গরুড়
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{
পক্ষী
|
হিন্দু
পৌরাণিক সত্তা
|
ভারতীয় পৌরাণিক সত্তা |
পৌরাণিক সত্তা |
কাল্পনিক সত্তা |
কল্পনা |
সৃজনশীলতা |
কর্মক্ষমতা
|
জ্ঞান |
মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা |
বিমূর্তন
|
বিমূর্ত-সত্তা
|
সত্তা
|}
হিন্দু পৌরাণিক পক্ষী বিশেষ।
কশ্যপ
মুনির ঔরসে বিনতার গর্ভে গরুড় জন্মগ্রহণ করেন।
ইনি ছিলেন বিষ্ণুর বাহন।
উল্লেখ্য এঁর মা
বিনতা
দুটি ডিম প্রসব করেছিলেন।
এর একটি অসময়ে ভেঙে ফেলার জন্য,
উর্ধ্বভাগ সম্পূর্ণ ও নিম্নভাগ অসম্পূর্ণ অবস্থায় একটি পুত্র লাভ করেন।
এই পুত্রের নামকরণ করা হয়
অরুণ।
এরপর বিনতার দ্বিতীয় ডিম স্বাভাবিকভাবে ফুটে গরুড়ের জন্ম হয়।
মহাভারতে
অরুণ
ও গরুড়ের জন্মের একটি কাহিনি পাওয়া যায়।
একবার কশ্যপ পুত্রলাভের আশায়
একটি মহাযজ্ঞ করেন। উক্ত যজ্ঞে সাহায্য করার জন্য দেবতাগণ, ঋষিগণ ও গন্ধর্বগণ
অংশগ্রহণ করেছিলেন।
ইন্দ্র
নিজের ক্ষমতাবলে প্রচুর কাঠ যোগাড় করে আনার সময় দেখতে পান যে, ক্ষুদ্রাকার
বালখিল্য
ঋষিরা সমবেতভাবে একটি পত্রবৃন্ত আনার চেষ্টা করছিলেন। উল্লেখ্য
বালখিল্যরা
উপাসনার জন্য প্রায় অনাহারে থাকতেন। এই কারণে তাঁরা দুর্বল ছিলেন। এ ছাড়া এঁরা
আকারে এতটাই ক্ষুদ্র ছিলেন যে, গরুর পায়ের চাপে মাটিতে যে গর্ত হয়, তাতে জমে থাকা
পানিতে ডুবে যেতেন। বলাই বাহুল্য এরূপ
বালখিল্যদের
একটি পত্রবৃন্ত সংগ্রহ করা এবং তা বহন করে নিয়ে যাওয়াটা অনেক কঠিন ছিল।
ইন্দ্র
বালখিল্যদের
এই পত্রবৃন্ত সংগ্রহের দৃশ্য দেখে উপহাস করেন। এতে
বালখিল্যরা
অপমানিত হন, এবং ইন্দ্রের চেয়ে শক্তিশালী পুত্র কামনায় যজ্ঞ করেন। বিষয়ট
ইন্দ্র
জানতে পেরে, কশ্যপের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। কশ্যপ ইন্দ্রের অনুরোধে
বালখিল্যদের
কাছে এসে কার্যসিদ্ধির প্রার্থনা করলেন।
বালখিল্যরা
এ প্রার্থনা মঞ্জুর করেন। এরপর
কশ্যপ
বালখিল্যদের
বলেন যে,
ইন্দ্রকে
ত্রিভুবনের নিয়ন্ত্রণ অধিকার
ব্রহ্মা
দিয়েছেন। সুতরাং
ইন্দ্রের
চেয়ে শক্তিশালী
কেউ হলে,
ব্রহ্মার
নিয়ম লঙ্ঘিত হবে। তাই বালখিল্যদের ইন্দ্র হবে পক্ষীদের ইন্দ্র। যেহেতু
বালখিল্যরা
কশ্যপের
পুত্রকামনায় যজ্ঞ করছিলেন, তাই এক্ষেত্রে কি করা উচিৎ, তা বিবেচনার ভার
কশ্যপকেই
প্রদান করেন। এর কিছুদিন পর
বিনতা
যখন পুত্রকামনায় ঋতুস্নান শেষে
কশ্যপের
কাছে আসেন। তখন কশ্যপ
বিনতাকে
জানান যে,
বালখিল্যদের
