হিন্দু ধর্ম মতে-
বিষ্ণুর
দ্বাপর যুগের
একজন
অবতার এবং মোট দশম
অবতারের অষ্টম অবতার।
বসুদেবের ঔরসে
দেবকীর অষ্টম গর্ভে কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল।
কংস
নামক এক অত্যাচারী রাজার অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য
দেবতারা
ব্রহ্মার
শরণাপন্ন হলে,
ব্রহ্মা
সকল দেবতাদের নিয়ে সমুদ্রের ধারে বসে
বিষ্ণুর আরাধনা শুরু করেন।
বিষ্ণু
সে আরাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে তাঁর সাদা ও কালো রঙের দুটি চুল দিয়ে বললেন যে,
বসুদেবের
ঔরসে
দেবকীর
সন্তান হিসাবে কৃষ্ণ হয়ে জন্মাবেন।
কৃষ্ণের প্রতীক হলো কালো চুল।
তাঁর সহযোগী হবে
বলরাম,
এর প্রতীক সাদা চুল। এই জন্মে তিনি কংসাসুরকে হত্যা করবেন।
উল্লেখ্য
বসুদেবের
অপর স্ত্রী
রোহিণীর গর্ভে বলরাম জন্মেছিলেন।
দেবকীর
পিতা
দেবক
ও
কংসের পিতা
উগ্রসেন আপন দুই ভাই ছিলেন।
সেই সূত্রে
কংস
ছিলেন
দেবকীর
কাকাতো ভাই অর্থাৎ
কংস ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের মামা।
দেবর্ষি
নারদ
এসে
কংসকে কৃষ্ণ-
বলরাম-এর
জন্মের কারণ বর্ণনা করে যান। এই সংবাদ পেয়ে
কংস
দেবকীর
গর্ভজাত সকল সন্তানকে জন্মের পরপরই হত্যা করতে থাকলেন। শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়
দ্বাপর
যুগের শেষে ভাদ্র-রোহিণী নক্ষত্রে,এক ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ রাত্রিতে। জন্মের পরপরই
বসুদেব
কংসের
ভয়ে এই শিশুটিকে ব্রজধামে নন্দের বাড়িতে রেখে আসেন এবং
তাঁর সদ্যজাতা কন্যাকে আনেন।
ব্রহ্ম-বৈবর্ত্ত পুরাণের মতে এই কন্যা ছিলেন দুর্গা। এই পুরাণে এই সদ্যজাতা কন্যাকে
অংশা নামে অভিহিত করা হয়েছে। বিষ্ণুর অনুরোধে তিনি যশোদার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন।
[ব্রহ্ম-বৈবর্ত্ত
পুরাণ, শ্রীকৃষ্ণখণ্ড, সপ্তম অধ্যায়]
নন্দপত্নী যশোদা কৃষ্ণকে
আপন পুত্র হিসাবেই পালন করেন।
কৃষ্ণের জীবিত থাকার খবর পেয়ে- তাঁকে হত্যা করার জন্য-
কংস বেশ কিছু
দৈত্য-দানব পাঠান। এদের সবাইকে বিভিন্ন কৌশলে কৃষ্ণ হত্যা করেন এবং একই সাথে
বিভিন্ন অলৌকিক কর্মকাণ্ড ঘটে। কৃষ্ণ কর্তৃক কংসবধের আগে যে ঘটনা ঘটে, সেগুলো
হলো-
-
পুতনা হত্যা:
শিশু কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য কংস
পুতনা
নামক এক দানবীকে প্রেরণ করেন।
পুতনা মায়াবলে সুন্দরী স্ত্রী-মূর্তি ধারণ করে নন্দের গৃহে আসেন।
সেখানে কৃষ্ণকে কপট স্নেহে আদর করতে করতে বিষ মাখা স্তন কৃষ্ণের
মুখে দেন। কিন্তু কৃষ্ণ পুতনার স্তনপানকালে তাঁর জীবনীশক্তি শোষণ করে
তাঁকে হত্যা করেন। মৃত্যুকালে পুতনা দানবীর রূপ ধারণ করে চিৎকার করতে করতে বিশাল
জায়গা জুড়ে পতিত হন।
- তৃণাবর্ত হত্যা: এরপর
কংস কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য তৃণাবর্ত নামক অনুচর পাঠান।
তৃণাবর্ত মথুরায় এসে ঘূর্ণিবায়ু সৃষ্টি করে কৃষ্ণকে আকাশে উঠিয়ে
নেন।
এই সময় কৃষ্ণ নিজের শরীরকে এতটা বৃদ্ধি করেন যে- তৃণাবর্ত
কৃষ্ণকে বহন করতে অসমর্থ হন।
একই সময় কৃষ্ণ তৃণাবর্তের গলা টিপে ধরলে- তৃণাবর্ত আকাশ থেকে
পাথরের উপর পতিত হন এবং মৃত্যুবরণ করেন।
- বৎসাসুর ও বকাসুর হত্যা: তৃণাবর্তকে হত্যা করার কিছুদিন পর কংসের
হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কৃষ্ণকে নিয়ে নন্দ বৃন্দাবনে চলে আসেন।
