ব্রহ্মা
বানান বিশ্লেষণ:
ব্+র্+অ+ম্+হ+আ।
উচ্চারণ:
brom.ɦa
(ব্রোম্.হা)
শব্দ-উৎস:
সংস্কৃত
ব্রহ্মা>বাংলা
ব্রহ্মা।
রূপতাত্ত্বিক
বিশ্লেষণ: ব্রহ্মণ্ {Öবৃন্হ
(দীপ্তি পাওয়া) +মন্
(মনিন্),
কর্তৃবাচ্য}>ব্রহ্মা
পদ:
বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{
|
হিন্দু
দেবতা
|
দেবতা
|
দৈবসত্তা
|
অতিপ্রাকৃতিক সত্তা
|
বিশ্বাস
|
প্রজ্ঞা
|
জ্ঞান |
মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা |
বিমূর্তন
|
বিমূর্ত-সত্তা
|
সত্তা
|}
অর্থ:
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি
মতে
ইনি আদি
দেবতাদের
একজন।
এর অপরাপর নাম-
অ,
অউম,
জ্ঞ,
ব্রহ্মা।
সমনাম:
এর অপরাপর নাম :
অ,
অকার,
অগজন্ম,
অঘ্ন,
অক্তি,
অব্জজ,
অব্যক্ত,
অম্বুজাসন,
অম্ভোজন্মজনি,
অম্ভোজযোনি,
অযোনি,
অযোনিজ,
অষ্টকর্ণ,
অষ্টাশ্রবাঃ,
কঞ্জ,
কঞ্জর,
কমলযোনি,
কমলাসন,
চতুরানন,
চতুর্বক্ত,
চতুর্মুখ,
চিদাকাশ,
চিদাত্মা,
চিদানন্দ,
চিদাম্বর,
চিদ্রূপ,
জগদীশ্বর,
জয়পাল,
ত্রিগুণাতীত,
পদ্মপাণি,
পদ্মভূ,
পদ্মযোনি,
পদ্মলাঞ্ছন,
পদ্মেশয়,
পদ্মোদ্ভব,
পরব্রহ্ম,
পরমেষ্ঠী,
প্রজাপতি,
প্রজাসৃক,
প্রপিতামহ,
বিধাতৃ,
বিভূ,
বিরিঞ্চি,
ব্রহ্মা,
লোকনাথ,
লোকপিতা,
লোকেশ,
সনৎ,
সনাতন,
সৃষ্টিকর্তা,
স্বভূ,
স্বয়ম্ভু,
স্রষ্টা,
হংসবাহন,
হংসযান,
হংসরথ,
হংসারুঢ়
হিরণ্ময়,
হিরণ্যগর্ভ,
হেমাঙ্গ।
হিন্দু ধর্মমতে ব্রহ্মার পরিচয়
সৃষ্টির আদিতে
ব্রহ্ম এই দেবতাকে সৃষ্টি করেন।
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ
দ্বিতীয়
অধ্যায়ে
রুদ্র, ব্রহ্মা এবং অন্যান্য জাগতিক উপাদান ব্রহ্ম থেকে
সৃষ্টি হওয়ার বিষয় বর্ণিত হয়েছে।
মহাভারতের মতে–
'প্রথমতঃ এই বিশ্বসংসার কেবল
ঘোরতর অন্ধকারে আবৃত ছিল।
অনন্তর সমস্ত বস্তুর বীজভূত এক
অণ্ড প্রসূত হইল। ঐ অণ্ডে অনাদি, অনন্ত, অচিন্তনীয়, অনির্ব্বচনীয়, সত্যস্বরূপ,
নিরাকার, নির্ব্বিকার, জ্যোতির্ময়
ব্রহ্ম
প্রবিষ্ট হইলেন। অনন্তর ঐ অণ্ডে ভগবান্ প্রজাপতি ব্রহ্মা স্বয়ং জন্ম পরিগ্রহ
করিলেন।' [
সৃষ্টিবর্ণন,
অনুক্রমণিকাধ্যায়, আদিপর্ব, মহাভারত]
বিষ্ণুপুরাণের প্রথম অংশের তৃতীয় অধ্যায়ে
দৈববৎসর
-এর হিসেব
অনুসারে ব্রহ্মার
আয়ু ১০০ বৎসর।
চতুর্থ অধ্যায়ে
মহাভারতের
শান্তিপপর্বের
অষ্টাধিকদ্বিশততম
অধ্যায়ের
প্রজাপতিবিবরণ-সৃষ্টিবিস্তারে
বলা হয়েছে–
'প্রথমে কেবল একমাত্র সনাতন ভগবান্
ব্রহ্মা বিদ্যামান ছিলেন। অনন্তর তাঁহার
মরীচি,
অত্রি,
অঙ্গিরা,
পুলস্ত্য,
পুলহ,
ক্রতু ও
বশিষ্ঠ এই সাত অগ্নিতুল্য পুত্রের উৎপত্তি হয়।
সমগ্র বিশ্ব এক ঘোরতর অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল,
পরমব্রহ্ম নিজ তেজে সেই
অন্ধকার দূর করে জল সৃষ্টি করলেন।
সেই জলে সৃষ্টির বীজ
নিক্ষেপ করলে একটি অতিকায় সুবর্ণ অণ্ড বা ডিম সৃষ্টি হয়।
সেই অণ্ডের মধ্যে
পরমব্রহ্ম স্বয়ং প্রবেশ করেন।
