বালখিল্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{ঋষি
|
হিন্দু
পৌরাণিক সত্তা
|
ভারতীয় পৌরাণিক সত্তা |
পৌরাণিক সত্তা |
কাল্পনিক সত্তা |
কল্পনা |
সৃজনশীলতা |
কর্মক্ষমতা
|
জ্ঞান |
মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা |
বিমূর্তন
|
বিমূর্ত-সত্তা
|
সত্তা
|}
হিন্দু পৌরাণিক
কাহিনি মতে―
হাতের বুড়া আঙুলের উচ্চতা সম্পন্ন ষাট হাজার ঋষিকে এই নামে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ঋগ্বেদের মতে―
এঁরা ব্রহ্মার
লোম থেকে উৎপন্ন হয়েছিলেন।
এঁদের ইন্দ্র (দেবরাজ অর্থে) ছিলেন গরুড়।
মহাভারতের মতে―
ঋষি
ক্রতু
ঔরসে সন্নতির গর্ভে ষাট হাজার পুত্রের জন্ম হয়।
এই সন্তানেরা বালখিল্য নামে পরিচিত হন।
মহাভারতের
আদিপর্বের
একত্রিংশ অধ্যায় থেকে জানা যায়,
বালখিল্যরা
উপাসনার জন্য প্রায় অনাহারে থাকতেন। এই কারণে তাঁরা দুর্বল ছিলেন। এ ছাড়া এঁরা
আকারে এতটাই ক্ষুদ্র ছিলেন যে, গরুর পায়ের চাপে মাটিতে যে গর্ত হয়, তাতে জমে থাকা
পানিতে ডুবে যেতেন।
একবার কশ্যপ পুত্রলাভের আশায় একটি মহাযজ্ঞ করেন। উক্ত যজ্ঞে সাহায্য করার জন্য
দেবতাগণ, ঋষিগণ ও গন্ধর্বগণ অংশগ্রহণ করেছিলেন।
ইন্দ্র
নিজের ক্ষমতাবলে প্রচুর কাঠ যোগাড় করে আনার সময় দেখতে পান যে, ক্ষুদ্রাকার
বালখিল্য
ঋষিরা সমবেতভাবে একটি পত্রবৃন্ত আনার চেষ্টা করছিলেন। দুর্বল এবং ক্ষুদ্রাকার
বালখিল্যদের
একটি পত্রবৃন্ত সংগ্রহ করা এবং তা বহন করে নিয়ে যাওয়াটা অনেক কঠিন ছিল।
ইন্দ্র
বালখিল্যদের
এই পত্রবৃন্ত সংগ্রহের দৃশ্য দেখে উপহাস করেন। এতে
বালখিল্যরা
অপমানিত হন, এবং ইন্দ্রের চেয়ে শক্তিশালী পুত্র কামনায় যজ্ঞ করেন। বিষয়ট
ইন্দ্র
জানতে পেরে, কশ্যপের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। কশ্যপ ইন্দ্রের অনুরোধে
বালখিল্যদের
কাছে এসে কার্যসিদ্ধির প্রার্থনা করলেন।
বালখিল্যরা
এ প্রার্থনা মঞ্জুর করেন। এরপর কশ্যপ
বালখিল্যদের
বলেন যে,
ইন্দ্রকে
ত্রিভুবনের নিয়ন্ত্রণ অধিকার
ব্রহ্মা
দিয়েছেন। সুতরাং
ইন্দ্রের
চেয়ে শক্তিশালী
কেউ হলে,
ব্রহ্মার
নিয়ম লঙ্ঘিত হবে। তাই বালখিল্যদের ইন্দ্র হবে পক্ষীদের ইন্দ্র। যেহেতু
বালখিল্যরা
কশ্যপের পুত্রকামনায় যজ্ঞ করছিলেন, তাই এক্ষেত্রে কি করা উচিৎ, তা বিবেচনার ভার
কশ্যপকেই প্রদান করেন। এর কিছুদিন পর
বিনতা