প্রার্থনা অনুসারে তাঁর গর্ভে দুটি পুত্র জন্মগ্রহণ করবে। এই পক্ষীরূপী ওই দুই
পুত্র পক্ষীজাতির ইন্দ্র হবে।
[সূত্র:
মহাভারত। আদিপর্ব। একত্রিংশ অধ্যায়]
সমুদ্রমন্থনে
উদ্ভূত
উচ্চৈঃশ্রবা নামক ঘোড়ার
লেজের রঙ সাদা না কালো এই নিয়ে,
একবার কদ্রুর সাথে
বিনতার সাথে
তর্ক উপস্থিত হলে-
কদ্রু অশ্বের লেজ কালো ও
বিনতা সাদা বলেন। পরের দিন এই বিষয়টি
মীমাংসার জন্য উভয়ই শর্ত সাপেক্ষে রাজী হন। শর্তটি ছিল- এই তর্কে যিনি জয়ী হবেন,
তাঁর অধীনে অপরজনকে দাসত্ব করতে হবে। পরদিন উচ্চৈঃশ্রবাকে দেখতে উভয়ই অগ্রসর হলে-
কদ্রু তাঁর সর্পপুত্রদের আদেশ দিলেন যে, তারা যেন
উচ্চৈঃশ্রবার লেজে জড়িয়ে থেকে তা
কালো বর্ণের করে দেয়।
কদ্রুর এই আদেশ অনুসারে সে সকল সাপ
উচ্চৈঃশ্রবার লেজে
অবস্থান নেয় তারা কদ্রুর আশীর্বাদ লাভ করে। পরদিন সমুদ্র পার হয়ে, কদ্রু ও
বিনতা উভয়ই দূর থেকে
উচ্চৈঃশ্রবাকে পরীক্ষা করে- দেখতে পান যে, এর লেজ কালো। তখন শর্তানুসারে বিনতা
কদ্রুর দাসীতে পরিণত হন।
দূরের সাগরপারে যখন
বিনতা
যখন হেরে গিয়ে
কদ্রুর দাসী হয়, সেই সময়
গরুড় ডিম ফুটে বের হয়ে আসে। খুব অল্প সময়ের ভিতরে তার দেহ বৃদ্ধি পেয়ে প্রকাণ্ডরূপ
ধারণ করে। এর ফলে দেবগণ এবং ঋষিগণ ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় গরুড়ের স্তূতিবাক্য দ্বারা
সন্তুষ্ট করেন। গরুড়
তার নিজদেহকে সংকুচিত করে,
দেবতা এবং ঋষিদের আস্বস্ত করেন। এরপর গরুড় তাঁর ভাই
অরুণকে সাথে নিয়ে তাঁর মা
বিনতার সাথে দেখা করতে যান। এই সময়
সূর্য
দেবতাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে, সারা পৃথিবী দগ্ধ করার
উদ্যোগ নেন। এই কারণে গরুড়
অরুণকে পূর্বদিকে নিরাপদ
স্থানে রেখে আসেন।
সূর্য সংহারক-মূর্তি ধারণ করলে রাত্রিকালেই মহাদাবদাহের সৃষ্টি হয়। দেবতা এবং ঋষিরা
এই দাবদাহে উদ্বিগ্ন হয়ে
ব্রহ্মার
কাছে যান।
ব্রহ্মা
এর
প্রতিকার হিসেবে
অরুণকে
সূর্যের
রথের সারথি হিসেবে নিয়োগ করেন। এর ফলে সূর্য তেজ বৃদ্ধি করলেও
অরুণ,
সে তেজকে হ্রাস করে দেবেন। এরপর
অরুণ
রথের সারথি হলে, সূর্যের তেজ থেকে জগৎ রক্ষা পেয়েছিল।
[সূত্র: মহাভারত। আদিপর্ব।
ষোড়শ-চতুর্বিংশ অধ্যায়। ]
গরুড়ের মা
বিনতা
দাসী অবস্থায়
কদ্রুর সকল আদেশ পালন
করতেন। একই সাথে গরুড়
বিনতার
পুত্র বলে তাঁকেও
কদ্রু দাসের মতো ব্যবহার
করতেন। একবার কদ্রু সমুদ্রের ভিতরে নাগদের একটি মনোরম বাসস্থানে যাওয়ার জন্য
