অশ্বিনীকুমার
সনাতন হিন্দু ধর্মের
বৈদিক ও পৌরাণিক দেবতা। এঁরা যমজ দেবতা হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।
ঋগ্বেদের প্রথম
মণ্ডলের তৃতীয় সূক্তিতে প্রথম এই দেবতাদ্বয়কে ক্ষিপ্রপাণি, শুভকর্মপালক, বিস্তীর্ণ
ভূজ বিশিষ্ট দেবসত্তা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যাস্কের মতে- অর্ধরাত্রির পর
প্রভাতের পূর্বে আলো ও অন্ধকারের একটি মিশ্র দশা উপস্থিত হয়। এই আলো ও অন্ধকারকে
যমজ হিসেবে অশ্বীদয় বলা হয়েছে। আবার আলোকরশ্মিকে অনেকক্ষেত্রে অশ্বী বলা হয়েছে।
সূর্যের আলো এবং ঊষার আলো উভয় আকশের দিকে ধাবমান হয় বলে- এরা অশ্বীদয়। অশ্বিন
শব্দের অর্থ আলোকযুক্ত।
এই অশ্বিদ্বয়কে দৈবশক্তি বা দৈবসত্তা বিবেচনায় বেদে অশ্বিনী শুভকর্মপালক হিসেবে
পূজ্য দেবতা হিসেবে বন্দিত হয়েছে। আলো দ্রুতগামী, তাই বলা হয়েছে 'ক্ষিপ্রপাণি'।
আবার আলো অগণন কিরণ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। তাই বলা হয়েছে- 'বিস্তীর্ণ ভূজ বিশিষ্ট অশ্বীদয়।
পৌরাণিক যুগে এসে- অশ্বিনী কুমার।
তিনি স্বর্গের চিকিৎসক।
পিতার নাম সূর্য ও
মাতার নাম সংজ্ঞা ।   পৌরাণিক
কাহিনি মতে-
সংজ্ঞা
সূর্যের অসহ্য তেজ সহ্য করতে না পেরে,
সূর্য কে
দেখলে চোখ নামিয়ে ফেলতেন ।
এই জন্য
সূর্য
ক্রুদ্ধ হয়ে অভিশাপ দেন যে ,
সংজ্ঞা তাঁর চক্ষু সংযমন করার জন্য প্রজাদের সংযমনকারী
যম- কে প্রসব করবেন ।
এরপর এই অভিশাপের সূত্র সংজ্ঞা মৃত্যু দেবতা যমকে প্রসব করেন ।
এরপর তিনি অত্যন্ত ভীতা হয়ে চপলভাবে সূর্যের দিকে দৃষ্টিপাত করতে লাগলেন ।
তাঁর এই চপল চক্ষু দেখে সূর্য বললেন যে ,
তিনি চঞ্চলস্বভাবা একটি নদী প্রসব করার অভিশাপ দেন ।
এই অভিশাপের সূত্রে
সংজ্ঞা ,
যমী
নামক কন্যার জন্ম দেন ।
এই কন্যা
যমুনা নামে প্রবাহিত হয়। এই কারণে যমী'কে অনেক সময় যমুনা বলা হয়।
যম
ও
যমী
(যমুনা) জন্মের পর ,
স্বামীর রূপ ও ক্রোধ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ,
ইনি নিজের অনুরূপ ছায়া নামক এক নারীকে সৃষ্টি করেন ।
এরপর সূর্য ও নিজের পুত্র-কন্যার পরিচর্যার ভার ছায়ার উপর অর্পণ করে ,
পিতৃগৃহে যান ।
কিন্তু
সংজ্ঞা র পিতা
বিশ্বকর্মা
অসন্তুষ্ট হয়ে কন্যাকে
সূর্যে র কাছে ফিরে যেতে বলেন ।
এরপর ইনি স্বামীর কাছে না গিয়ে উত্তর কুরুবর্ষে ঘোটকীর রূপ ধারণ করে ভ্রমণ করতে থাকেন ।
ছায়া নিজের
সন্তানদের মত
সংজ্ঞা র সন্তানদের প্রতিপালন করতেন না ।
এতে
যম
একদিন ক্রুদ্ধ হয়ে ছায়াকে পদাঘাত করতে উদ্যত হয়েও পরমুহূর্তেই
যম
ছায়ার কাছে
ক্ষমা প্রার্থনা করেন ।
