সংজ্ঞা ও ছায়া
হিন্দু পৌরাণিক সত্তা বিশেষ।
বিশ্বকর্মা'র কন্যা ও
সূর্য
-এর স্ত্রী।
এঁদের প্রথম পুত্রের নাম
বৈবস্বাত।
সংজ্ঞা
সূর্যের অসহ্য তেজ সহ্য করতে না পেরে,
সূর্যকে
দেখলে চোখ নামিয়ে ফেলতেন।
এই জন্য
সূর্য
ক্রুদ্ধ হয়ে অভিশাপ দেন যে,
সংজ্ঞা তাঁর চক্ষু সংযমন করার জন্য প্রজাদের সংযমনকারী
যম-কে প্রসব করবেন।
এরপর এই অভিশাপের সূত্র সংজ্ঞা মৃত্যু দেবতা যমকে প্রসব করেন।
এরপর তিনি অত্যন্ত ভীতা হয়ে চপলভাবে সূর্যের দিকে দৃষ্টিপাত করতে লাগলেন।
তাঁর এই চপল চক্ষু দেখে সূর্য বললেন যে,
তিনি চঞ্চলস্বভাবা একটি নদী প্রসব করার অভিশাপ দেন।
এই অভিশাপের সূত্রে
সংজ্ঞা
যমী
নামক কন্যার জন্ম দেন।
এই কন্যা
যমুনা নামে প্রবাহিত হয়। এই কারণে যমী'কে অনেক সময় যমুনা বলা হয়।
যম
ও
যমী
(যমুনা) জন্মের পর,
স্বামীর রূপ ও ক্রোধ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য,
ইনি নিজের অনুরূপ ছায়া নামক এক নারীকে সৃষ্টি করেন।
এরপর সূর্য ও নিজের পুত্র-কন্যার পরিচর্যার ভার ছায়ার উপর অর্পণ করে,
পিতৃগৃহে যান।
কিন্তু সংজ্ঞার পিতা
বিশ্বকর্মা
অসন্তুষ্ট হয়ে কন্যাকে
সূর্যের কাছে ফিরে যেতে বলেন।
এরপর ইনি স্বামীর কাছে না গিয়ে উত্তর কুরুবর্ষে ঘোটকীর রূপ ধারণ করে ভ্রমণ করতে থাকেন।
সূর্য
ছায়াকে সংজ্ঞা মনে করেই তাঁর সাথে মিলিত হলে―
এঁর গর্ভে দুটি পুত্র (সাবর্ণি ও শনি) এবং একটি কন্যা (তপতী) জন্মগ্রহণ করেন।
―মার্কেণ্ডেয় পুরাণ, বৈবস্বত ও সাবর্ণির উপখ্যান।
ছায়া নিজের সন্তানদের মত সংজ্ঞার সন্তানদের প্রতিপালন করতেন না। এতে যম একদিন ক্রুদ্ধ হয়ে ছায়াকে পদাঘাত করতে উদ্যত হয়েও পরমুহূর্তেই যম ছায়ার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু ছায়া ক্ষমা না করে যমকে অভিশাপ দিলেন যে, তাঁর পা খসে যাবে। যম পিতার কাছে গিয়ে বিমাতার এই ব্যবহারের কথা বলেন। সুর্য নিজ পুত্র যমকে অভিশাপ থেকে মুক্ত না করে বলেন যে, তাঁর পায়ের মাংস নিয়ে কৃমিরা মাটিতে প্রবেশ করবে। এরপর যম, সংজ্ঞা যে তাঁর আপন মা নয়― সে কথা সূর্যকে জানালেন। সমস্ত বিবরণ গোপন রেখে ছলনা করবার জন্য সূর্য ছায়াকে অভিশাপ দিতে উদ্যত হলে, ছায়া সমস্ত কথা স্বীকার করে, সংজ্ঞার পিতৃগৃহে গমনের সমস্ত সংবাদ সূর্যকে বলে দেন।
এরপর সূর্য বিশ্বকর্মা'র কাছে গিয়ে, তাঁর স্ত্রীর (সংজ্ঞা) গৃহত্যাগের কারণ জানতে পারেন। এরপর সূর্য সমাধিস্থ হয়ে সংজ্ঞার অবস্থান এবং অশ্বীরূপ সম্পর্কে জানতে পারলেন। এরপর সূর্য বিশ্বকর্মা'র কাছে গিয়ে নিজের তেজ কমিয়ে অশ্বরূপ ধারণ করে ঘোটকীরূপিণী সংজ্ঞার সাথে মিলিত হলেন। এই মিলনের ফলে প্রথমে যুগল দেবতা অশ্বিনীকুমার ও পরে রেবন্তের জন্ম হলো। এরপর সূর্য তাঁর তেজ সংহত করাতে সংজ্ঞা নিজের রূপ ধারণ করে স্বামীগৃহে ফিরে এলেন। এর অপর নাম ছিল― অংশুধরা, অরুণ-প্রিয়া।