এরপর অণ্ড দুই ভাগে বিভক্ত হয়।
এর একভাগ দ্বারা আকাশ ও
অপর ভাগ দ্বারা ভূমণ্ডল তৈরি হয়।
এরপর ব্রহ্মা মন থেকে
দশজন প্রজাপতি সৃষ্টি করেন।
এই দশজন প্রজাপতি হলেন-
অঙ্গিরা,
অত্রি,
ক্রতু,
দক্ষ,
নারদ,
পুলস্ত্য,
পুলহ,
বশিষ্ঠ,
ভৃগু ও মরীচি।
ব্রহ্মার আদেশে এঁরা
বিভিন্ন প্রাণী সৃষ্টি করলেন।
বাকি একজন অর্থাৎ নারদকে
সৃষ্টি রক্ষার ভার দিলেন। কিন্তু ব্রহ্ম-সাধনায় বিঘ্ন হবে বলে নারদ সে ভার গ্রহণ
করলেন না।
এই কারণে ব্রহ্মা তাঁকে মানুষ ও
গন্ধর্বরূপে জন্মগ্রহণ করার অভিশাপ দিলেন।
আদিতে তাঁর পাঁচটি মাথা ছিল।
কিন্তু একবার
মহাদেবের
প্রতি অসম্মানজনক উক্তি করায়
মহাদেব
তাঁর নখ দিয়ে ব্রহ্মার একটি মাথা বিচ্ছিন্ন করেন।
সেই থেকে ইনি চার মাথার
অধিকারী হন।
এঁর চারটি বাহু এবং শরীর
রক্তবর্ণ।
এঁর বাহন হংস।
এঁর স্ত্রীর নাম
সরস্বতী
এবং তাঁর দুই কন্যার নাম দেবসেনা ও দৈত্যসেনা।
বেদে ব্রহ্মা শব্দটি নেই।
সেখানে সৃষ্টিকর্তাকে
হিরণ্যগর্ভা প্রজাপতি হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
ব্রহ্মাকে তপস্যার
দ্বারা সন্তুষ্ট করলে ইনি অমরত্ব ছাড়া আর সকল বরই প্রদান করেন।
এই কারণে বিভিন্ন সময়
তাঁর বর লাভ করে দৈত্য,
দানব ও অসুরেরা বহু অকল্যাণের
কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
তবে প্রতিটি বরের মধ্যেই
ছিল একটি গোপন ফাঁক।
আর সেই ফাঁক বের করে
দেবতারা দৈত্য,
দানব ও অসুরদের দমন বা হত্যা
করতে সক্ষম হয়েছেন।
এঁর হৃদয় থেকে অনঙ্গ জন্মগ্রহণ করে। পরে অনঙ্গের শরে জর্জরিত হয়ে ইনি নিজ কন্যা শতরূপাকে বিবাহ করেন। পরে ব্রহ্মার অভিশাপে, মহাদেবের ক্রোধে অনঙ্গ ভস্মীভূত হন। দেখুন : অনঙ্গ, শতরূপা।
দশরথ পুত্রকামনায় যে পুত্রেষ্টি
যজ্ঞ সম্পন্ন করেছিলেন। সেই যজ্ঞে দেবতারা তাঁদের যজ্ঞভাগ গ্রহণের জন্য উপস্থিত
ছিলেন। এই সময় দেবতারা রাবণের অত্যাচারের কথা বলে প্রতিকার প্রার্থনা করেন। এই সময়
বিষ্ণু উপস্থিত হলে- ইনি বিষ্ণুকে চার অংশে বিভক্ত হয়ে দশরথের তিনি স্ত্রীর গর্ভে
জন্মগ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেন। যাতে এই পুত্ররা কিভাবে রাবণকে হত্যা করবেন তার
উপায় জানান।
[ষোড়শ সর্গ।
বালখণ্ড। রামায়ণ]
ব্রহ্মার উৎসাহে এবং পরামর্শে
ব্যাসদেব
গণেশ-এর
সাহায্য নিয়ে মহাভারত রচনা করেছিলেন।
[সূত্র: মহাভারত। আদিপর্ব।নৈমিষারণ্যে সূতের
আগমন |
সৃষ্টিবর্ণন
|
ভারতলেখনার্থ গণেশের স্মরণ
|]
সমুদ্রমন্থনের সময় তিনি দেবতাদের পরামর্শক হিসেবে ছিলেন।
তাঁর পরামর্শে এবং বিষ্ণুর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে সমুদ্রমন্থন শেষে অমৃতলাভের মতো
ঘটনা ঘটেছিল।
[সূত্র: মহাভারত। আদিপর্ব। সপ্তদশ-অষ্টাদশ অধ্যায়]
পূর্ব-যুগে ঋক্ষরাজ জাম্ববানকে ব্রহ্মা সৃষ্টি করেছিলেন। ব্রহ্মার হাই তোলার সময় মুখ থেকে জাম্ববান জন্মগ্রহণ করেন। [সূত্র: রামায়ণ। বালখণ্ড। ষোড়শ সর্গ। ]