এই দুই পক্ষীর জন্মের কারণ
মহাভারতেই পাওয়া যায়। একবার
কশ্যপ পুত্রলাভের আশায় একটি মহাযজ্ঞ করেন। উক্ত যজ্ঞে সাহায্য করার জন্য দেবতাগণ,
ঋষিগণ ও গন্ধর্বগণ অংশগ্রহণ করেছিলেন।
ইন্দ্র
নিজের ক্ষমতাবলে প্রচুর কাঠ যোগাড় করে আনার সময় দেখতে পান যে, ক্ষুদ্রাকার
বালখিল্য
ঋষিরা সমবেতভাবে একটি পত্রবৃন্ত আনার চেষ্টা করছিলেন। উল্লেখ্য
বালখিল্যরা
উপাসনার জন্য প্রায় অনাহারে থাকতেন। এই কারণে তাঁরা দুর্বল ছিলেন। এ ছাড়া এঁরা
আকারে এতটাই ক্ষুদ্র ছিলেন যে, গরুর পায়ের চাপে মাটিতে যে গর্ত হয়, তাতে জমে থাকা
পানিতে ডুবে যেতেন। বলাই বাহুল্য এরূপ
বালখিল্যদের
একটি পত্রবৃন্ত সংগ্রহ করা এবং তা বহন করে নিয়ে যাওয়াটা অনেক কঠিন ছিল।
ইন্দ্র
বালখিল্যদের
এই পত্রবৃন্ত সংগ্রহের দৃশ্য দেখে উপহাস করেন। এতে
বালখিল্যরা
অপমানিত হন, এবং ইন্দ্রের চেয়ে শক্তিশালী পুত্র কামনায় যজ্ঞ করেন। বিষয়ট
ইন্দ্র
জানতে পেরে, কশ্যপের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। কশ্যপ ইন্দ্রের অনুরোধে
বালখিল্যদের
কাছে এসে কার্যসিদ্ধির প্রার্থনা করলেন।
বালখিল্যরা
এ প্রার্থনা মঞ্জুর করেন। এরপর কশ্যপ
বালখিল্যদের
বলেন যে,
ইন্দ্রকে
ত্রিভুবনের নিয়ন্ত্রণ অধিকার
ব্রহ্মা
দিয়েছেন। সুতরাং
ইন্দ্রের
চেয়ে শক্তিশালী
কেউ হলে,
ব্রহ্মার
নিয়ম লঙ্ঘিত হবে। তাই বালখিল্যদের ইন্দ্র হবে পক্ষীদের ইন্দ্র। যেহেতু
বালখিল্যরা
কশ্যপের পুত্রকামনায় যজ্ঞ করছিলেন, তাই এক্ষেত্রে কি করা উচিৎ, তা বিবেচনার ভার
কশ্যপকেই প্রদান করেন। এর কিছুদিন পর
বিনতা
যখন পুত্রকামনায় ঋতুস্নান শেষে কশ্যপের কাছে আসেন। তখন কশ্যপ
বিনতাকে
জানান যে,
বালখিল্যদের
প্রার্থনা অনুসারে তাঁর গর্ভে দুটি পুত্র জন্মগ্রহণ করবে। এই পক্ষীরূপী ওই দুই
পুত্র পক্ষীজাতির ইন্দ্র হবে।
[সূত্র:
মহাভারত। আদিপর্ব। একত্রিংশ অধ্যায়]
বালখিল্যদের
যজ্ঞানুসারে এবং বিনতার প্রার্থনা অনুসারে,
যথাসময়ে
বিনতা দুটি ডিম প্রসব করেন।
একই সময়ে
কদ্রুও এক সহস্র
ডিম প্রসব করেন। পাঁচশ বৎসর পর
কদ্রুর ডিম থেকে এক হাজার নাগ পুত্রদের জন্ম হয়। কিন্তু
এই সময়ে
বিনতার ডিম
দুটি থেকে থেকে কোনো সন্তানের জন্ম হয় নি। তাই রাগে দুঃখে
বিনতা
একটি ডিম ভেঙে ফেললেন। এই ভাঙা ডিম থেকে
ঊর্ধ্ব-ভাগ সম্পূর্ণ ও নিম্নভাগ অসম্পূর্ণ হয়ে
অরুণের জন্ম হয়। অসময়ে এই ডিম ভাঙার
জন্য
অরুণ তাঁর মাকে অভিশাপ দিয়ে বলেন যে, পাঁচশত বৎসর
কদ্রু'র দাসী হয়ে থাকতে হবে।
অরুণ আরো বলেন যে, যদি অসময়ে দ্বিতীয় ডিমটি না ভাঙা হয়, তবে উক্ত ডিম থেকে অপর যে
সন্তান জন্মগ্রহণ করবে, সেই পুত্রই
বিনতার দাসত্ব মোচন করবে। অরুণের বাক্যানুসারে
অপর ডিমটি থেকে
গরুড়-এর জন্ম হয়।
[সূত্র: মহাভারত। আদিপর্ব। ষোড়শ
অধ্যায়। অরুণ ও গরুড়ের জন্ম]
একবার
উচ্চৈঃশ্রবার লেজের বর্ণ নিয়ে
কশ্যপের দুই স্ত্রী
কদ্রু ও
বিনতার
মধ্যে বিতর্ক
উপস্থিত হয়। এই তর্কে
কদ্রু
দাবি করেন অশ্বের লেজ কালো ও এবং
বিনতা
বলেন সাদা। এই বিষয়ে উভয়ই নিজ নিজ দাবিত অনড় থাকলে, পরের দিন এই বিষয়টি
মীমাংসার জন্য উভয়ই শর্ত সাপেক্ষে রাজী হন। শর্তটি ছিল- এই তর্কে যিনি জয়ী হবেন,
তাঁর অধীনে অপরজনকে দাসত্ব করতে হবে।
বাড়ি ফিরে
কদ্রু
তাঁর নাগপুত্রেদের বলেন
যে, আগামীকাল যখন উচ্চৈঃশ্রবার লেজের রঙ পরীক্ষা করা হবে, তখন নাগরা যেন,
উচ্চৈঃশ্রবার লেজে জড়িয়ে থাকে। যাতে
উচ্চৈঃশ্রবার লেজের বর্ণ কালো দেখায়। মায়ের এই আদেশ যে সকল নাগ অস্বীকার করে,
কদ্রু তাদের অভিশাপ দিয়ে
বলেন যে, মাতৃআদেশে লঙ্ঘনকারী নাগেরা পাণ্ডুবংশীয়
জনমেজয়ের সর্পসত্রে অগ্নিদগ্ধ
হবে।
কদ্রু 'র অভিশাপের কথা শুনে
কশ্যপ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। পরে ব্রহ্মা তাঁকে বলেন যে, বিষধর নাগের কারণে প্রজাদের
জীবন বিনষ্ট হয়। এরা বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে জগৎ পরিপূর্ণ করে ফেলেছে। সুতরাং
কদ্রু'র এই অভিশাপ জগতের
কল্যাণ বয়ে আনবে।
ব্রহ্মার
এই
কথায়
কশ্যপ
সান্ত্বনা লাভ করেন। এরপর
ব্রহ্মা কশ্যপকে বিষহরী বিদ্যা দান করেন।
[সূত্র: মহাভারত। আদিপর্ব। বিংশ-একবিংশ
অধ্যায়]