পরীক্ষিৎ
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনিতে এই নামে উল্লেখযোগ্য তিনটি চরিত্র পাওয়া যায়।

১. ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { | রাজা |  হিন্দু পৌরাণিক সত্তা | ভারতীয় পৌরাণিক সত্তা | পৌরাণিক সত্তা | কাল্পনিক সত্তা | কল্পনা | সৃজনশীলতা | কর্মক্ষমতা | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা | বিমূর্তন  | বিমূর্ত-সত্ত | সত্তা |}

.১. ইনি চন্দ্র বংশীয় রাজা ছিলেন তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুনের পুত্র অভিমন্যুর  ঔরসে ও উত্তরার গর্ভে এঁর জন্ম হয়েছিলকুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের শেষে, অশ্বত্থামা পাণ্ডব নিধনের উদ্দেশ্যে ব্রহ্মশির অস্ত্র প্রয়োগ করেন কৃষ্ণের নির্দেশে অর্জুনও প্রতিষেধক হিসাবে একই অস্ত্র প্রয়োগ করলে, উভয় অস্ত্রের কারণে পৃথিবী ধ্বংসের উপক্রম হয়সে কারণে দেবর্ষি নারদ ও মহর্ষি কৃষ্ণ-দ্বৈপায়ন এই দুই অস্ত্রের মাঝখানে দাঁড়িয়ে উভয়ের অস্ত্র সংবরণ করতে বলেন অর্জুন ব্রহ্মচর্য পালনের কারণে তাঁর অস্ত্র প্রতিহারে সমর্থ হলেও, অশ্বত্থামা সদা সৎপথে না থাকায় তিনি তাঁর অস্ত্র প্রত্যাহার করতে ব্যর্থ হনফলে উক্ত অস্ত্র উত্তরা গর্ভস্থ পরীক্ষিৎকে হত্যা করেপরে কৃষ্ণ যোগবলে পরীক্ষিৎকে জীবিত করেন
       
  [সূত্র: মহাভারত। সৌপ্তিক পর্ব্ব। চতুর্দশ-ষোড়শ অধ্যায়]

মহাভারতের মহাপ্রস্থানিক পর্বের প্রথম অধ্যায় থেকে জানা যায় যে, পাণ্ডবেরা মহাপ্রস্থানে যাবার সময় পরীক্ষিতের হাতে রাজ্যভার প্রদান করে যান।


একবার রাজা পরীক্ষিৎ মৃগয়ায় গিয়ে একটি হরিণকে বাণবিদ্ধ করে তার অনুসরণ করতে করতে গভীর বনে প্রবেশ করেনএই বনে তখন শমীক নামক এক ঋষি মৌনব্রত অবলম্বনে ছিলেনপরীক্ষিৎ এই মুনিকে হরিণটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে কোন উত্তর না পেয়ে, তাঁর গলায় একটি মৃত সাপ ঝুলিয়ে প্রাসাদে ফিরে আসেনতপস্যারত মুনির পুত্র শৃঙ্গী এই বিষয় অবগত হয়ে অভিশাপ দেন যে, মৃগয়ার সাত দিনের মধ্যে তক্ষক  নামক নাগের দংশনে পরীক্ষিৎ মারা যাবেন

শৃঙ্গী এই অভিশাপের কথা শমীক ঋষিকে জানালে, শমীক বলেন যে, এই অভিশাপ অত্যন্ত অন্যায় হয়েছেকারণ রাজা জানতেন না যে, তিনি মৌনতা অবলম্বন করে আছেন শৃঙ্গী এর উত্তরে জানান যে, এই অভিশাপ ফিরবে নাএরপর শমীক নিজ উদ্যোগে পরীক্ষিৎকে এই বিষয়টি জানানপরীক্ষিৎ সকলের সাথে পরামর্শ করে, অতিদ্রুত একটি স্তম্ভের উপর একটি বাড়ি নির্মাণ করেন এবং স্তম্ভের চারদিকে লোক নিযুক্ত করেনষষ্ঠদিন অতিবাহিত হওয়ার পর বিষ চিকিৎসক কাশ্যপ পরীক্ষিৎকে রক্ষা করার জন্য হস্তিনাপুরে রওনা হনপথে কাশ্যপের সাথে তক্ষকের সাক্ষাৎ হলে তক্ষক বলেন, তুমি কোন ক্রমেই রাজাকে বাঁচাতে পারবে নাব্রাহ্মণ কৃতকার্যতার বিষয়ে দৃঢতা প্রকাশ করলে, পরীক্ষার্থে তক্ষক নিকটস্থ একটি বটগাছকে দংশন করেনবিষের প্রভাবে বটগাছ জ্বলতে থাকলে, ব্রাক্ষণ স্বীয় বিদ্যাবলে গাছটিকে রক্ষা করলেনএরপর তক্ষক ধনলোভী ব্রাহ্মণকে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে, তাঁকে হস্তিনাপুরে যেতে নিষেধ করেন কাশ্যপ ধ্যানযোগে পরীক্ষিতের মৃত্যু অবধারিত জেনে হস্তিনাপুরে না গিয়ে তক্ষকের উপহার নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যান

