বাচ্য [বাচ্.‌চো]
. ব্যাকরণে বর্ণিত পরিভাষা বিশেষ। ইংরেজি ব্যাকরণের সমতুল্য শব্দ voice। বাক্যের ক্রিয়ার কার্যের সাথে বিশেষ সম্বন্ধযুক্ত পদ হলো বাচ্য। বাচ্য চার প্রকার। যথা :  কর্তৃবাচ্য
,  কর্মবাচ্য, ভাববাচ্য এবং কর্মকর্তৃবাচ্য।

সাধারণত সংস্কৃত ব্যাকরণে কৃৎপ্রত্যয়-জাত শব্দের সাথে শব্দের বাচ্য উল্লেখ করা হয়। মূলত শব্দ তৈরির পর উক্ত শব্দ বাক্যে কি কি অর্থে ব্যবহৃত হওয়ার যোগ্যতা লাভ করে, তার নির্দেশ পাওয়া যায় এই বাচ্য নির্দেশে।
এই বিচারে শব্দের বাচ্যগুলো হলো- কর্তৃবাচ্য, কর্মবাচ্য, করণবাচ্য, অধিকরণবাচ্য, ভাববাচ্য।


অধিকরণবাচ্য
প্রত্যয়জাত কোনো শব্দের অর্থগত দিক যখন কোনো স্থান, বিষয় বা সময়কে নির্দেশ করে, তখন নির্দেশিত শব্দটিকে অধিকরণবাচ্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যেমন
                        আকাশ = আ-কাশ্ + অ (ঘঞ্), অধিকরণবাচ্য


করণবাচ্য
প্রত্যয়জাত কোনো শব্দের অর্থগত দিক যখন 'কোনো কিছুর দ্বারা' অর্থ প্রকাশ করে, তখন তা করণবাচ্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যেমন
                       
বিশেষ = {বি- Öশিষ্ (শেষ থাকা, শেষ রাখা) + অ (অ), করণবাচ্য


কর্তৃবাচ্য
বাক্যে যখন কোনো বাক্যের উপস্থাপিত ক্রিয়া কর্তার দ্বারা সম্পন্ন হয় এবং উক্ত ক্রিয়া কর্তার অনুগামী হয় বলে প্রতীয়মান হয়, তখন তাকে কর্তৃবাচ্য বলা হয়। ইংরেজি ব্যাকরণের সমতুল্য শব্দ (Active voice)। যেমন- সে আসে। এখানে সে কর্তৃবাচ্য।

কর্তৃবাচ্যের বৈশিষ্ট্য :
    ১. কর্তৃবাচ্যে কর্তা প্রথমা বিভক্তির হয়।
    ২. কর্তৃবাচ্য যে কোনো পুরুষ (উত্তম, মধ্যম, নাম) হতে পারে এবং তা ক্রিয়াপদকে প্রভাবিত করে।

প্রত্যয়জাত কোনো শব্দ, অর্থের বিচারে কোনো বাক্যে কর্তা হিসাবে ব্যবহারের গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে, তখন ওই শব্দটি কর্তৃবাচ্য হিসাবে বিবেচিত হয়। যেমন

         অংশ  অংশ্ (ভাগ করা) + অক (ণ্বুল), কর্তৃবাচ্য


কর্মবাচ্য
যখন বাক্যে ব্যবহৃত কর্ম প্রধান হয়ে ওঠে এবং কর্তার চেয়ে কর্মের সাথে ক্রিয়ার সম্পর্ক মূখ্য হয়ে ওঠে বলে মনে হয়, তখন ক্রিয়াপদটি কর্মবাচ্যের ক্রিয়া (Passive Voice) বলা হয়।  

 

১. এই জাতীয় বাক্যে তৃতীয়া বিভক্তি (দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক ইত্যাদি) দিয়ে কর্তাকে আবদ্ধ করা হয় এবং ক্রিয়াপদেরও পরিবর্তন ঘটে।

       যেমন- আমার দ্বারা কাজটি সম্পন্ন হবে।

২. কখনো কখনো বাক্যে কর্তা অনুপস্থিত থাকে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিবাচক বা প্রাণিবাচক হলে দ্বিতীয়া/চতুর্থী বিভক্তি হয়।
       যেমন-
       কর্তৃবাচ্য : আমাকে দেখা যায়
       কর্মবাচ্য : আমায় দেখা হয়


৩. দ্বিকর্মক ক্রিয়ার ক্ষেত্রে মুখ্য কর্ম কর্তা হয়, গৌণকর্ম দ্বিতীয়া/চতুর্থী বিভক্তিযুক্ত হয়ে থেকে যায়।
      কর্তৃবাচ্য : ভিখারিকে তিনি টাকা দিলেন।
      কর্মবাচ্য : তাঁর দ্বারা ভিখারিকে টাকা দেওয়া হলো।

প্রত্যয়জাত কোনো শব্দ, অর্থের বিচারে কোনো বাক্যে কর্ম হিসাবে ব্যবহারের গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে, তখন ওই শব্দটি কর্মবাচ্য হিসাবে বিবেচিত হয়। যেমন
            
অংশ =অংশ্ (ভাগ করা) +অ (অ),,কর্মবাচ্য}


ভাববাচ্য
যখন বাক্যে ব্যবহৃত পদের ভিতর ক্রিয়াপদই প্রধান হয়ে প্রতিভাত হয়, তখন ব্যবহৃত পদটি ভাববাচ্য হিসাবে বিবেচিত হয়। 

প্রত্যয়জাত কোনো বিশেষ্য পদে ক্রিয়ার ভাব বিদ্যমান থাকে, তখন তা  ভাববাচ্য বিবেচিত হয়। যেমন
              গ্রহণ=গ্রহ্ (গ্রহণ করা) +অন্ (ল্যুট),  ভাববাচক