১৫শ শতকের তৈরি তিব্বতে প্রাপ্ত তামা, সোনা, রত্নখচিত মূর্তি। |
যম
হিন্দু পৌরাণিক সত্তা বিশেষ।
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে―
নরকের অধিপতি।
এঁর অপরাপর নাম : অন্তক, অরুণাত্মজ, অর্কতনয়, অর্কনন্দন, অর্কপুত্র, অর্কসূত,
অর্কসূনু, কৃতান্ত, দণ্ডধর, ধর্ম, যম, শমন।
এঁর সম্মুখে থাকে ত্রিকাল সংহারক মৃত্যু,
পাশে কালদণ্ড।
এই কারণে ইনি দণ্ডধর নামে পরিচিত।
এঁর দেহের রঙ সবুজ,
পরনে রক্তবর্ণ পোশাক।
ইনি পাপপূণ্যের বিচারক।
এই কাজে হিসাব-রক্ষক হিসাবে তাঁকে সাহায্য করেন চিত্রগুপ্ত।
চিত্রগুপ্তের খাতা দেখে ইনি মৃত মানুষের পাপপূণ্যের বিচার করেন।
মৃতদের আত্মা সংগ্রহের জন্য এঁর দুইজন অনুচর রয়েছে।
এঁরা হলেন- মহাচন্দ ও কালপুরুষ।
যম
সূর্য-এর ঔরসে
সংজ্ঞা'র
গর্ভে ইনি জন্মগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য
বৈবস্বাত
ছিলেন এঁদের প্রথম পুত্র।
সংজ্ঞা
সূর্যের অসহ্য তেজ সহ্য করতে না পেরে,
সূর্যকে
দেখলে চোখ নামিয়ে ফেলতেন।
এই জন্য
সূর্য
ক্রুদ্ধ হয়ে অভিশাপ দেন যে,
সংজ্ঞা তাঁর চক্ষু সংযমন করার জন্য প্রজাদের সংযমনকারী
যম-কে প্রসব করবেন।
এরপর এই অভিশাপের সূত্র সংজ্ঞা মৃত্যু দেবতা যমকে প্রসব করেন।
বেদে আছে যম তাঁর বোন যমীর সাথে দৈহিক মিলন কামনা করলে যমী তা প্রত্যাখ্যান করেন।
অন্য মতে যমীর অপর নাম যমুনা।
দেবতাদের মধ্যে ইনি সবচেয়ে পূন্যবান বলে ইনি ধর্ম নামে খ্যাত।
শান্তি এনে দেন বলে এঁর অপর নাম শমন।
জীবনের অন্ত এনে দেন বলে ইনি কৃতান্ত বা অন্তক।
পিতৃপুরুষের উপর এঁর প্রাধান্য আছে বলে ইনি পিতৃপতি।
এঁর পুরীর নাম সংযমনী।
ঘটনাক্রমে যম
তাঁর বিমাতা ছায়াকে পদাঘাত করেছিলেন,
এই কারণে ছায়া যমকে অভিশাপ দেন।
এই অভিশাপের ফলে যমের দুই পায়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
যম বিষয়টি সূর্যকে জানালে,
সূর্য যমের ক্ষত পরিষ্কার করার জন্য একটি কুকুর নিয়োগ করেন।
কিছুদিন পর যম এই ক্ষত থেকে আরোগ্য লাভ করেন।
কিন্তু পায়ের দুর্বলতার কারণে ইনি মহিষে চড়ে চলাচল করতেন।
একবার ঋষি
মাণ্ডব্য এক পতঙ্গের দেহে তৃণ প্রবেশ করালে- যমের আদেশে ঋষি শূলবিদ্ধ হন।
পরে ঐ ঋষি যমকে মর্ত্যে জন্মগ্রহণের অভিশাপ দেন।
এই কারণে যম ব্যাসদেবের ঔরসে পাণ্ডবকুলের এক দাসীর গর্ভে বিদুররূপে জন্মগ্রহণ করেন।
যম পতিব্রতা সাবিত্রীর ব্যবহারে ও স্তবে সন্তুষ্ট হয়ে তাঁর মৃত স্বামী সত্যবানকে
জীবিত করেন।
সেই সাথে সাবিত্রীর রাজ্যহারা শ্বশুর ও তার রাজ্য ফিরিয়ে দেন।
কঠ উপনিষদের মতে, ঘটনক্রমে
বাজশ্রবস
(উদ্দালক) রেগে গিয়ে তাঁর পুত্র
নচিকেতাকে
বলেন ''তোমাকে
যমের উদ্দেশ্যে দান করলাম'। এর ফলে
নচিকেতার মৃত্যু হয়। পরে
যম তাঁকে আত্মা এবং ব্রহ্ম বিষয়ক জ্ঞান দান করেন।
যম দক্ষের ১১টি মেয়েকে বিবাহ করেন। এঁদের গর্ভে যমের ১১টি পুত্র জন্মে। এঁরা হলেন- শ্রদ্ধার গর্ভে সত্য, মৈত্রীর গর্ভে প্রসাদ, দয়ার গর্ভে অভয়, শান্তির গর্ভে গর্ব, ক্রিয়ার গর্ভে যোগ, উন্নতির গর্ভে দর্প, বুদ্ধির গর্ভে অর্থ, মেধার গর্ভে স্মৃতি, তিতিক্ষার গর্ভে মঙ্গল, লজ্জার গর্ভে বিনয়, মূর্তির গর্ভে নরনারায়ণ। এছাড়া কুন্তীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন যুধিষ্ঠির।