বিভাবসু
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{
ঋষি
|
হিন্দু
পৌরাণিক সত্তা
|
ভারতীয় পৌরাণিক সত্তা |
পৌরাণিক সত্তা |
কাল্পনিক সত্তা |
কল্পনা |
সৃজনশীলতা |
কর্মক্ষমতা
|
জ্ঞান |
মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা |
বিমূর্তন
|
বিমূর্ত-সত্তা
|
সত্তা
|}
হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র বিশেষ।
মহাভারতের মতে–
ইনি ছিলেন
দিব-এর
পুত্র। এঁর অপর ভাইয়ের নাম ছিল সুপ্রতীক।
পিতার
মৃত্যুর পর, সুপ্রতীক তাঁদের পৈত্রিক সম্পত্তি ভাগ করে দেওয়ার জন্য বারবার তাগাদা
দিতে থাকেন। এতে বিভাবসু রেগে গিয়ে ভাইকে হস্তী হওয়ার অভিশাপ দেন। এরপরও সুপ্রতীক
বিভাবসুকে কচ্ছপ হওয়ার অভিশাপ দেন। ফলে উভয়ই বিরাটাকার হস্তী ও কচ্ছপে পরিণত হন।
পরে তারা একটি সরোবরে বসবাস
করতেন এবং মাঝে মাঝে পরস্পরকে হত্যা করার জন্য যুদ্ধে অবতীর্ণ হতেন। এদের ভিতর
হস্তীরূপী সুপ্রতীকের আকার ছিল ছয় যোজন উন্নত এবং দ্বাদশ যোজন আয়ত। পক্ষান্তরে
কচ্ছপরূপী বিভাবসুর উচ্চতা ছিল তিন যোজন উন্নত ও পরিধি ছিল দশ যোজন।
এরা দীর্ঘদিন যাবত পরস্পরের সাথে যুদ্ধ করে, কেউ কাউকে পরাজিত করতে পারেন নি। গরুড় যখন মায়ের দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্য অমৃত আনতে যাচ্ছিলেন, তখন ক্ষুধা নিবারণের জন্য কশ্যপ এই গজ-কচ্ছপকে আহার করার পরামর্শ দেন। এই পরামর্শ অনুসারে এই গজ-কচ্ছপকে নখ দিয়ে দৃঢ়ভাবে ধরে গরুড় আকাশে উঠে আসেন। এরপর গরুড় উড়তে উড়তে অলম্ব নামক তীর্থে আসেন। গরুড় কোনো গাছের ডালে বসে, গজ-কচ্ছপ খাবেন বলে যখন শক্ত গাছের ডাল খুঁজছিলেন, তখন গরুড়ের বিশাল ভার বহন করতে পারবে না বলে, গাছেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এরপর একটি বিশাল বট গাছ, তার ডালে বসে আহার করার জন্য আহ্বান করে। বট গাছের এই কথা শুনে, গরুড় ওই গাছের শতযোজন ব্যাপী বিস্তৃত একটি শাখায় বসা মাত্র, তা ভেঙে যায়। গরুড় ভাঙা ডালটিকে আঁকড়ে ধরে নিচের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলেন যে, ওই ডালে বালখিল্য মুনিরা অধঃশিরে তপস্যারত অবস্থায় ঝুলছেন। এই ডাল ছেড়ে দিলে বালখিল্য ঋষিদের মৃত্যু হবে, এই ভয়ে ডালটি মুখে নিয়ে আকাশে উঠে গেলেন। এই দৃশ্য দেখে, ঋষিরা বললেন, যেহেতু গুরুভার বাহন করে এই পক্ষী অবিচলিতভাবে আকাশে উড্ডীন হলেন, তাই তার নাম হবে গরুড়।
দুই নখে গজ ও কচ্ছপ এবং মুখে ঝুলন্ত বালখিল্য ঋষিবৃন্দ-সহ বিশাল শাখা মুখে নিয়ে গরুড় নানা স্থানে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন, কিন্তু কোথায় বসার জায়গা পেলেন না। এরপর তিনি গন্ধমাদন পর্বতে তপস্যারত পিতা কশ্যপ্যের কাছে যান। কশ্যপ প্রথমে গরুড়কে এমন কিছু করতে নিষেধ করলেন, যাতে বালখিল্যরা রেগে গিয়ে অভিশাপ দ্বারা গরুড়কে ভষ্মীভূত করেন। এরপর কশ্যপ নানাভাবে বালখিল্যদের বাক্যের দ্বারা সন্তুষ্ট করেন। এবং এই শাখা ত্যাগ করার জন্য অনুরোধ করেন। অবশেষে বালখিল্যরা এই শাখা ত্যাগ করে তপস্যার জন্য হিমালয়ে চলে যান। এরপর কশ্যপের পরামর্শে গরুড় একটি মনুষ্যশূন্য বরফে ঢাকা পর্বতে গিয়ে, মুখ থেকে ডালটি ছেড়ে দেন। এরপর সেই গিরিশৃঙ্গে বসে, গরুর গজ-কচ্ছপ আহার করেন।
[সূত্র: মহাভারত। আদিপর্ব। ঊনত্রিংশ-ত্রিংশ অধ্যায়]