এখানে আসার পর কংস কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য বত্সাসুর নামক এক
অসুরকে পাঠান।
এই অসুর বৃন্দাবনে বৎসরূপ (বাছুরের রূপ) ধরে অন্যান্য গরুর
সাথে বিচরণ করতে থাকেন।
কৃষ্ণ এই বিষয়ে অবগত হয়ে বাছুররূপী অসুরের পিছনের দুই পা ধরে
মাথার উপর ঘুরিয়ে কপিত্থ গাছের উপর নিক্ষেপ করে হত্যা করেন।
এরপর কংসের আদেশে বকাসুর কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য পাখির রূপ ধরে
ব্রজধামে উপস্থিত হন।
তিনি কৃষ্ণকে গ্রাস করতে উদ্যত হলে কৃষ্ণ তাঁর দুই ঠোঁট ধরে একে
চিরে ফেলে হত্যা করেন।
- কেশী হত্যা: এরপর কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য কংস
তাঁর দানব অনুচর কেশীকে প্রেরণ করেন।
কেশী ঘোড়ার রূপ ধরে গোপদের উপর অত্যাচার শুরু করলে- কৃষ্ণ এর
প্রতিকার করার জন্য কেশীর মুখোমুখি হন।
কেশী কৃষ্ণকে গ্রাস করতে উদ্যত হলে- কৃষ্ণ তাঁর বিশাল বাহু
কেশীর মুখের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।
-
অঘাসুর হত্যা: এরপর
কংসকে
আদেশে
অঘাসুর কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য বৃন্দাবনে আসেন।
অঘাসুর
ছিলেন পূর্বোক্ত পূতনা ও বকাসুরের ভাই। তিনি কংসের একজন সেনাপতি হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিলেন।
অঘাসুর বৃন্দাবনে এসে মায়াবলে অজগর রূপ ধরে মুখ প্রসারিত করে
শ্রীকৃষ্ণের অপেক্ষায় ছিলেন। শ্রীকৃষ্ণের বালক সহচরেরা,
এই প্রসারিত মুখ দেখে পর্বতগুহা মনে করে তাতে প্রবেশ করেন।
শ্রীকৃষ্ণ অঘাসুরের প্রকৃত পরিচয় জেনেও উক্ত মুখে প্রবেশ করে
আপন দেহকে প্রসারিত করলে,
অঘাসুর শ্বাসরোধ হয়ে মারা যান।
- কালিয়দমন: এরপর কৃষ্ণ
কালিয় নামক একটি বিষাক্ত সাপকে হত্যা করেন।
উল্লেখ্য যমুনা নদীর এক আবর্তে বহুফনা বিশিষ্ট এই সাপ বহুদিন
ধরে বসবাস করতো।
বিষ্ণু পুরাণের মতে এর ফনা সংখ্যা ছিল তিনটি,
হরিবংশের মতে- পাঁচটি, ভাগবতে'র
মতে সহস্রটি। এই সাপটি দীর্ঘদিন ধরে তার স্ত্রী, পুত্র,
পৌত্র নিয়ে এই হ্রদে বসবাস করতো।
এই সাপের বিষে আবর্তের জল বিষাক্ত হয়ে পড়েছিল।
বিষের কারণে এই জলাশয়ের নিকটে কোন গাছ জন্মাতো না বা আবর্তের
উপর দিয়ে কোন পাখি উড়ে যেতে পারতো না।
জীবদের রক্ষার জন্য কৃষ্ণ লাফ দিয়ে উক্ত আবর্তে প্রবেশ করেন।
এরপর কালিয়-এর ফনার উপর নৃত্য করে করে কৃষ্ণ তাকে হত্যা করেন।
একেই কালিয়দমন বলা হয়। কৃষ্ণ এই সাপের পুরো পরিবারকে একইভাবে হত্যা করে কালিন্দী
নদীতে নিক্ষেপ করেন।
- কৃষ্ণের গোবর্ধন পর্বত
উত্তোলন: বৃন্দাবনের গোপরা প্রতিবৎসর ইন্দ্রযজ্ঞ করতো।
কৃষ্ণ এর বিরোধিতা করে বলেন যে- ইন্দ্রেরজ্ঞের কারণে বৃষ্টিপাত
হয় বটে কিন্তু এই পূজা কৃষকদের জন্য। যেহেতু গোপদের প্রধান অবলম্বন গাভী,
সে কারণে গোপদের উচিত্ গাভী পূজা করা।
ফলে সে বৎসর ইন্দ্রযজ্ঞ বন্ধ হয়ে যায়।
এতে ইন্দ্র ক্ষুব্ধ হয়ে বৃন্দাবনে প্রবল বর্ষণ ঘটালেন।
কৃষ্ণ এর প্রতিকারের জন্য নিকটস্থ গোবর্ধন পর্বত উপড়িয়ে
বৃন্দাবনের উপর তুলে ধরলেন। ফলে প্রবল বৃষ্টি থেকে বৃন্দাবন রক্ষা পায়।
কৃষ্ণ এক সপ্তাহ এই পর্বত ধারণ করার পর ইন্দ্র পরাজয় মেনে,
বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দেন।
রাধাকৃষ্ণ-লীলা