মনস্থির করেন। তিনি বিনতাকে ওই দ্বীপে নিয়ে যাওয়ার জন্য আদেশ করেন। বিনতা
কদ্রুকে
পিঠ বহন করে নিয়ে যান। এই সময় গরুড়ও অন্যান্য নাগদের বহন করে ওই দ্বীপে নিয়ে যেতে
বাধ্য করেন। গরুড় ইচ্ছা করে নাগদের বহন করে সূর্যের দিকে অগ্রসর হলে, সূর্যের তাপে
নাগদের এক একজন অজ্ঞান হয়ে যেতে থাকে। এই অবস্থা বুঝতে পরে
কদ্রু
ইন্দ্রের কাছে
বৃষ্টি প্রার্থনা করেন। প্রার্থনায় সন্তুষ্ট হয়ে
ইন্দ্র বৃষ্টি বর্ষণ করলে, নাগরা
রক্ষা পায়। এরপর নাগরা গরুড়কে নানা মনোরম স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য আদেশ করেন। গরুড়
সে সব আদেশ মান্য করেন। এরপর তিনি বিনতার কাছে এসে তাঁদের এই দাসত্ববৃ্তিতর কারণ
জিজ্ঞাসা করলে, বিনতা সকল বিষয় গরুড়কে জানান। এরপর গরুড় নাগদের কাছে এই
দাসত্ববৃ্ত্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় জানতে চাইলে, নাগরা বলেন যে, যদি গরুড় অমৃত
এনে দিতে পারে, তবেই এই দাসত্ববৃত্তি থেকে মুক্ত হবেন। এরপর তিনি মায়ের অনুমতি নিয়ে
অমৃতলাভের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
গরুড় তাঁর মায়ের মুক্তির জন্য অমৃত আনার জন্য অগ্রসর হয়ে অচিরেই ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েন। এই সময় বিনতার দেয়া পরামর্শ অনুসারে সমুদ্রপ্রান্তের নিষাদপল্লীতে নেমে নিষাদদের গ্রাস করলেন। এরপর তাঁর ক্ষুধা নিবৃত্ত না হলে, নিষাদ পল্লী ত্যাগ করে আকাশে উঠলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি তাঁর পিতা কশ্যপের দেখা পান। পিতা-পুত্র পরস্পরের কুশলাদি বিনিময় করার পর, গরুড় তাঁর নিষাদ ভক্ষণের কথা বলেন এবং এতে তাঁর ক্ষুধা নিবৃত্ত হয় নাই সে কথাও কশ্যপকে জানান। এরপর কশ্যপের পরামর্শ অনুসারে গজ-কচ্ছপরূপী আত্মকলহরত বিভাবসু ও সুপ্রতীককে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এই পরামর্শ অনুসারে এই গজ-কচ্ছপকে নখ দিয়ে দৃঢ়ভাবে ধরে গরুড় আকাশে উঠে আসেন। এরপর গরুড় উড়তে উড়তে অলম্ব নামক তীর্থে আসেন। গরুড় কোনো গাছের ডালে বসে, গজ-কচ্ছপ খাবেন বলে যখন শক্ত গাছের ডাল খুঁজছিলেন, তখন গরুড়ের বিশাল ভার বহন করতে পারবে না বলে, গাছেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এরপর একটি বিশাল বট গাছ, তার ডালে বসে আহার করার জন্য আহ্বান করে। বট গাছের এই কথা শুনে, গরুড় ওই গাছের শতযোজন ব্যাপী বিস্তৃত একটি শাখায় বসা মাত্র, তা ভেঙে যায়। গরুড় ভাঙা ডালটিকে আঁকড়ে ধরে