বিশ্বকর্মা
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে―
ইনি ছিলেন দেবশিল্পী।
বিষ্ণুপুরাণের মতে প্রভাসের ঔরসে বৃহস্পতির ভগিনীর গর্ভে বিশ্বকর্মার জন্ম হয়।
বেদে পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বকর্মা বলা হয়েছে।
বিশ্বকর্মা মূলত সৃষ্টিশক্তির রূপক নাম।
সেই অর্থে ইনি পিতা,
সর্বজ্ঞ
দেবতাদের নামদাতা।
ইনি সর্বমেধ-যজ্ঞে নিজেকে নিজের কাছে বলি দেন।
ঋগবেদের মতে–
ইনি সর্বদর্শী ভগবান।
এঁর চক্ষু,
মুখমণ্ডল,
বাহু
ও পা সর্বদিক বিদ্যমান।
বাহু ও পায়ের সাহায্যে তিনি স্বর্গ ও মর্ত্য নির্মাণ করেন।
তিনি শিল্পসমূহের প্রকাশক ও অলঙ্কারের স্রষ্টা,
দেবতাদের
বিমান-নির্মাতা।
এঁর কৃপায় মানুষ শিল্পপকলায় পারদর্শিতা লাভ করে।
ইনি উপবেদ,
স্থাপত্য-বেদের
প্রকাশক এবং চতুঃষষ্টি কলার অধিষ্ঠাতা।
তিনি প্রাসাদ,
ভবন ইত্যাদির
শিল্পী।
ইন্দের রাজসভা, যমরাজের রাজসভা, বরুণের রাজসভা, রাবণের
লঙ্কাপুরী
তিনি নির্মাণ করেছেলেন।
তিনি দেবতাদের জন্য অস্ত্র তৈরি করেন।
মহাভারতের মতে–
ইনি শিল্পের শ্রেষ্ঠ কর্তা,
সহস্র শিল্পের
আবিষ্কারক,
সর্বপ্রকার
কারুকার্য-নির্মাতা।
রামের জন্য সেতুবন্ধ নির্মাণকালে তিনি নলবানরকে সৃষ্টি করেন।
কোনো কোনো পুরাণ মতে,
বিশ্বকর্মা
বৈদিক ত্বষ্টা দেবতার কর্মশক্তিও আত্মসাৎ করেছিলেন।
এই জন্য তিনি ত্বষ্টা নামেও অভিহিত হন।
বিশ্বকর্মার কন্যার নাম ছিল সংজ্ঞা। তিনি এই কন্যাকে সুর্যের সাথে বিবাহ দেন। সংজ্ঞা সুর্যের প্রখর তাপ সহ্য করতে না পারায়, ইনি সুর্যকে শানচক্রে স্থাপন করে তাঁর উজ্জ্বলতার অষ্টমাংশ কেটে ফেলেন। এই কর্তিত অংশ পৃথিবীর উপর পতিত হলে, উক্ত অংশের দ্বারা তিনি বিশ্বকর্মা বিষ্ণুর সুদর্শনচক্র, শিবের ত্রিশূল, কুবেরের অস্ত্র, কার্তিকেয়ের শক্তি ও অন্যান্য দেবতাদের অস্ত্রশস্ত্রাদি নির্মাণ করেন। বলা হয়ে থাকে, শ্রীক্ষেত্রের প্রসিদ্ধ জগন্নাথমূর্তি বিশ্বকর্মা প্রস্তুত করেছিলেন।