এই ঘটনার পরপরই আমরা বৃন্দাবনে রাধাকৃষ্ণের লীলা অংশ পাই।
এই লীলা অংশ হিন্দু পৌরাণিক গ্রন্থগুলিতে সমানভাবে দেখা যায় না।
এই লীলা অংশে আমরা যে কাহিনী দেখতে পাই তা হলো-
রাধা-কৃষ্ণের উৎপত্তি: পদ্মপুরাণ ও ভাগবতের মতে- গোলকধামে কৃষ্ণের বামপাশ
হতে রাধার উৎপত্তি হয়েছিল। জন্মের পর পরই তিনি কৃষ্ণের আরাধনা শুরু করেন।
তিনি উৎপত্তিকালে ১৬ বৎসরের নব-যৌবনারূপে কৃষ্ণের সিংহাসনের
বামপাশে অবস্থান নেন।
এই সময় রাধার লোমকূপ হতে লক্ষকোটি গোপিকা ও কৃষ্ণের লোমকূপ
থেকে লক্ষকোটি গোপের জন্ম হয়।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের মতে- একবার বিষ্ণু রম্যবনে প্রবেশ করে রমণ ইচ্ছা প্রকাশ
করেন।
ফলে কৃষ্ণের ডান অংশ থেকে কৃষ্ণমূর্তি ও বাম অংশ থেকে রাধা
মূর্তি প্রকাশ পায়।
রাধা কৃষ্ণকে কামাতুর দেখে তাঁর দিকে অগ্রসর হন।
রা অর্থ লাভ এবং ধা অর্থ ধাবমান।
তিনি অগ্রসর হয়ে কৃষ্ণকে লাভ করেছিলেন বলে- এঁর নাম হয়েছিল রাধা।
একবার কৃষ্ণ
রাধার অজ্ঞাতে বিরজা নামক এক গোপীর সাথে মিলিত হন।
দূতীদের মুখে রাধা এই সংবাদ পেয়ে অনুসন্ধানের জন্য অগ্রসর হলে-
সুদামা কৃষ্ণকে উক্ত সংবাদ দেন।
কৃষ্ণ এই সংবাদ পেয়ে বিরজাকে ত্যাগ করে অন্তর্হিত হন।
বিরজা এই দুখে প্রাণত্যাগ করে নদীরূপে প্রবাহিত হন।
রাধা পরে কৃষ্ণের দেখা পেয়ে তাঁকে তীব্রভাবে
ভৎর্সনা
করলে- সুদামা তা সহ্য করতে না পেরে-রাধাকে তিরস্কার করেন।
রাধা এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সুদামাকে অসুর হয়ে জন্মনোর অভিশাপ দেন।
সুদামাও ক্ষুব্ধ হয়ে রাধাকে গোপী হয়ে পৃথিবীতে জন্মানোর
অভিশাপ দিয়ে বলেন যে- সহস্র বত্সর কৃষ্ণবিরহ যন্ত্রণা ভোগ করার পর তিনি
পৃথিবীতে কৃষ্ণের সাথে মিলিত হবেন।
রাধা'কে
সকল গোপীদের মধ্য সর্বপ্রধানা হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
মূলতঃ বৃন্দাবন লীলা রাধাকে কেন্দ্র করে উঠা উপাখ্যান মাত্র।
বৃন্দাবনে রাধা ছিলেন কৃষ্ণের চেয়ে বড়।
প্রথমাবস্থায় কৃষ্ণ রাধাকে পাবার জন্য বিবিধ ছলের আশ্রয় নেন।
পরে উভয়ের মধ্যে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে।
এই সম্পর্ক উন্নয়নে যে সকল কাহিনী পাওয়া যায়- তা হলো-
কৃষ্ণের
সাথে রাধা সহ অন্যান্য গোপিনীদের সম্পর্ক গড়ে উঠে।
গোপীরা কৃষ্ণকে স্বামী হিসাবে পাবার জন্য একমাসের কাত্যায়ন
ব্রত করেন।
এই এক মাস গোপীরা দলবদ্ধভাবে যমুনা নদীতে এসে এক সাথে স্নান
করতো।
এই সময় গোপীরা সকল বস্ত্র নদীর পারে রেখে উলঙ্গ অবস্থায় নদীতে
স্নান করতে নামতো।
কৃষ্ণ এই ব্রতের শেষ দিনে গোপীদের অনুসরণ করে নদীর পারে আসেন।
গোপীরা বস্ত্র ত্যাগ করে নদীতে নামলে কৃষ্ণ পরিত্যাক্ত
বস্ত্রগুলি অপহরণ করেন।
এরপর কৃষ্ণের কাছে গোপীরা নিজেদের সমর্পণ করে বস্ত্র সংগ্রহ
করলেন।
এরপর গোপীরা গৃহত্যাগ করে কৃষ্ণের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য
কুঞ্জবনে আসে।
এবং সেখানে গোপীরা ঈশ্বর জ্ঞানে তাঁর সাথে মিলিত হয়।
কথিত আছে কৃষ্ণ নিজেকে গোপীদের মাঝে ছড়িয়ে দেন।
ফলে প্রতি গোপীই একই সময়ে কৃষ্ণের সান্নিধ্য পান।
কংসবধের জন্য কৃষ্ণ বৃন্দাবন পরিত্যাগ করেন।
- কৃষ্ণ-বলরাম কর্তৃক কংসবধ: কৃষ্ণকে হত্যা করার
কৌশল হিসাবে
কংস
একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
