কদ্রু
বানান বিশ্লেষণ: ক্+অ+দ্+র্+উ।
উচ্চারণ:
ko
.ru (কোদ্.দ্রু)
শব্দ-উৎস:
সংস্কৃত ्रु (কদ্রু)>বাংলা কদ্রু
রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ: Öকদ্ (বিবশ) + রু, কর্তৃবাচ্য
পদ: বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { |  হিন্দু পৌরাণিক সত্তা | ভারতীয় পৌরাণিক সত্তা | পৌরাণিক সত্তা | কাল্পনিক সত্তা | কল্পনা | সৃজনশীলতা | কর্মক্ষমতা | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা | বিমূর্তন  | বিমূর্ত-সত্ত | সত্তা |}

হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র বিশেষ। তিনি দক্ষ নামক প্রজাপতির কন্যা ছিলেন। কশ্যপ নামক ঋষি তাঁকে এবং তাঁর অপর বোন বিনতাকে বিবাহ করেন। একবার উভয় স্ত্রীর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে, কশ্যপ উভয়কে বর দিতে ইচ্ছা করেন। কদ্রু বলশালী সহস্র নাগপুত্র ও বিনতা কদ্রুপুত্র অপেক্ষা বলশালী এবং তেজস্বী দুটি পুত্র প্রার্থনা করলেন। কশ্যপ সেই বরই মঞ্জুর করেন।

যথাসময়ে
কশ্যপের কদ্রু এক সহস্র ও বিনতা দুটি ডিম প্রসব করলেন। পাঁচশ বৎসর পর কদ্রুর ডিম থেকে এক হাজার নাগ পুত্রদের জন্ম হলো। কিন্তু বিনতার ডিম থেকে কোন সন্তানের জন্ম হলো না বলে- তিনি একটি ডিম ভেঙে ফেললেন। এই ভাঙা ডিম থেকে ঊর্ধ্ব-ভাগ সম্পূর্ণ ও নিম্নভাগ অসম্পূর্ণ হয়ে অরুণের জন্ম হয়। অসময়ে এই ডিম ভাঙার জন্য অরুণ তাঁর মাকে অভিশাপ দিয়ে বলেন যে, পাঁচশত বৎসর কদ্রু'র দাসী হয়ে থাকতে হবে। অরুণ আরো বলেন যে, যদি অসময়ে দ্বিতীয় ডিমটি না ভাঙা হয়, তবে উক্ত ডিম থেকে অপর যে সন্তান জন্মগ্রহণ করবে, সেই পুত্রই বিনতার দাসত্ব মোচন করবে। অরুণের বাক্যানুসারে অপর ডিমটি থেকে গরুড়-এর জন্ম হয়।
        [সূত্র: মহাভারত। আদিপর্ব। ষোড়শ অধ্যায়। অরুণ ও গরুড়ের জন্ম]

এরপর একদিন
উচ্চৈঃশ্রবা নামক অশ্বের লেজের বর্ণ নিয়ে কদ্রুর সাথে বিনতার তর্ক উপস্থিত হলে- কদ্রু অশ্বের লেজ কালো ও বিনতা সাদা বলেন। পরের দিন এই বিষয়টি মীমাংসার জন্য উভয়ই শর্ত সাপেক্ষে রাজী হন। শর্তটি ছিল- এই তর্কে যিনি জয়ী হবেন, তাঁর অধীনে অপরজনকে দাসত্ব করতে হবে। বাড়ি ফিরে কদ্রু তাঁর নাগপুত্রেদের বলেন যে, আগামীকাল যখন উচ্চৈঃশ্রবার লেজের রঙ পরীক্ষা করা হবে, তখন নাগরা যেন, উচ্চৈঃশ্রবার লেজে জড়িয়ে থাকে। যাতে উচ্চৈঃশ্রবার লেজের বর্ণ কালো দেখায়। মায়ের এই আদেশ যে সকল নাগ অস্বীকার করে, কদ্রু তাদের অভিশাপ দিয়ে বলেন যে, মাতৃআদেশে লঙ্ঘনকারী নাগেরা পাণ্ডুবংশীয় জনমেজয়ের সর্পসত্রে অগ্নিদগ্ধ হবে। কদ্রু 'র অভিশাপের কথা শুনে কশ্যপ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। পরে ব্রহ্মা তাঁকে বলেন যে, বিষধর নাগের কারণে প্রজাদের জীবন বিনষ্ট হয়। এরা বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে জগৎ পরিপূর্ণ করে ফেলেছে। সুতরাং কদ্রু'র এই অভিশাপ জগতের কল্যাণ বয়ে আনবে। ব্রহ্মাএই কথায় কশ্যপ সান্ত্বনা লাভ করেন। এরপর ব্রহ্মা কশ্যপকে বিষহরী বিদ্যা দান করেন।

মায়ের অভিশাপের কথায় ভয় পেয়ে নাগদের একাংশ,
উচ্চৈঃশ্রবর লেজ জড়িয়ে ধরার সংকল্প করে। পরদিন কদ্রু ও বিনতা সমুদ্র  অতিক্রম করে, উচ্চৈঃশ্রবা দেখতে চান। উভয় এই অশ্বটির লেজ কালো বর্ণের দেখতে পান। তাই শর্তানুসারে বিনতা কদ্রুর দাসীতে পরিণত হয়।
        [সূত্র: মহাভারত। আদিপর্ব। বিংশ-ত্রয়োবিংশ অধ্যায়।]


 


এরপর বিনতার দ্বিতীয় ডিম ফুটে গরুড় নামক পাখির জন্ম হয়। একদিন কদ্রু তাঁর সন্তানদেরকে পিঠে বহন করার জন্য গরুড়কে বাধ্য করলে- গরুড় তাঁর মায়ের কাছে দাসত্ববৃত্তির কারণ জানতে ইচ্ছা করেন। তখন বিনতা গরুড়কে এই দাসত্বের বিষয়টি জানান। এরপর গরুড় কদ্রুর কাছে এই দাসত্ব মুক্তির উপায় জানতে আগ্রহী হলে- কদ্রু তখন গরুড়কে অপর একটি শর্ত প্রদান করে। শর্তটি হলো- যদি গরুড় স্বর্গ থেকে অমৃত আনতে পারে তবেই তার মায়ের মুক্তি হবে। এরপর গরুড় স্বর্গ থেকে অমৃত এনে বিনতাকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করেন।