তক্ষকের নির্দেশে তাঁর কয়েকজন অনুচর তপস্বীর বেশে বিভিন্ন প্রকারের ফল নিয়ে পরীক্ষিতের কাছে উপস্থিত হন। উক্ত ফলের একটিতে ইনি একটি তাম্রবর্ণের পোকা দেখতে পান। এরপর পরীক্ষিৎ শৃঙ্গীর বাক্যই সত্য হোক, এই কীটই তক্ষক হয়ে দংশন করুক বলে, কীটটি তুলে তাঁর কণ্ঠের উপর স্থাপন করেন এরপর তক্ষক নিজ রূপ ধারণ করে পরীক্ষিৎকে দংশন করেন এর ফলে পরীক্ষিতের মৃত্যু হয়।
             [সূত্র: মহাভারত। আদিপর্ব। ৪০-৪৪ অধ্যায়]


পরীক্ষিতের স্ত্রীর নাম ছিল মাদ্রবতীমাদ্রবতীর গর্ভে পরীক্ষিতের জনমেজয় শ্রুতসেন উগ্রসেন ও ভীমসেন নামে চারটি পুত্র জন্মে। পরীক্ষিতের যখন মৃত্যু হয়, তখন তাঁর পুত্ররা শিশু ছিলেন। এই অবস্থায় রাজ্যের মন্ত্রীবৃন্দ রাজপুরোহিতবৃন্দ এবং প্রজারা জনমেজয়কে রাজা মনোনীত করেন।

১.২.জনৈক ইক্ষ্বাকু বংশের রাজা। ইনি একবার হরিণ শিকারে গিয়ে অত্যন্ত তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েন। জল পানের জন্য ইনি নিকটস্থ একটি সরোবরের কাছে যান। এই সময় এঁর সাথে একটি সুন্দরী কন্যার দেখা হয়। ইনি এই কন্যাকে দেখে অত্যন্ত মুগ্ধ হন এবং তাঁর কাছে বিবাহের প্রস্তাব দেন। উত্তরে এই কন্যা বলেন যে, আমাকে বিবাহ করার পর কখনও জল দেখালে, তিনি অন্য কোথাও চলে যাবেন
পরীক্ষিৎ এই শর্তে তাঁকে বিবাহ করেন এবং নববধূকে রাজধানীতে নিয়ে আসেন

এরপর রাজার আদেশে একটি বিশাল উদ্যান তৈরি করা হয় এবং রাজপুরীর পুকুরের পাড় জুড়ে বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়একদিন রানীকে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে রাজা উক্ত পুকুরের পারে আসেন এবং নিজের প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে, রানীকে পানিতে নামার অনুরোধ করলেন রানী পুকুরে নেমে আর উঠলেন নাতখন রাজা পুকুরের সকল পানি সেঁচে ফেলে দিলেন, কিন্তু মণ্ডূক (ব্যাঙ) ছাড়া আর কিছু দেখতে পেলেন নাইনি রাগে সকল মণ্ডূক হত্যা করার আদেশ দিলে, মণ্ডূক রাজা ঋষির বেশে এসে অকারণে মণ্ডূক হত্যা করতে নিষেধ করলেন রাজা বললেন যে, মণ্ডূকরা তাঁর রানীকে হত্যা করেছে উত্তরে মণ্ডূকরাজ বললেন, উক্ত কন্যার নাম সুশোভনা এবং সে তাঁরই (মণ্ডূকরাজের) কন্যাএই কন্যা অত্যন্ত মন্দ স্বভাবের ইতিপূর্বে এইভাবে সে অনেক রাজাকে প্রতারিত করেছেএরপর পরীক্ষিতের অনুরোধে মণ্ডূকরাজ তাঁর কন্যাকে রাজার হাতে ফিরিয়ে দিলেনকিন্তু সেই সাথে নিরীহ মণ্ডূকদের হত্যার জন্য অভিশাপ দেন যে, তাঁর বংশজাত পুত্ররা ব্রাহ্মণ হত্যাকারী হবে

১.৩. অনশ্বার ঔরসে অমৃতার গর্ভে ইনি জন্মগ্রহণ করেনএঁর স্ত্রীর নাম ছিল সুযশা এঁদের পুত্রের নাম ছিল ভীমসেন