এই আয়োজনে যোগদানের জন্য
কংস
অক্রুর নামক এক যাদবকে পাঠান।
এই আমন্ত্রণ
কৃষ্ণ-বলরাম গ্রহণ করেন এবং
কংসের দরবারের
পথে রওনা দেন। পথে একজন কুব্জার সাথে দেখা হয়।
কৃষ্ণা তাঁকে সুন্দরী নারীতে রূপান্তরিত করে দেন।
এরপর কৃষ্ণ-বলরাম কংসকে হত্যা করে
কংসের পিতা
উগ্রসেনকে মথুরার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত
করেন।
- শঙ্খাসুর হত্যা :
কংস বধের
পর কৃষ্ণ-বলরাম সান্দীপন নামক এক অস্ত্রগুরু কাছে কাছে ধনুর্বেদ ও আয়ুর্বেদ শেখেন।
উল্লেখ্য প্রভাসতীর্থে স্নানের সময় পঞ্চজন নামক এক শঙ্খাসুর সান্দীপনের পুত্রকে
সাগর গর্ভে নিয়ে যান।
এই অসুর একটি বিশাল দুর্ভেদ্য শঙ্খের মধ্যে বসবাস করতেন।
কৃষ্ণ-বলরামের শিক্ষা শেষে গুরুদক্ষিণা হিসাবে সান্দীপন কৃষ্ণ-বলরামের কাছে দাবী
করেন যে- তাঁরা যেন শঙ্খাসুরকে হত্যা করে তাঁর পুত্রকে এনে দেন।
এই দাবী অনুসারে কৃষ্ণ-বলরাম এই অসুরকে হত্যা করে মুনির পুত্রকে উদ্ধার করেন।
এই অসুরের আবাসস্থলের শঙ্খ দিয়ে কৃষ্ণ পাঞ্চজন্য শঙ্খ তৈরি তা নিজের জন্য গ্রহণ
করেন।
জরাসন্ধের সাথে দ্বন্দ্ব:
কংসের
দুই স্ত্রী ছিলেন
জরাসন্ধের
দুই কন্যা
অস্তি ও প্রাপ্তি। কৃষ্ণ
কংসকে হত্যা করার পর
জরাসন্ধ পর পর সতের বার মথুরা আক্রমণ করেন।
কিন্তু
কৃষ্ণের রণ-কৌশলের কারণে,
তিনি মথুরা দখল করতে সক্ষম হন নি।
বারবার আক্রমণে অতীষ্ট হয়ে কৃষ্ণ দ্বারকায় যাদবদের পুরী নির্মাণ করতে আদেশ দেন।
কিন্তু যাদবরা দ্বারকায় যাবার আগেই
জরাসন্ধ আবার মথুরা আক্রমণ করেন।
এবার সঙ্গী ছিল কালযবন নামক এক কৃষ্ণ বিদ্বেষী রাজা।
কৃষ্ণ এবার কালযবনকে হত্যা করার জন্য একটি কৌশলের আশ্রয় নিলেন।
তিনি কালযবনকে কৌশলে দেখা দিলে,
কালযবন কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য তাঁকে অনুসরণ করতে থাকে।
কৃষ্ণ পলায়নের ভান করে দূরবর্তী এক পাহাড়ের গুহায় প্রবেশ করেন।
এই গুহায় মুচুকুন্দ নামক এক ঋষি ঘুমিয়ে ছিলেন।
কালযবন কৃষ্ণের অনুসরণ করে উক্ত গুহায় প্রবেশ করে এবং অন্ধকারে মুচুকুন্দকে কৃষ্ণ
মনে করে পদাঘাত করে।
মুচুকুন্দ ঘুম ভেঙে কালযবনের দিকে দৃষ্টিপাত করা মাত্র- কালযবন ভষ্মীভূত হয়।
এরপর
জরাসন্ধ
নিজেই আক্রমণ
করতে এলে, জরাসন্ধের হংস নামক একজন অনুচর বলরামের হাতে নিহত হন।
হংসের ভাই ডিম্বক এই দুঃখে যমুনা নদীতে আত্মহত্যা করেন।
এই দুই বীরে মৃত্যুর পর জরাসন্ধ দুঃক্ষভারাক্রান্ত মনে নিজ রাজত্বে ফিরে যান।
- রুক্মিণীকে বিবাহ :
বিদর্ভরাজ ভীষ্মকের কন্যা রুক্মিণী কৃষ্ণকে মনে মনে পতিত্ব বরণ করে চরমুখে কৃষ্ণের
কাছে বিবাহের প্রস্তাব দেয়।
এই কারণে কৃষ্ণ,
প্রথমে রুক্মিণীর পিতা ভীষ্মকের কাছে উপস্থিত হয়ে এই বিবাহে সম্মতি প্রার্থনা করেন।
কিন্তু ভীষ্মক তাতে অসম্মতি জানান।
এদিকে ভীষ্মক তার কন্যার জন্য স্বয়ংবর সভার আয়োজন করলে- কৃষ্ণ-বলরামকে সাথে নিয়ে,
উক্ত সভা থেকে রুক্মিণীকে হরণ করেন।
এই অপহরণ কালে শিশুপাল নামক একজন রাজা বাধা দিলে- সে কৃষ্ণের কাছে পরাজিত হয়ে
স্বদেশে পলায়ন করে।
রুক্মিণীর গর্ভে শ্রীকৃষ্ণের দশটি পুত্র ও একটি কন্যা জন্মগ্রহণ করে।
এঁরা ছিলেন- পুত্র : প্রদ্যুম্ন,
চারুদেষ্ণা,
সুদেষ্ণ,
চারুদেহ,
সুষেণ,
চারুগুপ্ত,
চারুবিন্দ,
সুচারু,
ভদ্রাচারু ও চারু।
কন্যা : চারুমতী।
- নরকাসুর হত্যা : নরকাসুর