নিচের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলেন যে, ওই ডালে বালখিল্য মুনিরা অধঃশিরে তপস্যারত অবস্থায় ঝুলছেন। এই ডাল ছেড়ে দিলে বালখিল্য ঋষিদের মৃত্যু হবে, এই ভয়ে ডালটি মুখে নিয়ে আকাশে উঠে গেলেন। এই দৃশ্য দেখে, ঋষিরা বললেন, যেহেতু গুরুভার বাহন করে এই পক্ষী অবিচলিতভাবে আকাশে উড্ডীন হলেন, তাই তার নাম হবে গরুড়।
দুই নখে গজ ও কচ্ছপ এবং মুখে ঝুলন্ত
বালখিল্য ঋষিবৃন্দ-সহ
বিশাল শাখা মুখে নিয়ে
গরুড়
নানা স্থানে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন, কিন্তু
কোথায় বসার জায়গা পেলেন না। এরপর তিনি গন্ধমাদন পর্বতে তপস্যারত পিতা
কশ্যপ্যের কাছে যান।
কশ্যপ প্রথমে
গরুড়কে
এমন কিছু করতে নিষেধ করলেন, যাতে
বালখিল্যরা রেগে গিয়ে
অভিশাপ দ্বারা গরুড়কে ভষ্মীভূত করেন। এরপর
কশ্যপ নানাভাবে
বালখিল্যদের বাক্যের
দ্বারা সন্তুষ্ট করেন। এবং এই শাখা ত্যাগ করার জন্য অনুরোধ করেন। অবশেষে
বালখিল্যরা এই শাখা
ত্যাগ করে তপস্যার জন্য হিমালয়ে চলে যান। এরপর
কশ্যপের পরামর্শে
গরুড়
একটি মনুষ্যশূন্য বরফে ঢাকা পর্বতে গিয়ে, মুখ থেকে ডালটি ছেড়ে দেন। এরপর সেই
গিরিশৃঙ্গে বসে, গরুর গজ-কচ্ছপ আহার করেন।
এরপর গরুড়
অমৃত
পাওয়ার জন্য, দেবতাদের নানাভাবে উত্যক্ত করা শুরু করেন। গরুড়ের উৎপাতে
ইন্দ্রের
বজ্র ভয়ে আপনা-আপনি প্রজ্বলিত হলো। আকাশ থেকে উল্কাপাত শুরু হলো। সেই সাথে
প্রবলবেগে বাতাস প্রবাহিত হতে থাকলো। আকাশ থেকে রক্তবর্ষণ হতে থাকলো। দেবতার এই
উৎপাতের কোনো কারণ খুঁজে পেলেন না। ফলে দেবতারা এর কারণ জানার জন্য
বৃহস্পতির
কাছে যান।
বৃহস্পতি জানান যে,
কশ্যপের
পুত্রলাভের যজ্ঞের সময় ইন্দ্র বালখিল্যদের অপমান করেছিলেন। এই কারণে, ইন্দ্রের চেয়ে
ক্ষমতাশালী পুত্রের জন্য
বালখিল্যরা
যজ্ঞ করেছিলেন। সেই সূত্রে
কশ্যপের
ঔরসে
বিনতার গর্ভে
অরুণ ও
গরুড় নামক এক পক্ষীদ্য়ের জন্ম হয়েছে। এই পক্ষী অমৃত হরণের ক্ষমতা রাখে। ইন্দ্র এই কথা
শুনে, ইন্দ্র অমৃতরক্ষক দেবতাদের বিশেষভাবে সাবধান করে দেন।
এরপর
অমৃত
পাওয়ার জন্য গরুড় দেবতাদের
সামনে এলে, দেবতারা তাঁকে আক্রমণ করেন। যুদ্ধে প্রচুর দেবসৈন্য হতাহত হলেও গরুড়
অক্ষত থাকেন। যুদ্ধে দেবতাদের পরাজিত করে, অমৃতভাণ্ডের কাছে দেখলেন, অমৃতভাণ্ডকে
ঘিরে রয়েছে অগ্নিবলয়। গরুড় সহস্র মুখ সৃষ্টি করে, সহস্রমুখে জলবর্ষণ করে, আগুন
নিভিয়ে ফেলেন। এরপর গরুড় স্বর্ণময় ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে অমৃতভাণ্ডের কাছে চলে আসেন।
