জরাসন্ধ
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{
রাজা
|
হিন্দু
পৌরাণিক সত্তা
|
ভারতীয় পৌরাণিক সত্তা |
পৌরাণিক সত্তা |
কাল্পনিক সত্তা |
কল্পনা |
সৃজনশীলতা |
কর্মক্ষমতা
|
জ্ঞান |
মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা |
বিমূর্তন
|
বিমূর্ত-সত্তা
|
সত্তা
|}
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনিতে এই
নামে একাধিক চরিত্র পাওয়া যায়। যেমন-
১. মহাভারতের মতে– বৃহদ্রথের পুত্র। বিপ্রচিত্তি নামক দানব পৃথিবীতে জরাসন্ধ হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ইনি কাশীরাজের দুই যমজ মেয়েকে বিবাহ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর যৌবন গত হওয়ার কারণে, ইনি সন্তান লাভে বঞ্চিত হন। পরে সন্তান কামনায় ইনি চণ্ডকৌশিক নামক এক ঋষির আরাধনা করেন। আরাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে চণ্ডকৌশিক রাণীদের একটি মন্ত্রপূত আম উপহার দেন। বৃহদ্রথ এই ফলটি সমান দুইভাগে ভাগ করে উভয় স্ত্রীকে দান করেন। যথাসময়ে রানীরা দুটি অর্ধাঙ্গের সন্তান প্রসব করেন। এইরূপ সন্তান দেখে রানীরা ভীত ও দুঃখিত হয়ে তাঁদের দাসীর সাহায্যে এই সন্তানের অংশ দুটি শ্মশানে রেখে আসেন। এই সময় জরা নামক এক রাক্ষসী এই দুটি খণ্ডকে কৌতুহলবশত একত্রিত করলে। খণ্ড দুটি একত্রিত হয়ে পূর্ণতা লাভ করে এবং জীবিত হয়ে উঠে। এরপর শিশুটি কাঁদতে শুরু করলে রাজা ও রানীরা শ্মশানে এলে- জরা নারী মূর্তি ধরে বৃহদ্রথের হতে সন্তানটি তুলে দেন। এই সময় জরা ভবিষ্যৎ বাণীতে বলেন যে- এই শিশুকে জন্মের মতো দ্বিবিভক্ত করলেই এর মৃত্যু হবে। জরা রাক্ষসী এই শিশুর দেহ যুক্ত করেছিল বলে- এঁর নাম রাখা হয় জরাসন্ধ।
জরাসন্ধ বড় হলে, বৃহদ্রথের এঁর হাতে রাজ্য সমর্পণ করে রানীদের নিয়ে বনে চলে যান। জরাসন্ধ তাঁর দুই মেয়ে অস্তি ও প্রাপ্তিকে কংসের সাথে বিবাহ দেন। জরাসন্ধের সহায়তায় কংস তাঁর পিতা উগ্রসেনকে বন্দী করে মথুরার রাজা হন। শ্রীকৃষ্ণের হাতে কংস নিহত হলে, তিনি এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মোট সতেরবার মথুরা আক্রমণ করেন।
কিন্তু কৃষ্ণের রণ কৌশলের কারণে, তিনি মথুরা দখল করতে সক্ষম হন নি। বারবার আক্রমণে অতীষ্ট হয়ে কৃষ্ণ দ্বারকায় যাদবদের পুরী নির্মাণ করতে আদেশ দেন। কিন্তু যাদবরা দ্বারকায় যাবার আগেই জরাসন্ধ আবার মথুরা আক্রমণ করেন। এবার সঙ্গী ছিল কালযবন নামক এক কৃষ্ণ-বিদ্বেষী রাজা। কৃষ্ণের এবার কালযবনকে হত্যা করার জন্য একটি কৌশলের আশ্রয় নিলেন। ইনি কালযবনকে কৌশলে দেখা দিলে, কালযবন কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য তাঁকে অনুসরণ করতে থাকে। কৃষ্ণ পলায়নের ভান করে দূরবর্তী এক পাহাড়ের গুহায় প্রবেশ করে। এই গুহায় মুচুকুন্দ নামক এক ঋষি ঘুমিয়ে ছিলেন। কালযবন কৃষ্ণের অনুসরণ করে উক্ত গুহায় প্রবেশ করে এবং অন্ধকারে মুচুকুন্দকে কৃষ্ণ মনে করে পদাঘাত করে। মুচুকুন্দ ঘুম ভেঙে কালযবনের দিকে দৃষ্টিপাত করা মাত্র- কালযবন ভষ্মীভূত হয়।
এরপর জরাসন্ধ আরও একবার মথুরা আক্রমণ করতে এলে, জরাসন্ধের হংস নামক একজন অনুচর বলরামের হাতে নিহত হন। হংসের ভাই ডিম্বক এই দুঃখে যমুনা নদীতে আত্মহত্যা করেন। এই দুই বীরে মৃত্যুর পর জরাসন্ধ দুঃক্ষভারাক্রান্ত মনে নিজ রাজত্বে ফিরে যান।
এইভাবে বার বার জরাসন্ধের আক্রমণে অতীষ্ট হয়ে কৃষ্ণ জরাসন্ধকে হত্যা করার জন্য ভীম ও অর্জুনকে সাথে নিয়ে জরাসন্ধের কাছে আসেন। উল্লেখ্য, এই সময় তিনজনই ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশ নিয়েছিলেন। জরাসন্ধ এই তিনজনের হাতে অস্ত্রব্যবহারের চিহ্ন দেখে প্রকৃত পরিচয় জানতে ইচ্ছা করলে, কৃষ্ণ তাঁদের প্রকৃত পরিচয় দেন। এরপর জরাসন্ধের সাথে ভীমের মল্লযুদ্ধ হয়। ভীম একধিকবার জরাসন্ধকে পরাজিত করে শরীর বিচ্ছিন্ন করেন, কিন্তু অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে উক্ত শরীর জোড়া লেগে জরাসন্ধ জীবিত হয়ে উঠতে থাকেন। এরপর কৃষ্ণের ইশারায় ভীম বিচ্ছিন্ন হওয়া দেহকে মিলিত হওয়ায় বাধা সৃষ্টি করলে- জরাসন্ধের প্রকৃত মৃত্যু ঘটে।
২. মহাভারতের মতে– কুরুরাজ ধৃতরাষ্ট্রের শতপুত্রের একটি পুত্রের নাম ছিল জরাসন্ধ।