জনমেজয়
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে, এই নামে একাধিক চরিত্র পাওয়া যায়।

১. ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { | রাজা |  হিন্দু পৌরাণিক সত্তা | ভারতীয় পৌরাণিক সত্তা | পৌরাণিক সত্তা | কাল্পনিক সত্তা | কল্পনা | সৃজনশীলতা | কর্মক্ষমতা | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা | বিমূর্তন  | বিমূর্ত-সত্ত | সত্তা |}

তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুন-এর  পৌত্র এবং অভিমন্যুর পুত্র ছিলেন পরীক্ষিৎ পরীক্ষিতের পুত্রের নাম জনমেজয়

তক্ষকের দংশনে পরীক্ষিতের মৃত্যু হলে- রাজ্যের মন্ত্রীবৃন্দ রাজপুরোহিতবৃন্দ এবং প্রজারা জনমেজয়কে রাজা মনোনীত করেন। কাশীরাজ সুবর্ণবর্মার কন্যা বপুষ্টমার সাথে এঁর বিবাহ হয়। [সূত্র: মহাভারত। আদিপর্ব। ৪৪ অধ্যায়।]

জনমেজয়ের ঔরসে কাশ্যার গর্ভে চন্দ্রাপীড় ও সূর্যপীড় নামে দুটি পুত্র জন্মে জনমেজয় অশ্বমেধ যজ্ঞে দীক্ষিত হয়ে এঁকে সংযতা হয়ে থাকতে বলেন কিন্তু ইন্দ্র গোপনে এঁর সাথে অসৎ ব্যবহার করলে যজ্ঞে বিঘ্ন উপস্থিত হয় ফলে জনমেজয় কাশ্যাকে পরিত্যাগ করতে উদ্যত হন পরে বিশ্বাবসুরের পরামর্শে স্ত্রীকে পুনরায় গ্রহণ করেন

তিনি তাঁর অপর তিন ভাই শ্রুতসেন
, উগ্রসেন ও ভীমসেন-কে সাথে নিয়ে দীর্ঘসত্র (দীর্ঘকালব্যাপী যজ্ঞ) অনুষ্ঠান আরম্ভ করেন উক্ত অনুষ্ঠানে একটি কুকুর প্রবেশ করলে জনমেয়জয়ের ভাইরা তাকে প্রহার করে বিতারিত করেন এই কুকুরটি তার মা সরমার কাছে কাঁদতে কাঁদতে অভিযোগ করলে, সরমা যজ্ঞস্থলে আসেন এবং বিনাকারণে প্রহার করার জন্য জনমেজয়কে অভিশাপ দিয়ে বলেন যে তোমরা নিরাপরাধকে প্রহার করেছ, অতএব অজ্ঞাত ভয় তোমাদেরকে আক্রমণ করবে
                 [
পৌষ্যপর্ব্ব-জনমেজয় শাপ। তৃতীয় অধ্যায়। আদিপর্ব। মহাভারত]

জনমেজয় সরমার অভিশাপ থেকে মুক্তি লাভের জন্য একজন উপযুক্ত পুরোহিত খুঁজতে খুঁজতে, তাঁর রাজ্যের অধীনস্থ শ্রুতশ্রবার আশ্রমে আসেন এবং তাঁর কাছে পুরোহিত হিসাবে সোমশ্রবাকে প্রার্থনা করেন উত্তরে শ্রুতশ্রবা জানান যে, মহাদেবের অভিশাপ ছাড়া এই পুত্র আর সকল অভিশাপ দূর করতে পারবে শ্রুতশ্রবা এই সাথে আরও একটি শর্ত জুড়ে দেন এই শর্তটি ছিল, সোমশ্রবার কাছে কোন ব্রাহ্মণ কোন কিছু প্রার্থনা করলে, তৎক্ষণাৎ বিনা প্রতিবাদে জনমেজয়কে প্রদান করতে হবে জনমেজয় এই শর্ত স্বীকার করেই সোমশ্রবাকে পুরোহিত হিসাবে গ্রহণ করে রাজধানীতে নিয়ে এসেছিলেন। 
               
[সোমশ্রবা ঋষির উপাখ্যান তৃতীয় অধ্যায়। আদিপর্ব। মহাভারত]