অদিতির কর্ণকুণ্ডল চুরি করে প্রাগ্জ্যোতিষপুরের একটি দুর্গে রেখে আসেন।
দেবতারা কৃষ্ণের কাছে এই অভিযোগ করলে- কৃষ্ণ উক্ত অসুরকে হত্যা করে উক্ত কুণ্ডল
উদ্ধার করেন।
এই সময় কৃষ্ণ নরাকসুর কর্তৃক অপহৃত ১৬ হাজার গন্ধর্ব,
মানুষ ও দেবকন্যা ও অপ্সরাদের উদ্ধার করেন।
কথিত আছে কৃষ্ণ এই অসুরকে হত্যা করার পর এই ১৬ হাজার কন্যাকে বিবাহ করেন।
- বাণের পরাজয় এবং ঊষা-অনিরুদ্ধের বিবাহ :
বাণ নামক অসুরের কন্যা ঊষা একবার স্বপ্নে কৃষ্ণের পৌত্র অনিরুদ্ধকে
দেখে তাঁর প্রেমে পড়ে যান।
পরে ঊষা তাঁর সখী চিত্রলেখার সাহায্যে গোপনে অনিরুদ্ধকে রাজভবনে এনে বিবাহ করেন।
এই সংবাদ অবগত হয়ে বাণ অনিরুদ্ধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন।
যুদ্ধে বাণের সকল সৈন্য পরাজিত হলে,
বাণ নিজেই অনিরুদ্ধের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন।
এরপর বাণ অনিরুদ্ধকে পরাজিত করে তাঁকে বন্দী করেন।
এই সংবাদ শ্রীকৃষ্ণ জানার পর,
প্রদ্যুম্ন ও বলরামকে সাথে নিয়ে বাণের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন।
এই যুদ্ধে মহাদেব বাণের পক্ষালম্বন করলেও কৃষ্ণের কাছে বাণের পরাজয় ঘটে।
এরপর বাণ কৃষ্ণের দয়ায় মহাকাল নামে খ্যাত হয়ে মহাদেবের অনুচরদের অন্তর্গত হন।
এরপর তিনি শোণিতপুরকে বাণের প্রধানমন্ত্রী কুষ্মাণ্ডকে দান করেন।
- জাম্ববতী ও সত্যভামার সাথে বিবাহ :
সত্রাজিত্ নামক এক যাদব সূর্যকে সন্তুষ্ট করে স্যমন্তক নামক একটি
মূল্যবান মণি উপহার হিসাবে পান।
সত্রাজিত্ এই মণি কিছুদিন নিজের কাছে রেখে পরে তাঁর ভাই প্রসেনজিত্কে দান করেন।
প্রসেনজিত্ ছিলেন প্রবল অসংযমী।
তিনি এই মণি নিয়ে বনে শিকার করতে গেলে,
সিংহের হাতে প্রাণ হারান।
সেই সময় সেখানে উপস্থিত জাম্বুবান নামক অপর একজন এই মণি নিয়ে পলায়ন করেন।
এদিকে প্রসেনজিৎকে দীর্ঘসময় না দেখে সত্রাজিৎ ধারণা করেন যে,
কৃষ্ণ প্রসেনজিৎকে হত্যা করে এই মণি অধিকার করেছেন।
কৃষ্ণ এই বিষয় অবগত হয়ে প্রসেনজিৎকে খোঁজার জন্য বনে গিয়ে মৃত প্রসেনজিৎ ও সিংহকে
দেখতে পান।
এরপর জাম্বুবানের পদচিহ্ন অনুসরণ করে,
জাম্বুবানকে খুঁজে বের করেন।
২১ দিন যুদ্ধের পর কৃষ্ণ তাঁকে পরাজিত করে মণি উদ্ধার করেন এবং সত্রাজিত্কে ফিরিয়ে
দেন।
এই সময় তাঁর কন্যা জাম্বববতীকে তিনি বিবাহ করেন।
সত্রাজিৎ কৃষ্ণকে সন্দেহ করেছিলেন বলে অত্যন্ত লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে তাঁর কন্যা
সত্যভামার সাথে বিবাহ দেন।
- শতধন্বাকে হত্যা :
সত্যভামাকে বিবাহ করার জন্য অক্রুর এবং কৃতবর্মা আগ্রহী ছিলেন।
কিন্তু সত্রাজিত্ কৃষ্ণের সাথে সত্যভামার বিবাহ দিলে এঁরা সত্রাজিত্কে হত্যা করে
মণি দখলের জন্য শতধন্বাকে উত্তেজিত করেন।
শতধন্বা সত্রাজিত্কে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করে এই মণি অধিকার করেন।
সত্যভামার কাছ থেকে কৃষ্ণ এই সংবাদ জানতে পেরে,
কৃষ্ণ শতধন্বাকে শাস্তি দিতে অগ্রসর হলে শতধন্বা তাঁর কুমন্ত্রণাদাতাদের শরণাপন্ন
হলে কেউই কৃষ্ণের ভয়ে তাঁকে সাহায্য করতে রাজী হলেন না।
শেষে শতধন্বা অক্রুর-এর কাছে এই মণি রেখে পলায়ন করেন।
কৃষ্ণ বলরামকে সাথে নিয়ে শতধন্বাকে হত্যা করেন।
- কল্প্পতরু নিয়ে কৃষ্ণ-ইন্দ্র বিবাদ: একবার নারদ
কল্পবৃক্ষের কয়েকটি ফুল নিয়ে শ্রীকৃষ্ণের সাথে দেখা করতে আসেন।