কিন্তু ছায়া ক্ষমা না করে যমকে অভিশাপ দিলেন যে ,
তাঁর পা খসে যাবে ।
যম পিতার কাছে গিয়ে বিমাতার এই ব্যবহারের কথা বলেন ।
সুর্য নিজ পুত্র যমকে অভিশাপ থেকে মুক্ত না করে বলেন যে ,
তাঁর পায়ের মাংস নিয়ে কৃমিরা মাটিতে প্রবেশ করবে ।
এরপর যম,
সংজ্ঞা যে তাঁর আপন মা নয়
― সে কথা সূর্যকে জানালেন ।
সমস্ত বিবরণ গোপন রেখে ছলনা করবার জন্য সূর্য ছায়াকে অভিশাপ দিতে উদ্যত হলে ,
ছায়া সমস্ত কথা স্বীকার করে,
সংজ্ঞা র পিতৃগৃহে গমনের সমস্ত সংবাদ সূর্যকে বলে দেন ।
এরপর
সূর্য
বিশ্বকর্মা 'র কাছে
গিয়ে, তাঁর স্ত্রীর ( সংজ্ঞা )
গৃহত্যাগের কারণ জানতে পারেন।
এরপর সূর্য সমাধিস্থ হয়ে
সংজ্ঞা র অবস্থান এবং অশ্বীরূপ সম্পর্কে জানতে পারলেন ।
এরপর সূর্য
বিশ্বকর্মা' র কাছে গিয়ে নিজের তেজ কমিয়ে অশ্বরূপ ধারণ করে ঘোটকীরূপিণী
সংজ্ঞার সাথে মিলিত হলেন ।
এই মিলনের ফলে প্রথমে যুগল দেবতা অশ্বিনীকুমারদ্বয় ও পরে রেবন্তের জন্ম হয় ।
― মার্কেণ্ডেয়
পুরাণ, বৈবস্বত ও সাবর্ণির উপখ্যান।
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীতে এরা অশ্বিনীকুমারদ্বয় নামে
খ্যাত ।
পরবর্তী সময়ে এরা
চিকিৎসাবিদ্যায় সুপণ্ডিত হয়ে উঠলে– স্বর্গবৈদ্য উপাধিতে ভূষিত হন ।
চিকিৎসা বিষয়ক এদের
রচিত গ্রন্থের নাম হলো চিকিৎসা-সার-তত্ত্ব ।
আয়োধধৌম্য ঋষির
উপমন্যু
নামক শিষ্য যখন
ক্ষুধা সহ্য না করতে পরে আকন্দগাছের পাতা খেয়ে অন্ধ হয়ে যান,
উপমন্যু এই কুমারদ্বয়ের
আরাধনা করেন। এরপর এঁরা উপমন্যুর
চোখ ভালো করে দেন এবং
উপমন্যুকে কিছু উৎকৃষ্ট
বর দেন। [সূত্র: মহাভারত। আদিপর্ব্ব। উপমন্যু উপখ্যান]
এরা দেখতে একইরকম ছিলেন এবং
সবসময় এক সাথেই থাকতেন ।
অত্যন্ত রূপবান হিসাবে
এঁরা খ্যাতি লাভ করেছিলেন ।
পাণ্ডুপত্নী মাদ্রী
ক্ষেত্রজ সন্তান লাভের জন্য কুন্তীর শেখানো মন্ত্রের সাহায্যে এই দুই ভাইকে আহ্বান
করেছিলেন ।
উভয় দেবতার সাথে মিলিত হয়ে
মাদ্রী দুটি সন্তান লাভ করেছিলেন ।
এই সন্তানদ্বয় হলো–
নকুল ও সহদেব ।  
এঁরা একটি সুবর্ণ রথে দিনে তিনবার ও রাতে তিনবার পৃথিবী পরিভ্রমণ করেন ।
আশ্বিনীকুমারদ্বয় সম্পর্কে বেশ মতভেদ রয়েছে।
১ .
নিরুক্তকার যস্কের মতে:
চন্দ্র ও সূর্য ।
২ .
বেদের মতে: পৃথিবী ও
স্বর্গ ,
দিবা ও রাত্রি ,
সূর্য ও চন্দ্র ,
বিবস্বান ও কারণ্যুর
পুত্র ,
আকাশের পুত্র ,
সিন্ধুগর্ভ সম্ভূত ,
দক্ষ সম্ভূত ইত্যাদি ।
এঁর অপরাপর নাম: অব্দিজ ,
অরুণাত্মজ ,
অর্কতনয় ,
অর্কনন্দন ,
অর্কপুত্র ,
অর্কসূত ,
অর্কসূনু ,
অশ্বিনীকুমার ,
অশ্বিনীপুত্র ,
অশ্বিনীসূত ,
অশ্বিনীসূত ।