশালী কেউ হলে, ব্রহ্মার নিয়ম লঙ্ঘিত হবে। তাই বালখিল্যদের ইন্দ্র হবে পক্ষীদের ইন্দ্র। যেহেতু বালখিল্যরা কশ্যপের পুত্রকামনায় যজ্ঞ করছিলেন, তাই এক্ষেত্রে কি করা উচিৎ, তা বিবেচনার ভার কশ্যপকেই প্রদান করেন। এর কিছুদিন পর বিনতা যখন পুত্রকামনায় ঋতুস্নান শেষে কশ্যপের  কাছে আসেন। তখন কশ্যপ
বিনত
াকে জানান যে, বালখিল্যদের প্রার্থনা অনুসারে তাঁর গর্ভে দুটি পুত্র জন্মগ্রহণ করবে। এই পক্ষীরূপী ওই দুই পুত্র পক্ষীজাতির ইন্দ্র হবে।
            [সূত্র: মহাভারত। আদিপর্ব। একত্রিংশ অধ্যায়]

 

ইন্দ্রত্ব রক্ষায় ইন্দ্রের অপকৌশল
ইন্দ্র তপস্যার দ্বারা স্বর্গের রাজা হয়েছিলেন। ইন্দ্রত্ব হলো রাজশক্তি। কেউ যখন তপস্যার দ্বারা তাঁকে অতিক্রম করার পর্যয়ে চলে যেতেন, তখন নানা অপকৌশলে তাঁদের ধ্যানচ্যুত করার চেষ্টা করতেন। ইন্দ্রের এই প্রতিহিংসা পরায়ণতার সূত্রে বেশ কিছু পৌরাণিক গল্প পাওয়া যায়।

ইন্দ্র ত্বষ্টা দ্বন্দ্ব
ইন্দ্রের ক্ষতি করার জন্য ত্বষ্টা নামক প্রজাপতি ত্রিশিরা নামক একটি পুত্র উৎপাদন করেন। ত্রিশিরা তপস্যার দ্বারা ইন্দ্রকে অতিক্রম করার পর্যায়ে চলে গেলে, ইন্দ্র ত্রিশিরার তপস্যা ভাঙার জন্য
জন্য বহু অপ্সরাকে পাঠান সকল অপ্সরা ব্যর্থ হয়ে ফিরে এলে, ইন্দ্র ত্রিশিরার প্রতি বজ্র নিক্ষেপ করেন এর ফলে ত্রিশিরা নিহত হলেও তাঁর মস্তক জীবিতই থেকে যায়। এবং এই মস্তকত্রয়ের তপঃপ্রভাবে ইন্দ্র অতীষ্ট হয়ে উঠেন। এই সময় একজন সূত্রধর ত্রিশিরার পতিত দেহের কাছে উপস্থিত হন। ইন্দ্র নানাভাবে তাঁকে প্রলোভিত করে সুত্রধরকে বশীভূত করেন। পরে ওই সূত্রধর ত্রিশিরা তিনটি মাথা কেটে ফেলেন। পুত্রের হত্যার প্রতিশোধের জন্য ত্বষ্টা ইন্দ্রকে হত্যা করার জন্য বিত্রাসুর নামক একটি অসুর সৃষ্টি করেন। প্রথমাবস্থায় বিত্রাসুরের সাথে যুদ্ধে ইন্দ্র পরাজিত হন এবং পালিয়ে যান। পরে বিষ্ণুর সহায়তায় তিনি বিত্রাসুরকে হত্যা করেন। কিন্তু ত্রিশিরাকে হত্যা করার জন্য ব্রহ্মহত্যাজনীত পাপে অভিযুক্ত হন। এই কারণে পতিত দশায় হতচেতন হয়ে জলরাশির নিচে হতচেতন সাপের মতো পড়ে রইলেন।  এই সময় সর্গরাজ্য শাসনের কেউ না থাকায়, রাজা নহুষকে দেবরাজ্যের অধিপতি করা হয়।