এবার তিনি দেখলেন লোহার তৈরি ক্ষুরধার চক্র, অমৃতভাণ্ডকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। গরুর
নিজদেহকে সঙ্কুচিত করে ওই লৌহচক্রের ফাঁক গলে ভিতরে প্রবেশ করলেন। এবার তিনি
দেখলেন, দুটি ভয়ঙ্কর সাপ অমৃতভাণ্ডকে রক্ষা করছে। এই সাপের মুখ থেকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ
নির্গত হচ্ছে। এর দৃষ্টিও ছিল বিষযুক্ত। একবার এই সাপ দুটির যে তাকাবে সে ওই বিষের
প্রভাবে ভস্মীভূত হয়ে যাবে। গরুড় প্রথমে ধূলি নিক্ষেপ করে, সাপ দুটির চোখ অন্ধ করে
দিলেন। এরপর নখ ও চঞ্চু দিয়ে সাপ দুটিকে ছিন্নভিন্ন করে, অমৃতভাণ্ড নিয়ে আকশে উঠে
এলেন। এরপর তিনি আকশপথে রওনা দিলেন। এই সময়
বিষ্ণুর
সাথে তাঁর দেখা হয়।
বিষ্ণু
গরুড়কে বর প্রার্থনা করতে
বললে, গরুড় বলেন যে, তিনি যেন
বিষ্ণুর
উপরিভাগে অবস্থান করতে পারেন এবং অমৃত পান ছাড়াই অমর হতে পারেন।
বিষ্ণু
সেই বরই প্রদান করলেন। গরুর এবার
বিষ্ণুকে
বর প্রদানের ইচ্ছা প্রকাশ করলে,
বিষ্ণু
তাঁকে তাঁর বাহন হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু যেহেতু গরুড় বিষ্ণুর উপরে থাকবেন,
এই বর আগেই পেয়েছিলেন, তাই বিষ্ণু পুনরায় বলেন গুরুড় যেন তাঁর রথের পতাকারূপে বিরাজ
করেন। গরুড় সেই বর প্রদান করেন। পরে উভয় উভয়ের কাছ থেকে বিদায় নিলেন।
এরপর
ইন্দ্রর
বজ্র দ্বারা গরুড়কে আঘাত করলেন। এই আঘাতে গরুড়ের কোনই ক্ষতি হলো না। গরুড়
ইন্দ্রকে
বললেন যে, বজ্রাঘাতে তাঁর কোনো ক্ষতি হবে না। তবে যে মুনির অস্থি থেকে এই বজ্র তৈরি
হয়েছে, তাঁর সম্মানার্থে তিনি একটি পালক ত্যাগ করবেন। গরুড়ের ত্যাগ করা এই পালকের
সৌন্দর্য দেখে দেবতারা মোহিত হয়ে যান। পরে দেবতার গরুড়ের নামকরণ করেন সুপর্ণ। এরপর
ইন্দ্র
গরুড়ের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনের প্রস্তাব দেন। এরপর
ইন্দ্র
গরুড়কে জানান যে, নাগরা অমৃত পানে অমর হলে, তারা সকলের উপর অত্যাচার করবে। এরপর
গরুড় অমৃত হরণের
কারণ বর্ণনা করেন।
গরুড় আরও বললেন যে,
অমৃত নিয়ে গিয়ে যে স্থানে রাখা হবে সে স্থান থেকে ইন্দ্র অমৃত চুরি করে আনলেই
সাপেরা অমৃত পাবে না।
ইন্দ্র
খুশি হয়ে তাতে রাজি হলেন এবং তাঁর কাছে বর প্রার্থনা করতে বললেন।
গরুড় বর হিসেবে প্রার্থনা করেন যেন
সাপেরা যেন তাঁর খাদ্য হয়। ইন্দ্র সেই বরই দিলেন।