যখন পুত্রকামনায় ঋতুস্নান শেষে কশ্যপের কাছে আসেন। তখন কশ্যপ
বিনতাকে
জানান যে, বালখিল্যদের
প্রার্থনা অনুসারে তাঁর গর্ভে দুটি পুত্র জন্মগ্রহণ করবে। এই পক্ষীরূপী ওই দুই
পুত্র পক্ষীজাতির ইন্দ্র হবে।
[সূত্র:
মহাভারত। আদিপর্ব। একত্রিংশ অধ্যায়]
গরুড় যখন মায়ের দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্য অমৃত আনতে যাচ্ছিলেন, তখন ক্ষুধা নিবারণের জন্য কশ্যপ এই গজ-কচ্ছপকে আহার করার পরামর্শ দেন। এই পরামর্শ অনুসারে এই গজ-কচ্ছপকে নখ দিয়ে দৃঢ়ভাবে ধরে গরুড় আকাশে উঠে আসেন। এরপর গরুড় উড়তে উড়তে অলম্ব নামক তীর্থে আসেন। গরুড় কোনো গাছের ডালে বসে, গজ-কচ্ছপ খাবেন বলে যখন শক্ত গাছের ডাল খুঁজছিলেন, তখন গরুড়ের বিশাল ভার বহন করতে পারবে না বলে, গাছেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এরপর একটি বিশাল বট গাছ, তার ডালে বসে আহার করার জন্য আহ্বান করে। বট গাছের এই কথা শুনে, গরুড় ওই গাছের শতযোজন ব্যাপী বিস্তৃত একটি শাখায় বসা মাত্র, তা ভেঙে যায়। গরুড় ভাঙা ডালটিকে আঁকড়ে ধরে নিচের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলেন যে, ওই ডালে বালখিল্য মুনিরা অধঃশিরে তপস্যারত অবস্থায় ঝুলছেন। এই ডাল ছেড়ে দিলে বালখিল্য ঋষিদের মৃত্যু হবে, এই ভয়ে ডালটি মুখে নিয়ে আকাশে উঠে গেলেন। এই দৃশ্য দেখে, ঋষিরা বললেন, যেহেতু গুরুভার বাহন করে এই পক্ষী অবিচলিতভাবে আকাশে উড্ডীন হলেন, তাই তার নাম হবে গরুড়।
দুই নখে গজ ও কচ্ছপ এবং মুখে ঝুলন্ত বালখিল্য ঋষিবৃন্দ-সহ বিশাল শাখা মুখে নিয়ে গরুড় নানা স্থানে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন, কিন্তু কোথায় বসার জায়গা পেলেন না। এরপর তিনি গন্ধমাদন পর্বতে তপস্যারত পিতা কশ্যপ্যের কাছে যান। কশ্যপ প্রথমে গরুড়কে এমন কিছু করতে নিষেধ করলেন, যাতে বালখিল্যরা রেগে গিয়ে অভিশাপ দ্বারা গরুড়কে ভষ্মীভূত করেন। এরপর কশ্যপ নানাভাবে বালখিল্যদের বাক্যের দ্বারা সন্তুষ্ট করেন। এবং এই শাখা ত্যাগ করার জন্য অনুরোধ করেন। অবশেষে বালখিল্যরা এই শাখা ত্যাগ করে তপস্যার জন্য হিমালয়ে চলে যান। এরপর কশ্যপের পরামর্শে গরুড় একটি মনুষ্যশূন্য বরফে ঢাকা পর্বতে গিয়ে, মুখ থেকে ডালটি ছেড়ে দেন। এরপর সেই গিরিশৃঙ্গে বসে, গরুর গজ-কচ্ছপ আহার করেন।
[সূত্র: মহাভারত। আদিপর্ব। ঊনত্রিংশ-ত্রিংশ অধ্যায়]