নহুষ দেবরাজ্যলাভ করার পর, ইন্দ্রের পত্নী ইন্দ্রাণীকে অধিকার করার চেষ্টা করেন। নহুষের কামনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য, ইন্দ্রাণী বৃহস্পতির শরণাপন্ন হন। বৃহস্পতি ইন্দ্রাণীকে রক্ষার করার অঙ্গীকার করে, ইন্দ্রাণীকে সাথে করে নহুষের সাথে সাক্ষাৎ করেন। ইন্দ্রাণী নহুষের কাছে কিছুটা সময় চেয়ে নিয়ে, বিষ্ণুর সাথে দেখা করেন। বিষ্ণু ইন্দ্রাণীকে জানানা যে, তাঁর উদ্দেশ্যে ইন্দ্র অশ্বমেধযজ্ঞ করলে, তাঁর পাপমোচন হবে। বিষ্ণুর পরামর্শ অনুসারে ইন্দ্র অশ্বমেধ যজ্ঞ করে পাপমুক্ত হন। পাপমুক্ত হয়েও তিনি নহুষের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস পেলেন না। এই কারণে তিনি অসহায়ের মতো নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াতে থাকলেন। ফলে ইন্দ্রাণীর সাথে ইন্দ্রের দেখা হলো না। স্বামীর দেখা পাওয়ার জন্য, তিনি নিশাদেবীর আরাধনা শুরু করেন। এই সূত্রে সংবাদদায়িকা দেবী উপশ্রুতি তাঁর কাছে আসেন। উপশ্রুতি ইন্দ্রাণীর কাছে সকল বিষয় অবগত হয়ে, তাঁর সাথে ইন্দ্রের দেখা করার ব্যবস্থা করে দেন। ইন্দ্রাণী নহুষের কামনার কথা ইন্দ্রকে জানান। বর্তমান অবস্থায় নহুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষমতা ইন্দ্রের নেই, এই অপারগতা জানিয়ে, তিনি নহুষের পতনের জন্য ইন্দ্রাণীকে একটি কৌশলের কথা বলেন।  এই পরামর্ষ অনুসারে ইন্দ্রাণী নহুষে জানান যে, ঋষিবাহিত যানে নহুষ যদি তাঁর কাছে আসে তাহলেই তিনি তাঁর পত্নী হবেন। ইন্দ্রের পরামর্শ অনুসারে ইন্দ্রাণী নহুষকে একথা জানান। এরপর নহুষ ইন্দ্রাণীকে পাওয়ার জন্য সপ্তর্ষি ও ব্রহ্মঋষি বাহিত রথের আয়োজন করেন তিনি
ওই ঋষিদের ভিতরে অগস্ত্যও ছিলেন হঠাৎ নহুষের পা অগস্ত্যর দেহ স্পর্শ করলে, ক্রুদ্ধ অগস্ত্য রাজাকে সর্প হও অভিশাপ দেন। এই অভিশাপের ফলে, নহুষের পতন হয়।

ইতিমধ্যে
বৃহস্পতি অগ্নির সাহায্যে জলের তলে কমলতন্তুর ভিতরে লুকায়িত ইন্দ্রের সন্ধান পান। এরপর বৃহস্পতি দেব, ঋষি ও গন্ধর্বদের সাথে নিয়ে ইন্দ্রের কাছে যান এবং তাঁর স্তব করতে থাকেন। এর ফলে ইন্দ্রের তেজবৃদ্ধি পায়। নহুষের পতনের পর, সকলে মিলিত হয়ে ইন্দ্রকে পুনরায় স্বর্গরাজ্যের রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
    [ উদ্যোগপর্ব। অষ্টম-সপ্তদশ অধ্যায়। মহাভারত (কালীপ্রসন্নসিংহ অনূদিত)। সাহিত্যতীর্থ। জুন ২০১৪]