এরপর গরুড় অমৃত এনে একটি কুশের উপর রেখে সাপদেরকে স্নান করে এসে অমৃত পান করতে বললেন। শর্তানুসারে এই সময় বিনতা মুক্তি পেলেন। আর সাপেরা স্নান করতে গেলে-ইন্দ্র অমৃত হরণ করে নিয়ে যান। স্নান শেষে সাপেরা ফিরে এসে অমৃত না দেখতে পেয়ে কুশ লেহন করতে থাকে। ফলে এদের জিহ্বা দ্বি-বিভক্ত হয়। এর মধ্য দিয়ে বিনতা দাসত্ব থেকে মুক্তি লাভ করেন। [সূত্র: মহাভারত। আদিপর্ব। ঊনত্রিংশ-চতুস্ত্রিংশ অধ্যায়]
একবার ইন্দ্রের সারথি মাতলি তাঁর কন্যা গুণকেশীর সাথে নাগ বংশীয় সমুখের বিবাহ স্থির করেন। কিন্তু সমুখ একমাস পরে গরুড়ের খাদ্য হবেন জেনে মাতলি সমুখকে নিয়ে ইন্দ্র ও বিষ্ণুর কাছে বিষয়টি জানান। বিষ্ণু অমৃত পান করিয়ে সমুখকে অমরত্ব প্রদানের জন্য ইন্দ্রকে নির্দেশ দেন। কিন্তু ইন্দ্র তাঁকে অমর না করে দীর্ঘ জীবন দান করেন। এতে গরুড় ইন্দ্রের প্রতি ক্রোধ প্রকাশ করলে, ইন্দ্র বলেন যে, বিষ্ণুর ইচ্ছায় সমুখের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এরপর গরুড় বিষ্ণুর কাছে শক্তির বড়াই করে বলেন যে, আমি আমার শক্তিতে তোমাকে বহন করি। এতে বিষ্ণু তাঁর বিশালত্ব বুঝানোর জন্য তাঁর বাম হাত গরুড়ের পাখায় রাখেন। এর ফলে গরুড় হতচেতন হয়ে নিচে পড়ে যান। এরপর গরুড় বিষ্ণুর কাছে ক্ষমা চান। বিষ্ণু তাঁর পায়ের আঙুল দিয়ে সমুখকে গরুড়ের বক্ষে নিক্ষেপ করেন। এরপর থেকে গরুড় সমুখকে হত্যা করা থেকে বিরত হন।
লঙ্কা যুদ্ধে
ইন্দ্রজিৎ রাম-লক্ষ্মণকে নাগ পাশে বন্ধন করলে গরুড় এঁদেরকে মুক্ত করেন।
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীতে গরুড় বিভিন্ন নামে উল্লেখিত হয়ে থাকেন।
যেমন-অমৃতাহরণ,
অরুণাগ্রজ,
অরুণানুজ,
অরুণাবরজ,
অহিদ্বিট্,
অহিভুক্,
অহিমার,
অহিরিপু।
কাশ্যপী : কাশ্যপ তাঁর পিতা ছিলেন।
খগপতি : পাখিদের রাজা ছিলেন।
খগরাজ : পাখিদের রাজা ছিলেন।
খগেশ্বর : পাখিদের রাজা ছিলেন।
গগনেশ্বর : আকাশ মণ্ডলে তাঁর সমকক্ষ কেউ ছিল না।
বজ্রজিৎ : ইন্দ্রের বজ্রকে তিনি জয় করেছিলেন।
বিষ্ণুরথ : বিষ্ণুর বাহন ছিলেন।
বৈনতয় : বিনতা তাঁর মা ছিলেন।
রক্তপক্ষ : রক্তবর্ণের পাখা ছিল।
সুধাহর : অমৃত হরণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
সুপর্ণ : ইন্দ্র তাঁর প্রতি বজ্র নিক্ষেপ করলে, তাতে গরুড়ের কিছু হয়নি। বরং ইন্দ্রের বজ্রের সম্মানার্থে একটি সোনার পালক নিজেই তাঁর শরীর থেকে খসিয়ে দেন। সে কারণে ইনি সুপর্ণ।
সুবর্ণকায় : শরীর সোনার মতো উজ্জ্বল ছিল।
সুরেন্দ্রজিৎ : ইন্দ্রকে জয় করেছিলেন।