কৃষ্ণ এই ফুলগুলি তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে ভাগ করে দিলও সত্যভামাকে দিতে ভুলে যান।
এরপর সত্যভামা অভিমান করলে- কৃষ্ণ ইন্দের সাথে কলহ করে কল্পতরু এনে সত্যভামার ঘরের
সামনে রোপণ করেন।
উল্লেখ্য
ইন্দ্রের স্ত্রী শচী,
শিবের স্ত্রী গৌরী ও অগ্নির স্ত্রী স্বাহার মতো পুণ্যকব্রত পালন করে,
কৃষ্ণকে নারদমুনির হাতে দান করেন।
কিন্তু স্বামীর আসন্ন বিচ্ছেদ কল্পনা করে অস্থির হয়ে ইনি- শ্রীকৃষ্ণের নামাঙ্কিত
তুলসীপাতার বিনিময়ে নারদের কাছ থেকে আবার স্বামীকে ফিরিয়ে নেন।
-
দ্রৌপদীর স্বয়ংবর কৃষ্ণ : দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভায় তিনি উপস্থিত
ছিলেন।
অর্জুন লক্ষ্যভেদ করে দ্রৌপদী লাভ করলে পাণ্ডবদের সাথে অন্যান্য রাজাদের যুদ্ধের
সূচনা হয়।
যুদ্ধে পাণ্ডবরা প্রাথমিকভাবে জয়ী হলেও কৃষ্ণ সকলকে এ যুদ্ধ থেকে নিবৃত্ত করতে
সমর্থ হন।
এই সরেই তাঁর সাথে পাণ্ডবদের সাথে সখ্যতা স্থাপিত হয়।
-
অর্জুন কর্তৃক সুভদ্রা হরণে কৃষ্ণের সাহায্য :
অর্জুন দ্বাদশবর্ষ ব্রহ্মচর্য ব্রত পালন করে ঘুরতে ঘুরতে
দ্বারকায় আসেন।
যাদবরা রৈবত পর্বতে অর্জুনকে সংবর্ধনা দেন।
এই সময় অর্জুন সুভদ্রাকে দেখে অনুরক্ত হন।
কৃষ্ণও অর্জুনের এই মনোভাব বুঝতে পেরে অর্জুনকে তাঁর ভগ্নি সুভদ্রাকে হরণ করে
বিবাহের পরামর্শ দেন।
অর্জুন সুভদ্রাকে অপহরণ করলে বলরাম অর্জুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রার আয়োজন করলে,
কৃষ্ণ তাঁকে নিবৃত্ত করেন।
পরে দ্বারকায় সত্যভামার উত্সাহে সুভদ্রার সাথে অর্জুনের বিবাহ হয়।
- কৃষ্ণ ও অর্জুনের
খাণ্ডববন দহন:
এই বিবাহের পর,
কৃষ্ণ কিছুকাল ইন্দ্রপ্রস্থে অবস্থান করেন।
এই সময় অগ্নিদেব তাঁর উদরাময় নিবারণের জন্য খাণ্ডববন দগ্ধ করতে আসেন এবং অর্জুন ও
শ্রীকৃষ্ণের সাহায্য প্রার্থনা করে।
এই কাজে অগ্নি কৃষ্ণকে একটি চক্র ও কৌমদকী নামক একটি গদা প্রদান করেন।
পরে কৃষ্ণ ও অর্জুন এই বনকে দগ্ধ করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
- জরাসন্ধ হত্যা: এর কিছুদিন
পর যুধিষ্ঠির রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন করার ব্যাপারে পরামর্শের জন্য কৃষ্ণকে ডেকে
পাঠান।
কৃষ্ণ বলেন যে- প্রকৃত সম্রাট জরাসন্ধ।
সে জীবিত থাকা অবস্থায় যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞ হতে পারে না।
প্রথমে জরাসন্ধের সাথে বিবাদ করতে যুধিষ্ঠির রাজী হন নি।
কিন্তু ভীম ও অর্জুনের উৎসাহে যুধিষ্ঠির এই যুদ্ধে সম্মতি দেন।
যুধিষ্ঠিরের রাজসূয়যজ্ঞের পূর্বে কৃষ্ণ,
ভীম ও অর্জুন ছদ্মবেশে মগধে যান।
সেখানে কৃষ্ণের পরামর্শে,
ভীম জরাসন্ধকে হত্যা করেন।
- শিশুপাল ও শাম্ব
হত্যা : রাজসূয়যজ্ঞে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হিসাবে ভীষ্ম কৃষ্ণকে অর্ঘ দিলে চেদিরাজ
শিশুপাল ঈর্ষান্বিত হয়ে কৃষ্ণের নিন্দা করা শুরু করেন।
পরে তিনি চক্র দ্বারা শিশুপালের শিরশ্ছেদ করেন।
শিশুপালের এক বন্ধুর নাম ছিল শাম্ব।
শিশুপাল কৃষ্ণের হাতে নিহত হলে তিনি পৃথিবীকে যাদব-শূন্য করার প্রতিজ্ঞা নেন।
কৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরের রাজসুয় যজ্ঞে অবস্থান কালেই তিনি যাদবদের আবাসস্থল দ্বারকা আক্রমণ
করে ধ্বংস করেন।