ইন্দ্র-বিশ্বামিত্র দ্বন্দ্ব
একবার
বিশ্বামিত্র কঠোর তপস্যা শুরু করলে, ইন্দ্র বিশ্বামিত্রের কঠোর তপস্যা ভঙ্গ করার জন্য মেনকা নামক এক অপ্সরাকে পাঠান প্রথমে তেজস্বী বিশ্বামিত্রের কাছে মেনকা যেতে রাজি হন নাই। কিন্তু ইন্দ্রের আদেশে তাঁকে শেষ পর্যন্ত বিশ্বামিত্রের কাছে যেতেই হয়। তবে যাবার আগে মেনকা ইন্দ্রের কাছে এরূপ বর প্রার্থনা করেন, যেন বিশ্বামিত্রের ক্রোধাগ্নি তাকে দগ্ধ করিতে না পারে। এরপর মেনকার অনুরোধে তাকে সাহায্য করার জন্য, বায়ু তার সাথে যায়। মেনকা তপস্যারত বিশ্বামিত্রের সামনে গিয়ে ক্রীড়া-কৌতুক শুরু করে। একসময় বায়ু  মেনকার বসন অপহরণ করলে বিশ্বামিত্র তা দেখে মুগ্ধ হন এবং মেনকার সাথে মিলিত হন কিছুদিন পর মেনকা গর্ভবতী হলে, মেনকা হিমালয়ের পাদদেশে একটি কন্যা সন্তান প্রসব করে এবং সদ্যজাতা কন্যাকে মালিনী নদীর তীরে নিক্ষেপ করিয়া দেবরাজসভায় প্রস্থান করে। এই সময় কিছু শকুন এই কন্যাকে রক্ষা করেন কণ্ব মুনি শকুন পাখি পরিবেষ্টিত অবস্থায় এই কন্যাকে পেয়ে আশ্রমে নিয়ে আসেন শকুন্ত পাখি দ্বারা রক্ষিত হয়েছিল বলে কন্যার নাম রাখেন শকুন্তলা। [মহাভারত। আদিপর্ব। দ্বিসপ্ততিতম অধ্যায়। বিশ্বামিত্রের তপোভঙ্গ শকুন্তলার জন্মবৃত্তান্ত]

রাবণ তাঁর পুত্র মেঘনাদকে সাথে নিয়ে স্বর্গে গিয়ে ইন্দ্রের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন মেঘনাদ ইন্দ্রকে যুদ্ধে পরাজিত করে লঙ্কায় নিয়ে গিয়েছিলেন সেই থেকে মেঘনাদ ইন্দ্র নামে খ্যাতিমান হয়েছিলেন পরে ব্রহ্মা মেঘনাদকে বর প্রদান করে ইন্দ্রকে মুক্ত করেন ইনি প্রথমে ইন্দ্রাণীকে ধর্ষণ করেন এবং পরে তাঁকে বিবাহ করেন এই কারণে ইন্দ্রাণীর পিতা পুলোমার অভিশাপের ভয়ে ইনি পুলোমাকে হত্যা করেন মহাভারতের মতে তিনি কুন্তীর গর্ভে অর্জুনকে জন্ম দেনতিনি অর্জুনকে তাঁর সভায় নিয়ে যান এবং যুদ্ধ, সঙ্গীত সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞানলাভের ব্যবস্থা করে দেন। পরবর্তী সময়ে তিনি অর্জুনের জন্য অন্যায়ভাবে কর্ণের কবচ ও কুণ্ডল সংগ্রহ করেছিলেন