তক্ষক নামক নাগের দংশনে পরীক্ষিৎ মৃত্যুবরণ করেছিলেন উতঙ্ক নামক একজন ঋষি তক্ষকর প্রতি ক্রোধবশত জনমেজয়ের কাছে তাঁর পিতার মৃত্যুর কারণ ব্যাখ্যা করেন প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য তাঁক উদ্দীপ্ত করেন। মন্ত্রীপরিষদের কাছে পিতার এই মৃত্যু সংবাদ শুনে জলস্পর্শ করে পিতৃহত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের প্রতিজ্ঞা করেনতিনি পুরোহিতদের পরামর্শ অনুসারে সর্পসত্র নামক একটি মহাযজ্ঞের আয়োজন করেন যজ্ঞভূমি পরিমাপকালে সূত নামক এক পুরাণ-কথক ভবিষ্যৎ বাণী করেন যে, কোন এক ব্রাহ্মণ এই যজ্ঞের ব্যাঘাত ঘটাবেন এই কারণে তিনি কঠোরভাবে দ্বার রক্ষা করে যজ্ঞ আরম্ভ করেন ঋত্বিকরা নাম উচ্চারণ করে সর্পদের উদ্দেশ্যে আহুতি দান করলে সর্পরা যজ্ঞকুণ্ডে এসে পতিত হতে থাকে এই অবস্থায় তক্ষক ইন্দ্রের আশ্রয় নেন

অন্যদিকে নাগরাজ বাসুকি তার বোন জরত্কারুকে অনুরোধ করেন যে, তাঁর পুত্র আস্তীক যেন সর্পকুলকে রক্ষা করেন মায়ের আদেশে আস্তীক যজ্ঞস্থানে জনমেজয়কে নানারূপে প্রশংসায় সন্তুষ্ট করেন জনমেজয় আস্তীককে বর দিতে অগ্রসর হলে- পুরোহিতরা তখন জানান তক্ষক এখনো আসেনি পুরোহিতরা জানতে পারেন যে তক্ষক ইন্দ্রের আশ্রয়ে আছেন এরপর ইন্দ্রকে যজ্ঞস্থলে আবাহন করলে- ইন্দ্র যজ্ঞস্থলের দিকে অগ্রসর হলে, তক্ষক ইন্দ্রের উত্তরীয়ের মধ্যে লুকিয়ে যজ্ঞের দিকে অগ্রসর হয় এই বিষয় জানতে পেরে জনমেজয় ইন্দ্র-সহ তক্ষককে যজ্ঞের আগুনে ফেলার আদেশ দিলে, ইন্দ্র ভয়ে তক্ষককে ফেলে পালিয়ে যান এরপর মন্ত্রপ্রভাবে তক্ষক যজ্ঞের দিকে অগ্রসর হয় পুরোহিতরা কার্য সিদ্ধ হয়েছে বলে- জনমেজয়কে অনুমতি করলেন ব্রাহ্মণকে বর দিতে এরপর আস্তীক তিষ্ট উচ্চারণ করলে তক্ষক থেমে যান যজ্ঞ শেষ হলে তক্ষক ও অবশিষ্ট সর্পরা রক্ষা পায়

কলিযুগে অশ্বমেধ যজ্ঞ নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ইনি অশ্বমেধযজ্ঞ আরম্ভ করেন যজ্ঞকালে জনমেজয় একটি ব্রাহ্মণকুমারকে সর্প করে দেন এবং উক্ত সর্পরূপী ব্রাহ্মণবালক যজ্ঞের আগুনে মৃত্যুবরণ করেন পরে ইনি ব্যাসদেব রচিত মহাভারত বৈশ্যাম্পয়নের কাছে শ্রবণ করে এই পাপ থেকে মুক্তি লাভ করেন

২. ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { | ব্যক্তি |  হিন্দু পৌরাণিক সত্তা | ভারতীয় পৌরাণিক সত্তা | পৌরাণিক সত্তা | কাল্পনিক সত্তা | কল্পনা | সৃজনশীলতা | কর্মক্ষমতা | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা | বিমূর্তন  | বিমূর্ত-সত্ত | সত্তা |}

পুরুবংশের রাজা দুষ্মন্তের স্ত্রী লক্ষ্মণার গর্ভজাত পুত্র