কৃষ্ণ দ্বারকায় ফিরে এসে শাম্বকে শাস্তিদানের জন্য যাত্রা করেন।
শাম্ব তখন সমুদ্রের উপর অন্যান্য দানবদের সাথে অবস্থান করছিলেন।
কৃষ্ণ এই অবস্থায় আক্রমণ করেন।
বহু মায়া যুদ্ধের পর কৃষ্ণ সুদর্শন চক্র দ্বারা শাম্বকে হত্যা করেন।
- দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ ও কৃষ্ণ-কর্তৃক তাঁর লজ্জা
নিবারণ : যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞে ঈর্ষান্বিত হয়ে দুর্যোধন
শকুনি মামার পরামর্শে কপট পাশাখেলায় আমন্ত্রণ জানান।
এই খেলায় যুধিষ্ঠির দ্রৌপদীসহ রাজ্যপাট হারান।
দুর্যোধনের নির্দেশে দুঃশাসন রজস্বঃলা দ্রৌপদীর চুলধরে সভায় আনেন।
কর্ণের পরামর্শে প্রকাশ্য সভায় দুঃশাসন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করা শুরু করলে,
দ্রৌপদীর কাতর আহ্বানে কৃষ্ণ অলৌকিকভাবে তাঁকে অশেষ কাপড় দ্বারা আবৃত করে রাখেন।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৃষ্ণের ভূমিকা :
- কুরুপাণ্ডবের এই যুদ্ধ নিবারণের জন্য তিনি তিনবার দূত হিসাবে কাজ
করেন।
- কুরুপাণ্ডবের যুদ্ধে উভয় পক্ষ তার সাহায্য প্রার্থনা করলে- তিনি দশকোটি দুর্ধর্ষ
নারায়ণী সৈন্য দুর্যোধনকে দেন এবং তিনি নিজে অর্জুনের রথের সারথী হন।
- এই যুদ্ধের পূর্বে পাণ্ডবদের তিনি একবার সন্ধির প্রস্তাব করেছিলেন,
কিন্তু কৌরবরা তাতে অসম্মতি জানালে- সে প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়।
- কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে যে উপদেশ দিয়েছিলেন- তাই ভাগবদগীতা নামে
পরিচিত।
- দ্রোণবধের সময় যুধিষ্ঠীরকে মিথ্যাভাষণে ও অন্যায় যুদ্ধে দুর্যোধনের উরুভঙ্গের
পরামর্শ দিয়েছিলেন।
- যুদ্ধের পূর্বে তিনি কোনো পক্ষ অবলম্বন করবেন না প্রতিজ্ঞা করেছিলেন।
কিন্তু যুদ্ধের সময় তিনি পাণ্ডবদের পক্ষ নিয়েছিলেন। মূলত কৃষ্ণের সহায়তাতেই পাণ্ডবরা কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধে জয়লাভ করেছিলেন।
কৃষ্ণের পাণ্ডবদের পক্ষে উল্লেখযোগ্য কৃতকর্মগুলো হলো-
- তিনি যুদ্ধের
তৃতীয় দিনে ভীষ্মের বিরুদ্ধে সুদর্শন চক্র নিয়ে অগ্রসর হয়েছিলেন।
অবশেষে ভীষ্মের উদারতায় এবং অর্জুনের পরামর্শে এ বিবাদ মিটে গিয়েছিলে।
- ভগদত্তের বৈষ্ণবাস্ত্র নিবারণ করে তিনি অর্জুনকে রক্ষা করেছিলেন।
- জয়দ্রথ,
দ্রোণ ও কর্ণবধের সময় কৃষ্ণ সাহায্য করেছিলেন।
অশ্বত্থামা ব্রহ্মশির নিক্ষেপ করে উত্তরার গর্ভস্থ সন্তান পরীক্ষিত্কে হত্যা করলে,
তিনি তাকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন।
- ভীম কর্তৃক দুর্যোধনের উরুভঙ্গের সময় ভীমের অন্যায় যুদ্ধকে সমর্থন করেন।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের শেষে গান্ধারী তাকে অভিশাপ দিয়ে বলেছিল- এই জ্ঞাতিক্ষয় যুদ্ধ
নিবারণে কৃষ্ণ সমর্থ হয়েও তা করেন নি বলে- তিনি ছত্রিশ বৎসর পরে অপঘাতে মৃত্যুবরণ
করবেন এবং কৃষ্ণের বংশ ধ্বংস হবে।
- কৃষ্ণের শেষ জীবন: যুদ্ধ
শেষে তিনি দ্বারকায় ফিরে সেন।
যুধিষ্ঠীরের অশ্বমেধ যজ্ঞে তিনি হস্তিনাপুরে এসে আবার দ্বারকাতেই ফিরে যান।
কথিত আছে- একবার বিশ্বামিত্র,
কণ্ব ও নারদ মুনিগণ দ্বারকায় গেলে যাদবেরা কৃষ্ণের পুত্র শাম্বকে গর্ভবতী
স্ত্রীবেশে সাজিয়ে মুনিদের কাছে নিয়ে যান এবং বলেন যে এ বভ্রুর স্ত্রী এবং তাঁরা
