কংসের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য এঁকে গোকুলে পাঠানো হয়। সেখানে নন্দ এঁকে কৃষ্ণের সাথে প্রতিপালন করেন। কংসের হত্যার পর, সান্দীপন মুনির কাছে ইনি এবং কৃষ্ণ বেদ, কলা, ধনু, ধর্ম ও নীতিশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। ইনি গদা যুদ্ধে অদ্বিতীয় বলে চিহ্নিত ছিলেন। শিক্ষা সমাপ্তের পর কৃষ্ণ-বলরাম গুরুকে গুরুদক্ষিণা দিতে চাইলে- সান্দীপনি'র পুত্রকে উদ্ধার করে দিতে বলেন। উল্লেখ্য পঞ্চজন' নামক এক দৈত্য সান্দীপনি মুনির পুত্রকে হরণ করেছিলেন। কৃষ্ণ-বলরাম এই দৈত্যকে হত্যা করে গুরুপুত্রকে এনে গুরু দক্ষিণা দেন।
ইনি সর্বার্থে কৃষ্ণের সহকারী ছিলেন। এঁরা একই সাথে গোকুলে গোচারণ ও খেলাধুলা করতেন। ইনি বাল্যকালে ধেনুকাসুর ও প্রলম্বকে হত্যা করেন। কৃষ্ণের মথুরা যাওয়ার সময় ইনি কৃষ্ণের সহকারী হিসাবে যান এবং কংস হত্যার সহায়তা করেন। এরপর পর জরাসন্ধ (কংসের শ্বশুর) মথুরা অবরোধ করলে কৃষ্ণ-বলরাম তাঁকে পরাজিত করেন।
একবার বলরাম স্নান করতে গিয়ে যমুনা নদীকে তাঁর সাথে খেলা করতে বলেন। যমুনা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ইনি ক্রুদ্ধ হয়ে, তাঁর হল দ্বারা নদীকে তীরে এনে শাস্তির ব্যবস্থা করেন। ফলে যমুনা তাঁর স্বমূর্তিতে আবির্ভূতা হয়ে বলরামের কাছে ক্ষমা চেয়ে মুক্তি পান।
দুর্যোধনের কন্যা লক্ষ্মণার স্বয়ংবর সভায় কৃষ্ণের পুত্র শাম্ব উপস্থিত হলে কৌরবরা শাম্বকে বন্দী করেন। এই সংবাদ পেয়ে বলরাম সেখানে উপস্থিত হয়ে- কৌরবদের কাছে শাম্বকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। এত কৌরবরা রাজী না হলে- ইনি তাঁর হলের অগ্রভাগ দ্বারা কৌরবপুরীকে গঙ্গায় নিক্ষেপের উদ্যোগ নেন। তাঁর হলের আকর্ষণে কৌরবপুরী আন্দোলিত হতে থাকলে- কৌরবরা লক্ষ্মণসহ শাম্বকে বলরামের কাছে সমর্পণ করেন। পরে দুর্যোধন তাঁর কাছে গদাযুদ্ধ শেখার জন্য শিষ্যত্ব বরণ করেন।
কৃষ্ণের পরামর্শে অর্জুন কৃষ্ঞ-বলরামের বোন সুভদ্রাকে অপহরণ করলে, ইনি অর্জুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আয়োজন করেন। কিন্তু কৃষ্ণের অনুরোধে ইনি নিজেকে সংযত করেন। কুরু পাণ্ডবের যুদ্ধে ইনি নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য তীর্থভ্রমণে বের হন। তীর্থভ্রমণ শেষে ইনি যখন কুরুক্ষেত্রে আসেন তখন দ্বৈপায়ন হ্রদের কাছে ভীম-দুর্যোধনকে যুদ্ধরত অবস্থায় দেখতে পান। যুদ্ধে ভীম অন্যায়ভাবে দুর্যোধনের উরুভঙ্গ করলে- ইনি ক্রুদ্ধ হয়ে ভীমের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অগ্রসর হলে কৃষ্ণ তাঁকে নিবৃত করেন। যদু বংশ ধ্বংসের এবং কৃষ্ণের মৃত্যুর পূর্বে ইনি দ্বারকার এক বটবৃক্ষের নিচে যোগসমাহিত অবস্থায় কাটান। এই সময় এঁর মুখ থেকে রক্তবর্ণ ও সহস্রমুখ এক সাপ নির্গত হয়ে সমুদ্রে চলে যায়। এরপর তাঁর মৃত্যু ঘটে। এই ঘটনার কারণে অনেকে তাঁকে নাগরাজের শেষ অবতার হিসাবে মান্য করে থাকেন। ইনি রাজা রৈবতের কন্যা রেবতীকে বিবাহ করেছিলেন। রেবতীর গর্ভে তাঁর দুটি পুত্র জন্মে। এঁরা ছিলেন নিশধ ও উল্মক।