একবার ইনি দুর্বাসা মুনির মালা প্রত্যাখ্যান করায়- ঋষির অভিশাপে অসুরদের কাছে রাজ্য হারান কৃষ্ণের সাথে ইন্দ্রের বিরোধ দেখা দিলে, কৃষ্ণের চেষ্টায় ব্রজবাসীরা ইন্দ্রের উপাসনা বন্ধ করে সে কারণে, ইন্দ্র ঝড়বৃষ্টি দ্বারা প্লাবিত করার চেষ্টা করলে কৃষ্ণ গোবর্ধন পর্বত ধারণ করে ব্রজবাসীদের রক্ষা করেছিলেন অন্যত্র আছে কৃষ্ণ তাঁর স্ত্রী সত্যভামার অনুরোধে ইন্দ্রের কাছ থেকে পারিজাত বৃক্ষ কেড়ে নেন ফলে ইন্দ্রের সাথে কৃষ্ণের যুদ্ধ হয় এবং ইন্দ্র পরাজিত হ

ইন্দ্রের তিনটি পুত্র ও এক কন্যার নাম পাওয়া যায় এঁরা হলেন
. জয়ন্ত (পুত্র) মাতা শচী
. জয়ন্তী (কন্যা)মাতা শচী
. অর্জুন (পুত্র) মাতা কুন্তী
. বালী (পুত্র)বানর কন্যা

অনেকের মতে ইন্দ্র বেশ কয়েকজন ছিলেন এটি স্বর্গরাজ্যের রাজ-পদবী বিশেষ উপাসনা ও যজ্ঞের ফলরূপ ইন্দ্রত্ব লাভ হতো আবার অনেকের মতে ইনি একজনই ছিলেন শত অশ্বমেধ যজ্ঞ করে ইনি ইন্দ্রত্ব লাভ করেছিলেন ইনি ইন্দ্রত্ব হারানোর ভয়ে বেশ সন্ত্রস্ত থাকতেন যখনই কেউ কঠোর তপস্যার দ্বারা নিজেকে সংহত করতেন, তখনই ইনি তাঁর ইন্দ্রত্ব পদ হারানোর ভয়ে বিবিধভাবে তাঁদের তপস্যার বিঘ্ন ঘটাতেনএ কারণে ইনি কামদেবসহ স্বর্গবেশ্যাদের নিয়োগ করতেন