ঋষিদের কাছে জানতে চান যে- এর গর্ভে কি আছে।
মুনিরা প্রকৃত বিষয় অবগত হয়ে অভিশাপ দেন যে শাম্বের গর্ভে লৌহমুশল জন্মাবে।
এবং উক্ত মুশল থেকেই যাদব-বংশ ধ্বংস হবে।
এই শাপে শাম্ব
পরদিন একটি লৌহমুষল প্রসব করেন।
এই মুষল যাদবরা সমুদ্রে নিক্ষেপ করেন।
কৃষ্ণ চারদিকে অমঙ্গলের চিহ্ন দেখে সকলকে সমুদ্রতীরবর্তী প্রভাসতীর্থে দেবতাদের
পূজা দিতে বলেন।
পূর্বে কৃষ্ণ বলরাম,
উগ্রসেন প্রমুখ নগরে কঠোরভাবে সুরাপান নিষিদ্ধ করেন।
কিন্তু পূজা উপলক্ষে একদিনের জন্য সুরাপানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।
কিন্তু যাদবরা প্রচুর সুরাপান করে উন্মত্ত হয়ে উঠেন পরস্পর কলহ করতে থাকেন।
একসময় উত্তেজিত সাত্যকি কৃতবর্মার শিরশ্ছেদ করে।
অন্যান্যের পানপাত্রের আঘাতে সাত্যকি ও কৃষ্ণপুত্র প্রদ্যুম্ন নিহত হন।
এরপর কৃষ্ণ একমুঠো ধুলো হাতে নিতেই সেখানকার সকল ঘাসই মুষলে পরিণত হয়।
উক্ত মুষল নিয়ে সকল যাদব নিজেদের মধ্যে বিবাদ করে সকলেই মৃত্যুবরণ করেন।
যদুবংশ ধ্বংস
প্রাপ্ত হওয়ার পর- কৃষ্ণ-বলরাম সংসার ছেড়ে বনে চলে যান।
যাবার সময় অর্জুনের কাছে তিনি তাঁর সারথি দারুককে পাঠিয়ে সকল বিষয় অবগত করান।
বনে গিয়ে তিনি যোগাবলম্বনপূর্বক একস্থানে শয়ন করে থাকলেন।
ইতোমধ্যে বলরাম দেহত্যাগ করেন।
এই সময় জরা নামক এক শিকারী হরিণ মনে করে- কৃষ্ণের পায়ে শরবিদ্ধ করে।
এর ফলে কৃষ্ণের মৃত্যু হয়।
পরে অর্জুন দ্বারকায় এসে কৃষ্ণসহ সকল যাদবদের সত্কার করেন।
কৃষ্ণের নাম: কৃষ্ণ অসংখ্য নামে খ্যাত হয়েছিলেন।
এই নামগুলির মধ্য থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু নাম এখানে তুলে ধরা হলো- অঘনাশন,
অচ্যুত,
অনঙ্গমোহন,
অনন্ত,
অরিমর্দন,
অরিষ্টমথন,
অরিষ্টসূদন,
অহিমার,
অহিরিপু,
কংসহা,
কংসারি, কানাই,
কানু, কালা, কালাচাঁদ, কালিয়া, কালীয়দমন, কালোশশী, কৃষ্ণ, কেশব, কেশিমথন,
কেশিসূদন, কেষ্ট, গদাধর, গিরিধর, গিরিধারী, গোকুলনাথ, গোকুলপতি, গোকুলেশ্বর,
গোপবল্লভ, গোপাল, গোপিকামোহন, গোপিকারমণ, গোপিনীবল্লভ, গোপীজনবল্লভ,
গোপীনাথ, গোপীমোহন, গোপ্রে, গোবর্ধনধারী, গোবিন্দ, গোষ্ঠপতি, গোষ্ঠবিহারী,
ঘনশ্যাম, জনার্দন, ত্রিভঙ্গ, ত্রিভঙ্গমুরারি, দর্পহারী, দামোদর, দেবকীনন্দন,
দ্বারিকাপতি, নগধর, নটবর, ননীচোরা, নন্দদুলাল, নরনারায়ণ, নারায়ণ, নরোত্তম,
নীলমণি, নীলমাধব, পদ্মঁখি, পাণ্ডবসখ, পাণ্ডবসখা, পার্থসারথী, পুণ্ডরীকাক্ষ, পীতবাস,
পীতাম্বর, প্যারীমোহন, বংশীধর, বংশীধারী, বংশীবদন, বংশীবাদন, বনবিহারী, বনমালী,
বনোয়ারি, বনোয়ারী, বহুবল্লভ, বালগোপাল, বাসুদেব, বিপিনবিহারী, বিশ্বম্ভর,
বৃন্দাবনেশ্বর, বৃষ্ণি, ব্রজকিশোর, ব্রজদুলাল, ব্রজনারায়ণ, ব্রজবল্লভ, ব্রজমোহন,
ব্রজরাজ, ব্রজসুন্দর, ব্রজেশ, ব্রজ্রে, বলানুজ, মথুরাপতি, মথুরেশ, মদনগোপাল,
মদনমোহন, মধুসূদন, মাধব, মুকুন্দ, মুরলীধর, মুরলীমোহন, মুরারি, যজ্ঞেশ,
যদুকুলনাথ, যশোদাদুলাল, যশোদানন্দন, যদুকুলপতি, যাদব, রসরাজ, রাখালরাজ,
রাধাকান্ত, রাধানাথ, রাধাবল্লভ, রাধামাধব, রাধারঞ্জন, রাধারমণ, রাধিকামোহন,
রাধিকারঞ্জন, রাধিকারমণ, রাসবিহারী, রাসেশ্বর, শকটারি, শৌরি, শ্যাম, শ্যামচন্দ্র,
শ্যামচাঁদ, শ্যামরায়, শ্যামসুন্দর, শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীগোবিন্দ,হরি, হৃষীকেশ।