সমার্থকশব্দসমূহ (synonyms):
১.
যিনি প্রভুত্ব করেন, বা দেবতাদের (অমর, ত্রিদশ, দেব, সুর) রাজা এই অর্থে- অমরনাথ, অমরপ্রভু, অমরভর্তা, অমররাজ, অমরাধিপ, অমরাপতি, অমরেন্দ্র, অমরেশ, অমরেশ্বর, ইন্দ্র, ত্রিদশপতি, ত্রিদশাধিপ, ত্রিদশাধিপতি, ত্রিদশেন্দ্র, ত্রিদশেশ্বর, দেবপতি, দেবরাজ, দেবনাথ, সুরপতি, সুরেন্দ্র, সুরেশ, সুরেশ্বর।
২. স্বর্গ (ত্রিদিব) বা দেবলোকের অধিপতি অর্থে- ত্রিদিবাধীশ, ত্রিদিবেন্দ্র, ত্রিদিবেশ্বর, স্বরীশ্বর, স্বর্গাধিপতি, ঋভুক্ষী।
৩. উত্তম, পূত হয়েছে যজ্ঞ যার, এই অর্থে বরক্রতু, পূতক্রতু।
৪. শতসংখ্যক ক্রতু (যজ্ঞ) সম্ন্ন করেছেন যিনি, এই অর্থে শতক্রতু।
৫. বসু'র (পৃথিবী) কল্যাণের সাথে সম্পর্কিত অর্থে- বাসব।
৬. হরিৎ বর্ণের অশ্ব যার এই অর্থে- হরিদশ্ব, হরিহয়, হর্যশ্ব।
৭. অহল্যাকে ধর্ষণের কারণে গৌতম মুনির অভিশাপে তাঁর শরীরে প্রথমে সহস্র যোনী-চিহ্ন হয়, পরে চিহ্ন নয়নে রূপান্তরিত হয়। অন্যমতে তিলোত্তমাকে উত্তমরূপে পর্যবেক্ষণের জন্য, তাঁর সহস্র চোখের সৃষ্টি হয়েছিল। এই অর্থে- সহস্রনয়ন, সহস্রলোচন, সহস্রাক্ষ
৮. যোনিচিহ্ন চক্ষুতে পরিণত হয়, এই অর্থে-
নেত্রযোনী
৯. শচীর স্বামী বা প্রণয়ী,এই অর্থে- শচীন্দ্র, শচীপতি, শচীবিলাস, শচীশ।
১০. শত্রুপুরী বিদারণ করেন যিনি, এই অর্থে- পুরন্দর,পৌরন্দর।
১১. যিনি অসিরের শত্রু, এই অর্থে-
অসুরারি
১২. জম্ভা নামক অসুরের শত্রু, এই অর্থে- জম্ভারাতি, জম্ভভেদী, জম্ভারি, জম্ভাসুরনাশক।
১৩. নমুচি নামক অসুরকে হত্যা করেন, এই অর্থে প্রাপ্ত নাম- নমুচিসূদন
১৪. পাক নামক দৈত্যের বিনাশ বা শাসন করে যে, এই অর্থে- পাকনাশন, পাকশাসন।
১৫. বল নামক অসুর হত্যা করেন এ অর্থে- বলনিসূদন, বলবিনাশন, বলভিদ, বলভেদন, বলরিপু, বলসূদন, বলহা।
১৬.
বৃত্রাসুর (অহি) নামক অসুরকে হত্যা করেন, এই অর্থে- অহিদ্বিট্, অহিমার, অহিরিপু, বৃত্রঘ্ন, বৃত্রারি
১৭. বৃষ্টিকে পৃথিবীতে পতিত করেন- এই অর্থে বৃষ
১৮.
মেঘ (ঘন, জীমূত) হইয়াছে বাহন যাহার, অর্থে- ঘনবাহন, জীমূতবাহন,  মেঘবাহন

১৯. মেঘের অধিপতি অর্থে- পর্জন্য।
২০. পর্বতের (অচল, অদ্রি, গোত্র) পক্ষ কর্তন করেন, বা পর্বত ভেদ করেন, এই অর্থে- অচলভিৎ, অদ্রিভিৎ, আখণ্ডল, গোত্রভিৎ।
২১. পূর্বদিকের অধিপতি, এই অর্থে- প্রাচীপতি।
২২, যজ্ঞে যিনি বহুভাবে আহুত হন, এই অর্থে- পুরুহূত।
২৩. বাস্তু-পালয়িত (গৃহে পূজিত) অধিপতি
, এই অর্থে- বাস্তুভূমিপতি, বাস্তোস্পতি।
২৪. বৃহৎ রথ যাহার, এই অর্থে- বৃহদ্রথ।
২৫. শু (শীঘ্র) নাসীর (জয়শব্দযুক্ত) যাহার, এই অর্থে শুনাসীর।
২৬. স (শোভন) নাসীর (জয়শব্দযুক্ত) যাহার, এই অর্থে সুনাসীর।
২৭. যিনি পূজিত হন, এই অর্থে- মঘবা, মঘবান।
২৮, বজ্র পাণি (হাতে) যাহার, বা বজ্র ধারণ করেন যিনি এই অর্থে- কুলিশী, বজ্রধর, বজ্রপাণি, বজ্রী।
২৯. অদিতির পুত্র, এই অর্থে-
অদিতিজ, অদিতিতনয় অদিতিনন্দন, অদিতিপুত্র, অদিতিসূত
৩০. শ্বেত (ইন্দ্রের ঘোড়া) বাহন যাহার, এই অর্থে-
শ্বেতবাহ, শ্বেতবাহন
৩১. যিনি জয়লাভ করেন, এই অর্থে- জিষ্ণু